• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

গ্রেফতার-কারাদণ্ডেও দমছে না কিশোর গ্যাং, জামিন পেয়ে ফের সক্রিয়

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২৪  

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাম্প্রতিক তৎপরতায় রাজধানীসহ দেশব্যাপী কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ কমেছিল। তবে আবারও বাড়ছে এদের দাপট। গ্রেফতার-কারাদণ্ডেও দমানো যাচ্ছে না, জামিনে বেরিয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর অপরাধীরা। এর ফলে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেড়েই চলেছে চুরি, ছিনতাই।

অভিযোগ রয়েছে, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের নেপথ্যে শক্তি জোগাচ্ছেন কিছু প্রভাবশালী নেতা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর কিশোর গ্যাং সদস্যরা গ্রেফতারের পর মাত্র ১০-৩০ দিনের মধ্যেই জামিনে বেরিয়ে আসছে। তাদের জামিনে ছাড়াতে এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ প্রভাব খাটিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরাধীরা বয়সে কিশোর- এটিই তাদের জামিনের ক্ষেত্রে বড় সুযোগ হয়ে ওঠে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, কিশোর অপরাধ বা কিশোর গ্যাং সংশ্লিষ্ট অপরাধ ঠেকাতে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। যেসব অপরাধী বয়সের বিবেচনায় কিশোর, তারা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি এবং মহল্লায় বিশৃঙ্খলা ঘটানোর মামলার আসামি হলে প্রাথমিকভাবে তাদের কিশোর গ্যাং সদস্য বলে গণ্য করে পুলিশ। মামলা হয় ৩৯৩ ধারায় পেনাল কোড ১৮৬০ আইনে। এ আইনে গ্রেফতার আসামিরা সহজে আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর আদালতের পিপি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু বলেন, এসব অপরাধে গ্রেফতারকৃতদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্ক হওয়া যেতে পারে। এই কিশোর গ্যাং সদস্যদের যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।

সূত্র জানায়, রাজধানীর আদাবর থানায় গত ৪ মাসে মাদক, দস্যুতা ও ডাকাতির প্রস্তুতির ঘটনায় মামলা হয়েছে ৬৮টি। এসব মামলায় ১১৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আইনি সুবিধার ফাঁকে এসব আসামির বেশিরভাগই এখন মুক্ত। জামিন পেয়ে পুনরায় নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা।

গত ছয় মাসে মোহাম্মদপুর থানায় মাদক ব্যবসা, দস্যুতা, দস্যুতার উদ্যোগ ও ডাকাতির প্রস্তুতির মতো অপরাধের ঘটনায় হওয়া ১০৮টি মামলা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গ্রেফতারকৃত দুই শতাধিক আসামির বেশিরভাগই জামিনে মুক্ত। সমাজের কিছু প্রভাবশালী বিত্তবান এসব অপরাধীকে পৃষ্ঠপোষকতা করে জামিন পেতে সহযোগিতা করেন। এছাড়া আসামিরা বয়সে কিশোর, এই সুযোগে সহজে জামিন মিলছেও তাদের।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, একই ধরনের ঘটনার পেছনে একই কিশোর অপরাধীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বিশেষ করে জামিনে মুক্তির পর ওরা আরো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, পল্লবী, আদাবর, যাত্রাবাড়ী এবং ঢাকার চারপাশের উপশহরগুলোতে কিশোর গ্যাং ভয়াবহ বিস্তার লাভ করেছে। তাদের অত্যাচার-নিপীড়নে মুখ খোলার সাহস পায় না ভুক্তভোগীরা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি কিশোর গ্যাং ‘ডাইল্যা গ্রুপের’ প্রধান হৃদয় ওরফে ডাইল্যা হৃদয়কে ছিনতাইয়ের অভিযোগে মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মাত্র ১৫ দিনের মাথায় জামিনে মুক্ত হয়ে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে একই এলাকায় পুলিশের একজন সোর্সকে কুপিয়ে আহত করে। এ সময় পাশে রাখা এক পুলিশ সদস্যের স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেল চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে সে। এ ঘটনায় পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে হৃদয়কে গ্রেফতার করে আবারও আদালতে পাঠায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য বলেন, সমাজের অনেক প্রভাবশালী নিজেদের স্বার্থে এসব অপরাধীকে পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন। তাদের সহযোগিতায় গ্রেফতারের পর খুব কম সময়ে এসব অপরাধী জামিনে মুক্ত হচ্ছে। এরপর নির্বিঘ্নে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলার এজাহারে দেখা গেছে, গত বছরের ২০ নভেম্বর চাঁদা দাবি, মারপিট ও ভাঙচুরের ঘটনায় ৭ লাখ টাকা ক্ষতিসাধন উল্লেখ করে মামলা করা হয়। মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরি রোডের ফরহাদ হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ আরমান হোসেন বাদী হয়ে মোহাম্মদী হাউজিং এলাকার মুহাম্মদ ইমরান, মো. সাব্বির, নাজমুল হোসেন এবং আর্মি আলমগীরকে আসামি করে এ মামলা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাজেদুল ইসলাম বসুনিয়া  জানান, এই মামলার সব আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে তাদের প্রত্যেকে জামিনে মুক্ত।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –