• বুধবার ১৫ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩১

  • || ০৬ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দেশের মর্যাদা রক্ষায় বন্ধ হচ্ছে পুরাতন পোশাক আমদানি

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১  

বিদেশিদের ব্যবহার করা বা পুরাতন পোশাক আমদানি বা স্থানীয় বাজারে কেনাবেচার পথ বন্ধ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে আমদানি অর্ধেক করে দিয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে তা শূন্যে নামিয়ে আনতে চাইছে সরকার। জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদা সুরক্ষিত রাখতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।

কয়েক হাজার আমদানিকারক বিদেশ থেকে নামমাত্র মূল্যে পরিত্যক্ত স্যুয়েটার, লেডিস কার্ডিগান, জিপার জ্যাকেট, ট্রাউজার, শার্টসহ আরও কিছু পণ্য আমদানি করে আসছে।

কিন্তু পুরাতন কাপড় আমদানি করে দেশের বাজারে তা বিক্রি করার এই ঘটনাটি দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর মনে করছে সরকার। তাই এ বিষয়টি ঠেকাতে আমদানিনীতি আদেশ সংশোধন করা হচ্ছে। ফলে পুরাতন কাপড় আমদানি ও বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি তিন বছর পর পর দেশে একটি নতুন আমদানিনীতি আদেশ জারি করে। তবে ২০১৮-২০২১ সালে আমদানিনীতি জারি করা হয়নি। সবশেষ ‘আমদানিনীতি আদেশ ২০১৫-১৮’ এখন পর্যন্ত আমদানির ক্ষেত্রে বলবৎ আছে। ওই নীতিতে দেশে পুরাতন কাপড় আমদানির সুযোগ রাখা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, গত এক যুগে দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। স্থানীয় শিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছে। বড় হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের আকার। এতে কর্মসংস্থান, সার্বিক পণ্য ও সেবা উৎপাদন, মাথাপিছু আয় এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়েছে।

এসবের প্রভাবে ২০১৫ সালেই বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি দিয়েছে। এর তিন বছর পর ২০১৮ সালে জাতিসংঘ থেকে আসে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জনের ঘোষণা। এখন তার চূড়ান্ত যোগ্যতা অর্জনের পথে বাংলাদেশ রয়েছে চূড়ান্ত ধাপে। যার সমাপ্তি ঘটবে ২০২৬ সালে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, একসময় বিদেশি ঋণনির্ভর ছিল বাংলাদেশ। নেয়া হতো অনুদানও। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। ঋণনির্ভর সেই দেশ এখন বৈদেশিক ঋণও দিচ্ছে। পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পও নিজস্ব অর্থায়নেই শেষ হচ্ছে। তাছাড়া উন্নয়নের প্রয়োজনে যে বৈদেশিক ঋণ নেয়া হচ্ছে, তা পরিশোধের ক্রেডিট রেটিংয়েও বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের তুলনায় শীর্ষস্থানে রয়েছে। এই অবস্থায় পুরাতন কাপড় আমদানি দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চলতি বছরের শেষ দিকে নতুন ‘আমদানিনীতি আদেশ ২০২১-২৪’ জারি করবে। এর জন্য আমদানিনীতি খসড়া তৈরি এবং তার ওপর অংশীজনদের মতামত নেয়ার কাজও শেষ করে আনা হয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে ‘আমদানিনীতি আদেশ ২০২১-২৪’ অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। এরপরই খসড়াটি গেজেট আকারে জারি করা হবে।

আগের নীতি অনুযায়ী একজন আমদানিকারক পুরাতন কম্বল আমদানি করতে পারত সর্বোচ্চ দুই টন। নতুন নিয়মে তা অর্ধেক কমিয়ে এক টনে নামিয়ে আনা হচ্ছে। এভাবে স্যুয়েটার, লেডিস কার্ডিগান, জিপার জ্যাকেট (পুরুষ), পুরুষের ট্রাউজার আগে একজন আমদানিকারক সর্বোচ্চ ৬ টন হারে আমদানি করতে পারতেন। নতুন নিয়মে সেটি আমদানি করা যাবে সর্বোচ্চ ৩ টন করে।

এ ছাড়া সিনথেটিক ব্র্যান্ডেড কাপড়ের শার্ট আমদানি করা যাবে দুই টনের জায়গায় সর্বোচ্চ এক টন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি অনুবিভাগ) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘একসময় দেশের প্রয়োজনে যুগ যুগ ধরে পুরাতন কাপড়ের আমদানির চল চলে আসছিল। এখন সময়ের বাস্তবতায় এবং দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন, মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার কারণে সেই প্রবণতা অনেকটাই কমে গেছে।

‘আগে কয়েক শ কোটি টাকার পুরাতন কাপড় আমদানি হতো। এখন সেটি কয়েক কোটি টাকায় নেমে এসেছে। সারা দেশে এসব পণ্য আমদানিকারকের সংখ্যাও ৬ হাজার থেকে কমে ৩ হাজারে নেমে এসেছে। এর কারণ বাংলাদেশ এখন নতুন কাপড় রপ্তানিতেই বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। তা ছাড়া দেশেই এখন নতুন নতুন শিল্প গড়ে ওঠায় অভ্যন্তরীণ পোশাকের চাহিদার সবটাই পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে। কিছু নতুন পোশাক আমদানি হচ্ছে ভোক্তার ক্রমবর্ধমান রুচি ও চাহিদা মেটাতে। এসব কারণে পুরাতন কাপড় আমদানির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘নানা অর্জনের মধ্য দিয়ে জাতি হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশ বেশ মর্যাদার জায়গায় চলে গেছে। আমরা এখন স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণের অপেক্ষায়। এ পরিস্থিতিতে পুরাতন কাপড় আমদানি বিদেশে বাংলাদেশের মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে। তাই নতুন আমদানিনীতি আদেশ ২০২১-২৪ এ প্রদত্ত ধারায় সংশোধন করে পুরাতন কাপড় আমদানির পথ সংকুচিত করা হচ্ছে, যা শূন্যের কোটায় নেমে আসবে ২০২৬ সালের পর উন্নয়নশীল দেশে চূড়ান্তভাবে পদার্পণের পর। অর্থাৎ আমদানিনীতি আদেশ ২০২৪-২৭ স্থায়ীভাবে বন্ধ হবে পুরাতন কাপড় আমদানি।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য মতে, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ২০১৫ সালের হিসাবে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠী বা ৩ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ ছিল মধ্যবিত্ত। গবেষণায় বলা হয়েছিল, এই মধ্যবিত্তের সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে মোট জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশে উন্নীত হবে।

বাজার ও চাহিদার দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসালটিং গ্রুপও (বিসিজি) ২০১৫ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত নিয়ে একটি গবেষণা করেছিল। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সামর্থ্য বাড়ছে। প্রতিবছর ২০ লাখ মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে যুক্ত হচ্ছে। সচ্ছল বা উচ্চবিত্তের সংখ্যাও বাড়ছে সমানতালে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –