• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

‘মুজিবকে উত্খাত করা হলে ভারত দ্রুত প্রত্যুত্তর দিতে পারবে না’

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৪ আগস্ট ২০২৩  

‘মুজিব জানতে পারেননি মেজররা কী করছে। যদিও তার কানে খবর এসেছিল যে, ক্যান্টনমেন্টে কিছু একটা ঘটছে। পাকিস্তানি অভিজ্ঞতা থেকে মুজিবের ধারণা জন্মেছিল যে, বিপদ সব সময় সেনাপতিদের দিক থেকেই আসে। কাজেই তিনি তার গোয়েন্দা বিভাগকে কেবল সেই দিকে বিশেষ নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি জুনিয়র অফিসারদের মোটেই পাত্তা দেননি। ঐ ভুলের মাশুল তাকে জীবন দিয়েই দিতে হয়েছিল।’ সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস রচিত ‘এ লিগ্যাসি অব ব্লাড’ গ্রন্থে এভাবেই সেই সময়কে তুলে ধরা হয়েছে।

এদিকে, ১৯৭৬ সালের ২ আগস্ট যুক্তরাজ্যের আই টিভিতে প্রচারিত গ্রানাডা টেলিভিশনের ‘ওয়ার্ল্ড ইন অ্যাকশন’ শীর্ষক  অনুষ্ঠানে অ্যান্থনি মাসকারেনহাসকে সাক্ষাত্কার দেয় তত্কালীন মেজর রশীদ ও তার ভায়রা ভাই মেজর ফারুক। এতে মাসকারেনহাস একপর্যায়ে উল্লেখ করেন, ‘ঢাকায় কর্নেল ফারুক ও কর্নেল রশীদ অবস্থান করছিল। রাজধানীর সুবিধাজনক স্থানে নিয়োজিত সেকেন্ড ফিল্ড আর্টিলারির কামান্ডার ছিল রশীদ এবং বাংলাদেশের একমাত্র ট্যাংক রেজিমেন্ট বেঙ্গল ল্যান্সারসদের নেতৃত্বে ছিল ফারুক। তাদের দুজনের গোলাগুলি চালনার ক্ষমতা নস্যাত্ করার কথা মুজিবের ভাবনাতেই আসেনি।’

সাক্ষাত্কারে ফারুক জানায়, ‘সে সময় আমি ধারাবাহিকভাবে ট্রেনিং পরিচালনা করছিলাম। প্রতি মাসে দুই দিন রাতের বেলা এসব ট্রেনিং অনুষ্ঠিত হতো।’ এ সময় ফারুক আরো জানায়, ‘আমাদের অপারেশনের কথা মনে রেখে ট্রেনিং শুরু করেছিলাম। কারণ, এটা আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। হঠাত্ কোনো এক রাতের বেলা অপ্রয়োজনীয় চলাচল কিংবা অপরিকল্পিত কার্যকলাপ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। কাজেই ১ মার্চ থেকে আমি মাসে দুই বার নৈশ ট্রেনিং পরিচালনা করতে শুরু করি (কর্নেল ফারুকের বেঙ্গল ল্যান্সারস ও কর্নেল রশীদের ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্ট একযোগে ট্রেনিং)’।

এ সময় কর্নেল রশীদ জানায়, তারা ২৮টি ট্যাংক, ১৮টি ১০৫ মি.মি. কামান এবং ৭০০ সৈন্য নিয়ে মুজিবকে ক্ষমতাচ্যুতের পরিকল্পনা করেছিল।

ফারুক বলে, ‘কর্নেল রশীদ ভেবেছিল, যাদের ব্যক্তিগত ক্ষোভ রয়েছে এমন কয়েক জন অফিসারকে সঙ্গে নেওয়া উচিত হবে। কাজেই ১৪ আগস্টের রাতের বেলা সময়ের আগেই যে অফিসারদের পদচ্যুত করা হয়েছিল তাদের মধ্য থেকে কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়েছিলাম। তাদের বলা হয়েছিল, আমরা কিছু একটা করছি, তোমরা নতুন বিমানবন্দরে এসো।’

ফারুক বলে, ‘আমি শতকরা ৯৯ ভাগ নিশ্চিত ছিলাম, শেখ মুজিব, সেরনিয়াবাত ও শেখ মনিকে হত্যা করা সম্ভব হবে। কিন্তু তারপর কী হবে, সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত ছিলাম না। এজন্য মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ট্যাংকগুলো ব্যবহার করেছিলাম। ... ট্যাংকগুলোতে কোনো গোলাবারুদ ছিল না।’ এই ট্যাংক দিয়েই রক্ষীবাহিনীর ৩ হাজার সদস্যকে ঠেকিয়ে দেয় ফারুক।

ফারুক এই সাক্ষাতকারে আরো জানায়, ‘এটা ছিল নৈশ ট্রেনিং। আগস্টের ১৪-১৫ তারিখ ছিল নৈশ ট্রেনিংয়ের রাত। মৌসুমি ঋতুতে বাংলাদেশ আক্রমণ করা খুব কঠিন এবং ভারত যদি আক্রমণ করে, তাহলে তাদের ৬ থেকে ৮ ডিভিশন সৈন্য জড়িত হবে।’

মাসকারেনহাস এ সময় জানতে চান, ‘আপনি ভেবেছিলেন ১৫ আগস্ট মৌসুমি ঋতুর মাঝামাঝি সময়ে মুজিবকে উত্খাত করা হলে ভারত প্রয়োজনীয় দ্রুততার সঙ্গে প্রত্যুত্তর দিতে পারবে না।’ উত্তরে ফারুক হ্যাঁ বলে। মাসকারেনহাস আবারও জানতে চান, ‘আপনি ভারতের কথা কেন ভেবেছিলেন? আপনি ভারত থেকে কোন রকম বিপদের আশঙ্কা করছিলেন?’ ফারুক বলে, ‘হ্যাঁ, কারণ, ভারতের সঙ্গে মুজিব স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলোর মধ্যে একটি ধারা অনুযায়ী তিনি বিপদ দেখা দিলে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আমন্ত্রণ জানাবেন।’

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –