• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা: রোগীদের দুর্ভোগ চড়মে

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রায়  লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র ভরসাস্থল। তবে কর্তৃপক্ষের অবহেলা, চরম গাফিলয়াতি, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে চিকিৎসাসেবা ভেঙে পড়েছে। এখানে চিকিৎসকের পরিবর্তে বাবুর্চি, মশালচি, সুইপার, আয়া ও ওয়ার্ডবয় দ্বারা স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সেবা নিতে আসা রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।  স্থানীয়দের অভিযোগ, রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোমেনুল ইসলাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ১০০ গজ দক্ষিণে নিজের রৌমারী ক্লিনিক নিয়ে ব্যস্ত থাকায় চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। তিনি নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বেশি নজর দেয়ায় এই সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানটির সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জনসাধারণ। 

অভিযোগ রয়েছে, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত অন্যান্য বিভাগের প্রধানরাও তার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে চিকিৎসাসেবা দেয়ার বদলে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৫০ লাখ টাকার ৫০ এমএম এক্সরে মেশিন থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এর ব্যবহার নেই। পুরাতন অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামতের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিলেও কাজ হয়নি। ফলে অকেজো হয়ে পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স।

এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির বাইরে মাঠ পরিষ্কার করা থাকলেও ভেতরে রোগীর ওয়ার্ড ও বাথরুমের অবস্থা যাচ্ছেতাই, সর্বত্র দুর্গন্ধময় পরিবেশ। এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে রোগীদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। পাশাপাশি ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিভরা রোগীদের অতিষ্ট করে তুলছেন। চিকিৎসক কী ওষুধ লিখলেন, এটি দেখতে রিপ্রেজেন্টিভরা রোগীদের ঘিরে ধরছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির দায়িত্বরত অনেক নার্স স্থানীয় হওয়ায় যখন-তখন নিজ এলাকার দাপট দেখাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক নার্স নিজেরা কাজ না করে আয়ার মাধ্যমে রোগীর সেবা দিচ্ছেন। কয়েকজনকে বাইরের নারী শ্রমিককে মাসিক চুক্তির ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ ছাড়াই রোগীদের স্যালাইন-ইনজেকশন পুশ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। এ নিয়ে রোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। জরুরি বিভাগের একজন সেকমো দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও সেখানে কাটা-ছেঁড়া, সেলাই করানো হয় জাহিদুল ইসলাম নামের রান্না ঘরের বাবুর্চিকে দিয়ে। জাহিদুলসহ পাঁচ থেকে ছয়জন সদস্য এখানে মনগড়া দায়িত্ব পালন করছেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে দীর্ঘদিন ধরে ফার্মাসিস্ট পদটি শূন্য রয়েছে। এর স্থলে ফয়জার রহমান নামের একজন দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (টিএলসিএ) পদে চাকরিরত থাকলেও গত সাত বছর আগে রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে ডেপুটেশনে আসেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এখানে চিকিৎসাসেবা ভেঙে পড়েছে। এই কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত কারো কারো রুমে চলে মদের আসর। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ স্বাস্থ্য বিভাগের দ্রুত সুদৃষ্টি দেয়া জরুরি বলেও তারা জানান।

রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোমেনুল ইসলাম বলেন, জাহিদুল নামের ব্যক্তিকে অতিরিক্ত মশালচি (বাবুর্চি) হিসেবে নেয়া হয়েছে। তবে রোগীদের কাঁটা-ছেঁড়া ও সেলাই করেন কি না, আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবো। স্বাস্থ্য কমপ্লক্সের চেয়ে নিজের ক্লিনিকে বেশি নজর দেয়া প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রৌমারী ক্লিনিকটি আমার নামে নয়। এটি আমার স্ত্রীর নামে। 

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, আমি রৌমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়া সম্পর্কে কিছু জানি না। এরপরও খোঁজখবর নিচ্ছি। সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –