• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অভাবে চিকিৎসা নেই, ৪ বছর ধরে বন্দি শিকলে

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২২  

এমদাদুল হক (৩৩) হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এরপর প্রায়ই পরিবারের লোকজন ছাড়াও আশপাশের মানুষকে মারধর করতেন। অনেক সময় বাড়িঘরে ঢিল ছোড়াসহ সামনে যা পেতেন, তা-ই ভাঙচুর করতেন। তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও টাকার অভাবে তা করা হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে তার বৃদ্ধ মা তাকে শিকলে বন্দি করে রাখেন।

চার বছর ধরে বন্দি এমদাদুল হকের বাড়ি সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের কিশামত বড়বাড়ি গ্রামে। দরিদ্র দিনমজুর বাবা রিয়িজুল হক গত ১০ বছর আগে মারা যান। এরপর মা তমর্জিনা বেগমের কাছেই বড় হন এমদাদুল।
ছোট থেকে মেধাবী এমদাদুল স্কুলের বারান্দাতেও পা রেখেছিলেন। তিনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করলেও দরিদ্রতার কারণে আর লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি।

সরেজমিনে কথা হয় বৃদ্ধা তমর্জিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, অভারের কারনে লেখাপড়া করবার না পায়া জমিত কামলা দিছে এমদাদুল। বিয়ার পর মাথা খারাপ হয়া রোগ ধরছে। সে জন্য ওর সংসার টেকে নাই। ব্যাটাক ভালো করবার যায়া রংপুরসহ সব হাসপাতাল ঘুড়িয়াও লাভ হয় নাই। এখন মুই মানষের বাড়িত কামকাজ করিয়া কোনরকম দুবেলা খাবার তুলে দেম। ট্যাকার ঠ্যাকায় ভালো চিকিৎসা দিবার পাচ্ছম না। সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতাও পাম নাই।

বর্তমানে অন্যর বাড়িতে কাজ করে কোনোরকমে তার মুখে দুই বেলা খাবার তুলে দিচ্ছেন মা। টাকার অভাবে এমদাদুলের উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না। শিকলে বন্দি জীবন কাটলেও কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি। এমনকি মেলেনি কোনো সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা।

স্থানীয়রা জানান, ছয় ভাইয়ের মধ্যে এমদাদুল হক সবার ছোট। তার ভাইয়েরা দিনমজুর এবং কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। বিয়ের পর ভাইয়েরা সবাই আলাদা সংসার করছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে বাড়ির একটি টিনশেড ঘরে এমদাদুলকে নিয়ে বৃদ্ধা মায়ের বসবাস। নিজের বাড়ি ভিটার কয়েক শতাংশ জমি ছাড়াই কিছুই নেই তাদের।
প্রতিবেশীরা জানান, চার বছর ধরে শিকলবন্দি এমদাদুল। তাকে দেখাশোনা করতে হয় তার বৃদ্ধা মাকে। কিন্তু অতিদরিদ্র মায়ের পক্ষে সন্তানকে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। তাই দিন দিন এমদাদুল আরও অসুস্থ হচ্ছেন। উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো তিনি সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন পাবেন। তাই কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান কিংবা সরকারিভাবে তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিলে সুস্থ হতেন এমদাদুল।

একই সঙ্গে এমদাদুল ও তার মাকে পুনর্বাসনের জন্য একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও প্রতিবন্দী ভাতার আওতায় নিয়ে আসতে সরকারের প্রতি দাবিও জানিয়েছেন এমদাদুলের প্রতিবেশীরা।

এমদাদুল হকের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন সাদুল্লাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মানিক রায়। তিনি বলেন, এমদাদুলকে প্রতিবন্ধী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। দ্রুত তার হাতে পরিচয়পত্র তুলে দেওয়াসহ ভাতা কর্মসূচিতে নিয়ে আসা হবে। এ ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সহযোগিতাসহ পরিবারকেও সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
#ঢাকা পোস্ট

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –