• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতিতে ফিরছে স্বাভাবিক গতি

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৬ জানুয়ারি ২০২১  

করোনার টিকা আসছে-স্বাভাবিক হয়ে আসবে সামগ্রিক পরিস্থিতি। বাড়বে জ্বালানি তেলের চাহিদা- এমন আশায় নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে দৈনিক ৫ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওপিইসি (অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ)।

পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর বাতাস বইতে শুরু করেছে। প্রতিটি দেশই নতুন করে অর্থনীতির হিসাব কষছে। এর বাইরে নেই বাংলাদেশও। ইতোমধ্যে দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস ও বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে।

আর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বেড়েছে কনটেইনার লোড-আনলোডের সংখ্যা। যা নতুন বছরে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের জন্য বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরেই সম্ভাব্য হিসাব করছে অর্থ বিভাগ।

সম্প্রতি অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, নতুন বছর অর্থনীতিতে ভালো থাকবে। অর্থনীতি ঠিক জায়গায় আছে, ভালো অবস্থানে আছে।

যেটা কেউ চিন্তা করতে পারেনি। বিশ্বাস করি এ ধারা অব্যাহত থাকবে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১ বছর ধরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। এখন একটি কার্যকর টিকার দিকে তাকিয়ে রয়েছে বিশ্ব।

এ পর্যন্ত টিকার বিষয়ে বেশ কয়েকটি অগ্রগতি হয়। প্রথমে মার্কিন কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক জানায়, তাদের টিকা ৯০ শতাংশ কার্যকর। এরপর সুখবর দেয় আরেক মার্কিন কোম্পানি মডার্না।

এরপর ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিলে তাদের তৈরি করা করোনাভাইরাসের টিকা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

এর মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়াজুড়ে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে একটি বড় আকারে স্বেচ্ছাসেবী টিকাদান কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। ফাইজারের টিকার অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। শিগগিরই এ টিকা আসছে বাংলাদেশেও। 

টিকা আসার খবরে বিশ্ববাজারে তেলের বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অনিশ্চয়তা কাটছে স্বর্ণের বাজারেও। অপরিশোধিত তেলের দাম ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ০৪ ডলার। এর আগে করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জ্বালানির চাহিদা ব্যাপক কমে যায়।

হু হু করে কমতে থাকে দাম। পরে চলাচল কিছুটা শুরু হলেও চাহিদা আগের অবস্থায় ফিরতে এখনো অনেক দেরি। এ অবস্থায় ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৭ লাখ ব্যারেল করে দৈনিক উৎপাদন কম রেখেছে ওপিইসিভুক্ত দেশগুলো।

তবে জানুয়ারি থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলনের সীমা বাড়িয়ে দৈনিক ৫৮ লাখ ব্যারেল কম উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এটি মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থাও পরিবর্তন হচ্ছে। সম্প্রতিক সময়ে গতি আসছে শিল্পকারখানার উৎপাদনে। অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় আসছে ব্যবসা-বাণিজ্যও। যে কারণে এরই মধ্যে বেড়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭শ মিলি কিউবিক মিটার। অথচ করোনাকালীন এপ্রিলে চাহিদা ছিল ১৭শ মিলি কিউবিক মিটার। আর করোনার আগে গত জানুয়ারিতে ছিল আড়াই হাজার মিলি কিউবিক মিটার।

একইভাবে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। মার্চে যেখানে বিদ্যুতের চাহিদা কমে নেমে আসে সাড়ে ৫ হাজার মিলি কিলোওয়াট পার আওয়ার। ডিসেম্বরে এর চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে সাত হাজার মিলি কিলোওয়াট পার আওয়ারে।

এছাড়া চটগ্রাম বন্দরে এপ্রিলে আমদানি ও রফতানি পণ্যের কনটেইনার উঠানামা করেছে ১ লাখ ৩৫ হাজার। সেখানে ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ লাখ কনটেইনার। 

টিকা সংগ্রহ ও মানবদেহে দেয়ার কার্যক্রমের সঙ্গে অর্থনীতির কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ আরও বেশিমাত্রায় জড়িয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এমকে মুজেরি। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে উন্নয়ন কার্যক্রমের স্বাভাবিক গতি ধারায় ফিরে আসবে।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে অর্থনীতির সূচকের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকেও এ বছর অর্থনীতির অবস্থা ভালো হবে এমনটি তুলে ধরে হয়েছে। সেখানে বলা হয়, আগামীতে জ্বালানি তেলের মূল্য আরও বাড়বে।

পাশাপাশি দেশের যে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন হচ্ছে সে কারণেও অর্থনীতির গতি ফিরছে। ফলে অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে- এমন আশায় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আগামী অর্থবছরের জন্য উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে অর্থনীতির সূচকের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

এরই মধ্যে আগামী অর্থবছরে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করছে অর্থ বিভাগ। পাশাপাশি রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আর জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) সম্ভাব্য আকার হবে ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। অর্থনীতির এ সূচকের লক্ষ্যমাত্রাগুলো আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘোষণা দেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, নতুন বছরে রাজস্ব আহরণই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে করোনার টিকা চলে আসবে। এতে অর্থনীতির গতিও ফিরে আসবে।

টিকা আসার খবরে বিশ্ববাণিজ্য পরিস্থিতিও পাল্টে যাচ্ছে। বেড়েছে অনেক পণ্যের রফতানি আয়। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে ডিসেম্বর- এ ৬ মাসে নিটওয়্যারে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ওভেন গার্মেন্টে ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ, হোম টেক্সটাইলে বেড়েছে ১৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

এছাড়া চামড়া রফতানিতে বেড়েছে ১ দশমিক ০৫ শতাংশ, কেমিক্যাল পণ্যে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ, হ্যান্ডিক্রাফে রফতানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। রফতানি আয় বেড়েছে হিমায়িত খাদ্য, প্রাথমিক পণ্য ও পাট এবং পাটজাত পণ্যে।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধনে একের পর এক রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। ২৮ ডিসেম্বর দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডিএসইর বাজার মূলধন ৪ লাখ ৪১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যদিও ৬ মাস আগে হতাশার কেন্দ্রবিন্দু ছিল দেশের শেয়ারবাজার।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –