• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়’

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২৪  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়ারলেসের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং দলের নেতাকর্মীরা তা দেশের সব জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। বিএনপি এখনো ইতিহাস বিকৃতির সেই ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছে।

বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা গ্রেফতার হওয়ার আগে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। সেই ঘোষণা ইপিআরের ওয়্যারলেস, টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার এবং দলের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা ঐহিতাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। তিনি আগে আক্রমনকারী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হতে চাননি বিধায় অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ধাপে ধাপে সবরকম প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনী নিরীহ জনগণের ওপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তৎকালীন ইপিআরের (বর্তমান বিজিবি) সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ চারজনের কাছে বার্তাটি আগেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওয়্যারলেস ব্যবহার করে সারা বাংলাদেশে যখন ইপিআর মেসেজ পাঠাচ্ছিল তখন পাক বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, পিলখানা এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে আক্রমণ করে। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলেও ওয়্যারলেস, টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার ও পুলিশ স্টেশনের মাধ্যমে মাধ্যমে সারাদেশে বার্তাটি ছড়িয়ে যায়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে সারাদেশে এটি প্রচার করে। সুবেদার শওকতসহ বার্তা প্রচারকারীরা ধরা পড়ে যান এবং নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। এই ইতিহাসকে ১৯৭৫ সালের পর বিকৃত করা হয়েছে। প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করে ভিন্ন ইতিহাস জনগণের সামনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি এখনো ইতিহাস বিকৃতির সেই ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছে। আজকে বিএনপি নেতা মঈন খান বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতার সব পালিয়ে যান। সেই মঈন খানের বাবা মমিন খান তৎকালীন খাদ্য সচিব ছিলেন, যিনি ৭৪ সালের কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টিতে সফল হওয়ায় পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান তাকে পুরস্কৃত করে মন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে নিজের উপদেষ্টা বানিয়েছিলেন। অথচ ১৯৭৫ সালের পর থেকে সারা বছরই বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ লেগে থাকতো।

তিনি বলেন, ’৭০ এর নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সংসদ সদস্যরাই কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করেন। সেই সরকারের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদসহ অন্য সদস্যরা মুজিবনগরে শপথ নেন এবং জাতির পিতা কারান্তরীণ থাকায় তারা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৫ মার্চ পাকি হানাদার বাহিনী চট্টগ্রামেও গণহত্যা শুরু করেছিল। জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে যারা ব্যারিকেড দিচ্ছিল, তাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। চট্টগ্রামে সেই সেনাবাহিনীর দায়িত্বে জিয়াউর রহমান ছিল, সে নিজেও সেই সময় গুলি চালিয়েছে। শুধু তাই না, সোয়াত জাহাজ এসেছে পাকিস্তান থেকে অস্ত্র নিয়ে, সেই অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান। সেখানে সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও জনগণ তাকে আটকায় এবং সেখান থেকেই ধরে নিয়ে আসে। ২৭ তারিখ সন্ধ্যার পরে তাকে দিয়ে জাতির পিতার পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করানো হয়। কাজেই এটা নিয়ে বড়াই করার কিছু নেই।

সরকার প্রধান বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমাদের গেরিলারা সেনা অফিসারদের পরিবারকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। তারা খালেদা জিয়ার কাছেও এসেছিল কিন্তু তিনি গেরিলাদের সঙ্গে না গিয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে চলে যান।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির এক নেতা গায়ের চাদর খুলে আগুন দিচ্ছেন ভারতীয় পণ্য ব্যবহার করবে না। যে নেতারা বলছেন ভারতীয় পণ্য বর্জন করেন, তাদের বউদের কয়টা ভারতীয় শাড়ি আছে? বউদের কাছ থেকে শাড়িগুলো এনে কেন পুড়িয়ে দিচ্ছেন না? তাদের আলমারিতে যে কয়টা শাড়ি আছে সব এনে যেদিন পোড়াবেন সেদিন বিশ্বাস করব যে, আপনারা সত্যিই ভারতীয় পণ্য বর্জন করলেন। আমরা ভারত থেকে গরম মসলা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা আমদানি করি। তাদের কারো রান্নাঘরে যেন এসব মসলা দেখা না যায়।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র খুঁজে বেড়ায়। কোথায় পাবে? তাদের চোখে তো স্বৈরতন্ত্রের ঠুলি পরানো। ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর দেশে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে প্রতি রাতে কারফিউ থাকতো।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.আবদুস সোবহান গোলাপ, সহ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আওয়াল শামীম, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –