• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

‘গাড়ি কোথায়’ অ্যাপে ওঠে সড়কের চাঁদা, মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২৪  

‘গাড়ি কোথায়’ অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে চালক ও তাদের সহকারীদের যুক্ত করে সেবার আড়ালে দুই বছর ধরে ভয়াবহ জালিয়াতি করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানে উঠেছে এসেছে, গাড়ি কোথায় অ্যাপসের আড়ালে সড়ক থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা মাসোহারা তোলা হয়েছে। এই অ্যাপসের স্লোগান হচ্ছে ‘গাড়ির খবর থাকে অ্যাপে, দেখাও যায় ম্যাপে’। 

জানা গেছে, এই অ্যাপসে গাড়ির ট্র্যাকিং সার্ভিস দিতে ফেসবুক ও নিজস্ব ওয়েবসাইটে হটলাইন নম্বরও রয়েছে। চার দিন আগেও ফেসবুকের এক পোস্টে প্রতিষ্ঠানটি ট্র্যার্কিং সার্ভিস সেবা দিতে দেশজুড়ে ডিলার নিয়োগের ঘোষণা দেয়। এরপর ডিলারদের মাধ্যমে ফিটনেসবিহীন কাভার্ভ ভ্যান, ট্রাক ও লরির মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকে। এভাবে প্রায় আড়াই হাজার যানবাহন সড়কে নির্বিঘ্নে চলাচলের ব্যবস্থা করে। 

এসব গাড়িতে দেওয়া হয় বিশেষ টোকেন। অসাধু পুলিশ সদস্যদের ম্যানেজ করে গাড়িগুলো অবাধে সারাদেশে চলাচল করে। বিনিময়ে তারা মাসে মাসে টাকা দিয়েছে। এ ডিজিটাল ঘুষের বেশির ভাগ লেনদেন হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। চক্রের অনেকে আবার ভুয়া পুলিশ সদস্য পরিচয় দিয়ে চালক-হেলপারের কাছ থেকেও টাকা আদায় করতো। 

এসব ঘটনায় দীর্ঘদিন ছায়া নজরদারির পর সোমবার রাতে রাজধানীর রূপনগর এলাকা থেকে চক্রের নয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ৮০০ মাসিক কার্ড, ১১০টি স্টিকার ও একটি ডায়েরি জব্দ করা হয়।

এরা হলেন– টাঙ্গাইল কালিহাতীর পশ্চিমপাড়ার নজরুল ইসলাম, আল-আমিন, মোস্তকিন, রুবেল আহমেদ, মামুনুর রশিদ, আল আমিন হোসেন, মো. প্লাবন, জনি আহমেদ ও নাহিদ। 

কীভাবে, কার মাধ্যমে ৬৪ এলাকায় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা ও চাঁদাবাদি হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে গ্রেফতাররা। গাড়ি কোথায় অ্যাপে ডিলার হিসেবে কাজ করছে এমন সাতজনের সঙ্গে পরিচয় গোপন রেখে কথা হয়।

টাঙ্গাইলের আনিছ জানায়, ‘গাড়ি কোথায়’ আগে ‘ফিউচার’ নামে কার্যক্রম চালাত। হঠাৎ নাম বদল করা হয়। লুকিং গ্লাস ভাঙা, বাড়তি গতির মতো টুকটাক সমস্যার জন্য পুলিশ রাস্তায় গাড়ি ধরে। পুলিশি এ ঝামেলা মিটমাট করে দিতেন গাড়ি কোথায়ের লোকজন। এজন্য পিকআপপ্রতি মাসে দেড় হাজার ও ট্রাকপ্রতি ২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। কোম্পানির সঙ্গে জড়িত থাকলে গাড়ির চালক বা হেলপার সরাসরি গাড়ি কোথায়ের লোকদের সমস্যা জানাতে পারে। এর পর পুলিশকে ম্যানেজ করে তারা।

মো. সাঈদ নামে আরেক পিকআপ চালক জানান, প্রতি মাসে ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে তিনি কার্ড নিতেন। বাকিতেও কার্ড দিত, পরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হতো।

যশোরে গাড়ি কোথায়ের ডিলার রোমান বলেন, আমি জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম সরবরাহ করি। কেউ এ সার্ভিস নিলে মাসে ৩০০ টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া গ্রাহককে একটি জিপিএস ডিভাইস কিনতে হয় ৩ হাজার টাকায়। অনেকে পুরো বছরের জন্যও সেবা নেন, দিতে হয় ৪ হাজার ৫০০ টাকা। তবে অ্যাপসের আড়ালে রাস্তায় পুলিশ সদস্যদের ম্যানেজ করার বিষয় অস্বীকার করেন রোমান।

সূত্র জানায়, গ্রেফতারদের কাছ থেকে জালিয়াতিতে জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যদেরও নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। এগুলো যাচাই-বাছাই ও অনেকের ব্যাংক লেনদেনও পরীক্ষা করা হচ্ছে।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, এ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ চক্রে তিন শতাধিক ‘সুবিধাভোগী’র সংশ্লিষ্টতা তারা পেয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা করা হচ্ছে। 

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –