• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ইন্ট্রাকোর কাঁটাতারে আটকা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১  

বছরের পর যে রাস্তা দিয়ে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার শৌলমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা চলাফেরা করত, সেই রাস্তাসহ শৌলমারী চরাঞ্চলটি কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ‘ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড’-এর বিরুদ্ধে। ফলে আড়াই কিলোমিটার ঘুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয় শিক্ষার্থীসহ শৌলমারী চরের মানুষকে।

স্থানীয়রা বলছেন, এ নিয়ে তারা সরকারি বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৯টার দিকে শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন নৌকা দিয়ে শৌলমারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু বেশি টাকার আশায় মাঝিরা ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেডের সোলার পিলার পার করছেন। ফলে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অনেক সময়। উপায় না পেয়ে তারা হাঁটুপানিতে পার হয়ে যান বিদ্যালয়ে। কখনো কখনো পড়ে গিয়ে আবার কাঁটাতারে ছিঁড়ে নষ্ট হয় জামাকাপড়।

একসময় চরবাসীর উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা ছিল এটি। কিন্তু সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের নামে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড সাইনবোর্ড লাগিয়ে কাঁটাতারে ঘিরে দেওয়া হয়। ফলে যেসব লোকজন বাপ-দাদার আমল থেকে ওই রাস্তা দিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা সদরে যাতায়াত করত, তাদের যেন দুর্ভোগের শেষ নেই। এতে চরের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও পড়েছেন চরম বিপাকে।

জানা যায়, শৌলমারী চরে শিক্ষার আলো জ্বালানোর দায়িত্বে যেসব শিক্ষক রয়েছেন, তাদের প্রায় সবার বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলা সদরের আশপাশে। প্রতিদিন স্কুলে যেতে প্রথমে নৌকাযোগে পরে দীর্ঘ পথ হেঁটে শৌলমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে হয় তাদের। কিন্তু নদীর ঘাট থেকে যে রাস্তাটা সরাসরি গিয়ে স্কুলে ঠেকেছে, সেটি এখন কাঁটাতারে ঘেরা। তাই বাধ্য হয়ে কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের।

শৌলমারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইতি মনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই রাস্তা দিয়েই স্কুলে যাওয়া-আসা করছি। এখন সেই রাস্তাটি বন্ধ হওয়ায় বাধ্য হয়েই কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে বেশ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অনেক সময় কাঁটাতার পার হতে গিয়ে কাপড় ছিঁড়ে যায়। একজন নারী শিক্ষক হয়ে ওই কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে যাতায়াত কতটা কষ্টের, তা বলে বোঝানো মুশকিল। এর দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক সানিউর রহমান সানি বলেন, রাস্তাটি দিয়ে শুধু আমরা নই, স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও যাতায়াত করেন। বর্তমানে সেটি কাঁটাতারে ঘেরা থাকায় প্রায় দেড় কিলোমিটারের বেশি পথ ঘুরতে হয়। সে কারণে বাধ্য হয়ে কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে যাতায়াত করছি।

চারবাসীদের ভাষ্যমতে, বন্ধ থাকা ওই রাস্তা দিয়ে হাজার হাজার মণ ফসল বিভিন্ন হাটবাজারে যেত। আবার এলাকাবাসী চিকিৎসা, দৈনন্দিন কেনাকাটার জন্যও ওই রাস্তা ব্যবহার হতো বাপ-দাদার আমল থেকে। কিন্তু সেই রাস্তা কাঁটাতারে ঘিরে রাখায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া ও লুৎফর রহমান বলেন, আমাদের রাস্তা বন্ধ করায় চলাচলের আর কোনো পথ নেই। সে কারণে আমরা লিখিতভাবে ঘটনাটি সরকারি বিভিন্ন দফতরে জানিয়েছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

শৌলমারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরিদাস চন্দ্র রায় বলেন, প্রায় দেড় বছর পর বিদ্যালয় খুলেছে। কিন্তু চরাঞ্চলের শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে আসার ক্ষেত্রে কষ্টের কোনো সীমা নেই। এর মধ্যে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড কাঁটাতার দিয়ে মূল রাস্তা বন্ধ করে দেয়। ফলে প্রায় তিন কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয় বিদ্যালয়ে। আবার দ্রুততার জন্য কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে আসতে গেলে জামাকাপড় ছিঁড়ে নষ্ট হয়। বেশির ভাগ সমস্যা হচ্ছে নারী শিক্ষকদের নিয়ে। আশপাশে মানুষ তাকিয়ে থাকায় তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা হয়।

একই অভিযোগ কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। তারা জানায়, এ অবস্থা চলতে থাকলে এখানে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। তাই দ্রুত সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ভোটমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আহাদুল হোসেন চৌধুরী কাঁটাতারে রাস্তা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই রাস্তাটি সরকারি বরাদ্দে আমি নিজেও কয়েকবার মেরামত করেছি। এখন সেটি বন্ধ থাকায় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ এলাকার মানুষজন খুবই সমস্যায় পড়েছে। এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছি প্রশাসনকে। তারা কিছুই করছে না।

এ বিষয়ে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেডের কালীগঞ্জ অফিসের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা উত্তম রায় দাবি করে বলেন, আমরা পাশ দিয়ে আরেকটা রাস্তা করে দিয়েছি। এর বেশি তিনি আর কিছু বলতে চাননি।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল মান্নান বলেন, রাস্তা বন্ধ করে যেকোনো কাজ করা সঠিক নয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পেরেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে আগের রাস্তা খুলে দেওয়া যায় কি না, সেটি দেখব।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –