• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আদিতমারীতে ফুটফুটে শিশুকে দেখেও ফিরিয়ে দিলো না মাকে 

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

মাত্র ৪ বছরের শিশু লামিয়া আক্তার। মাকে প্রায় ২৫ দিন ধরে না দেখতে পেয়ে তার কান্না থামছেই না। ঘুমের ঘরেই আম্মু আম্মু বলে ডাকছে শিশু লামিয়া। খাওয়া বন্ধ একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে শিশুটি। তাই বাবা সোহেল মিয়ার কোলে করে মাকে খুঁজতে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন লালমনিরহাটের আদিতমারীতে। কিন্তু খোঁজ পেয়েও পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে আবারো ঢাকায় ফিরে গেলো শিশুটি।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় লালমনিরহাটের আদিতমারী থানার সামনে বাবা সোহেল মিয়ার কোলে দেখা যায় শিশুটিকে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন শিশুটির দাদি ও খালা। এর আগে গত শনিবার সকালে ঢাকা থেকে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় আসেন শিশু লামিয়ার বাবা সোহেল মিয়া, দাদি রিনা বেগম।

জানা গেছে, ঢাকা উত্তর শাহজাহানপুর এলাকায় বসবাস সোহেল মিয়া ও বন্যার আক্তার বিথী দম্পতি। গত ৬ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর একটি ফুটফুটে শিশু কন্যার জন্ম দেন বিথী। এরপর সুখের সংসার ছিল তাদের।

গত ১৬ জানুয়ারি চার বছরের শিশু লামিয়াকে ছেড়ে মা বন্যার আক্তার বিথী লালমনিরহাটের যুবক মাসুম মিয়ার হাত ধরে চলে আসেন আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউপির বারোঘড়িয়া গ্রামের সজিব বাজার এলাকায়। এর মধ্যে কেটে যায় ২০-২২ দিন। এরপর মায়ের খোঁজ পেয়ে ঢাকা থেকে বাবার কোলে চড়ে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় আসেন শিশু লামিয়া।

যে বাড়িতে মা বিথী উঠেছেন দুইদিন ধরে খোঁজাখুঁজির পর খোঁজ পান সেই বাড়িটি। শিশুটির কথা বলে তার মাকে ফেরত চান শিশুটির বাবা সোহেল মিয়া। কিন্তু যুবক মাসুম মিয়ার বাবা শিশুর মাকে দিতে নারাজ। শিশুর বাবাকে অপমান করে ফিরিয়ে দেন। মায়ের মনও গলেনি ফুটফুটে শিশুটিকে দেখেও।

এরপর ঐ দিন আদিতমারী থানায় যান শিশু লামিয়াসহ পুরো পরিবার। কিন্তু পুলিশকে না জানিয়ে ঐ বাড়িতে যাওয়ায় আদিতমারী থানার ওসি তাদের ওপর ক্ষেপে যান। পরে তারা ভয়ে থানা থেকে বেড়িয়ে আবারো ফিরে যান।

মাসুম মিয়া লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় ভাদাই ইউপির বারোঘড়িয়া গ্রামের সজিব বাজার এলাকার আব্দুল কুদ্দুস মিয়ার ছেলে।

শিশুর মা বন্যা আক্তার বিথী মাত্র আট বছরের শিশু থাকা অবস্থায় বাবা আব্দুল করিম ও মা মিনোয়ারা বেগম মারা যান। এরপর বিথী ফুফু মিনা বেগমের কাছে বড় হন। পরে ফুফু মিনা বেগম তার বিয়ে দেন সোহেল নামে এক যুবকের সঙ্গে।

বিথীর ফুফু রিনা বেগম বলেন, ভাতিজির সন্ধান পেয়ে আদিতমারীতে ছুটে এসেছি। কিন্তু ওই যুবকের বাড়িতে গিয়েও তার বাবা জেনেও ছেলের ঠিকানা দেয়নি। ঢাকা গিয়ে আইনের আশ্রয় নেয়া হবে। চার বছরের শিশুকে ছেড়ে কোনো মা অন্যের হাত ধরে আসতে পারে না। তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সোহেল মিয়া বলেন, স্ত্রী বন্যা আক্তার বিথী ভুল করে লালমনিরহাটে চলে আসছে। তাই  আমার স্ত্রীকে ফিরে নিতে এসেছিলাম। মেয়ে লামিয়ার মুখ দেখে যদি তিনি ফিরে যান তাহলে তাকে নিয়ে আবার সংসার করতে রাজি ছিলাম। শিশুটির মুখ দেখে স্ত্রীকে ফেরত চাই। কিন্তু ঐ যুবকের বাবা ছোট্ট শিশুটির মুখ দেখেও  স্ত্রীকে ফিরে দেয়নি। থানায় গিয়েও কোনো সহযোগীতা পেলাম না। এখন এই সন্তান নিয়ে কোথায় যাবো।

আদিতমারী থানার ওসি মোক্তারুল ইসলাম বলেন, শনিবার থানায় এসেছিলেন ঐ শিশুর বাবা। এরপর আর থানায় আসেনি। সেদিন তাদের বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা খোঁজ পেলে উদ্ধার করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছি।  থানায় বিষয়টি আগে না জানিয়ে ঐ যুবকের বাড়িতে যাওয়াতে শুধু প্রশ্ন করা হয়েছিল। ঢাকায় যেহেতু নিখোঁজ জিডি করেছেন, তাই তাদের আগে থানায় আসা প্রয়োজন ছিল। এর বাইরে আর কিছু বলা হয়নি।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –