• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

প্রসূতিদের আস্থা লিলি আপা, করিয়েছেন ৭০০ নরমাল ডেলিভারি

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২২  

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারি করিয়ে আস্থা অর্জন করেছেন স্বাস্থ্যকর্মী মেহেরুন নেহার লিলি। তিনি উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কাজিপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত। গত আট বছরে প্রায় ৭০০ প্রসূতির নরমাল ডেলিভারি করিয়েছেন লিলি। এতে ক্লিনিকটিতে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে আস্থা বেড়েছে বহুগুণ।

সরেজমিনে ক্লিনিকটিতে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্যকর্মী লিলি রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। শিশুদের নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন অনেক মা। গর্ভবতী মায়েদের পরামর্শ দিচ্ছেন। যাদের ওষুধ প্রয়োজন, তাদের ওষুধ দিচ্ছেন। 

চিকিৎসা নিতে আসা প্রসূতি শ্যামলি আক্তার, শারমিন আক্তার ও হুসনে আরাসহ কয়েকজন জানান, তাদেরকে নরমাল ডেলিভারি করিয়েছেন মেহেরুন নেহার লিলি। কোনো প্রকার সমস্যা হয়নি, খরচও হয়নি তেমন একটা। মা-শিশু সবাই ভালো আছেন তারা।

১৯৯৮ সালে বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে কাজিপাড়া গ্রামে ক্লিনিকটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জমি দিয়েছিলেন স্থানীয় রমিনা খাতুন। এ ক্লিনিকটি থেকে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার আর জেলা আধুনিক সদর হাসপাতাল ৩৫ কিলোমিটার। গর্ভবতী মায়েদের প্রসব ব্যথা উঠলেই ছুটে আসেন মেহেরুন নেহার লিলির কাছে। এতে হাতের নাগালে নরমাল ডেলিভারি করতে পেরে যেমন অর্থ বেঁচে যাচ্ছে, তেমনি দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পাওয়ায় শহরের হাসপাতালগুলোতে যেতে হচ্ছে না। গ্রামের নারীদের কাছে লিলি আপা হিসেবে পরিচিত এই স্বাস্থ্যকর্মী। 

জানা গেছে, ২০১১ সালে মেহেরুন নেহার লিলি কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। যোগদানের পর তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন প্রাথমিক চিকিৎসা। ২০১৪ সালে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে কমিউনিটি স্কিল বার্থ অ্যাটেনডেন্ট (সিএসবিএ) বিষয়ে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৫ সালে স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি শুরু করেন নরমাল ডেলিভারি কার্যক্রম। 

প্রথম ডেলিভারির কাজটি করেছিলেন অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে। মাত্র এক ঘণ্টার চেষ্টায় সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসবের পর থেকেই তার কাজের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম থেকে গ্রামে। হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষ খুঁজে পায় আস্থার এক নতুন ঠিকানা। আট বছরে প্রায় ৭শ নরমাল ডেলিভারি করিয়ে হয়ে উঠেছেন আস্থার প্রতীক। এ কারণে ক্লিনিকটি উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ক্লিনিক হিসেবে পুরস্কারও লাভ করেছে।

স্বাস্থ্যকর্মী মেহেরুন নেহার লিলি বলেন, প্রথম প্রথম আমার প্রচণ্ড ভয় লাগতো। ভাবতাম আমার দ্বারা এই জটিল কাজ কীভাবে সম্ভব হবে। ফরিদা আক্তার নামে এক নারীর প্রথম ডেলিভারি সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে আমার সাহস বেড়ে যায়। কনকনে শীতে অথবা বৃষ্টিতে ভিজে, সারারাত পরিশ্রম করে যখন একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভ হতে ফুটফুটে সুস্থ সন্তান দুনিয়াতে আসতো, তখন ভুলে যেতাম সব কষ্ট। ডেলিভারি করাতে পারলে আমার খুব আনন্দ হয়। আমার নিকটাত্মীয় অনেকের ডেলিভারি করিয়েছি, যেটা আমার ভালোলাগা ও প্রাপ্তি। আমার এ অসাধ্য কাজে সার্বিক পরামর্শসহ সাহস জুগিয়েছেন তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. পীতাম্বর রায়, এইচআই শরীফ উদ্দিন, এএইচআই জমির উদ্দিন এবং এইচএ দেলোয়ার হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

তিনি আরও বলেন, এখানকার হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষ যারা সিজার করাতে পারেন না, তারা খুব সহজে নরমাল ডেলিভারি করাতে আমার কাছে আস্থা নিয়ে আসছেন। এখন পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটি শিশু ও মা সুস্থ রয়েছেন। এখন রাতে-দিনে সমস্যা হলেই ডাক পড়ে। রোগীরা সরাসরি কিংবা মুঠোফোনে সমস্যার কথা বলছেন। তাদের সেবা করতে পেরে ভালো লাগে।

নরমাল ডেলিভারির কাজে সন্তুষ্ট গৃহবধূ আল্পনা বেগম বলেন, লিলি আপা ভালো মানুষ। যখনই তাকে ফোন দিই, তখনই পাওয়া যায়। নরমাল ডেলিভারিতে তাকে ডাকলেই পাওয়া যায়। খুব সুন্দরভাবে অল্প সময়েই আমার ডেলিভারি সম্পন্ন করেছেন। এতে আমার খরচও বেঁচে গেছে। তার কাজে আমিসহ সবাই সন্তুষ্ট।

স্থানীয় বাসিন্দা আলহাজ শেখ কামাল বলেন, স্বাস্থ্যকর্মী লিলির মাধ্যমে সঠিক সেবা পাচ্ছে এলাকার মানুষ। আমাদের বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। ভালোভাবে নরমাল ডেলিভারি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৬শ থেকে ৭শ মতো নর্মাল ডেলিভারি করিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মী। এখানো খারাপ কোনো রিপোর্ট আসেনি। ক্লিনিকটি যদি আরও উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করি। 

ইউপি সদস্য ও ক্লিনিক গ্রুপের সভাপতি রাইতু মোহাম্মদ বলেন, নরমাল ডেলিভারিতে অত্র উপজেলার একটি ভালো রেকর্ড অর্জন করেছে আমাদের কাজিপাড়া ক্লিনিকটি। এ ক্লিনিকটির স্বাস্থ্যকর্মী মেহেরুন নেহার লিলি নরমাল ডেলিভারি করিয়ে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। বেশ ভালো সুনাম অর্জন করেছেন।

তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল কাশেম বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রায় ৭শ নরমাল ডেলিভারি হওয়াটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। উত্তরাঞ্চলে এ রকম রেকর্ড খুবই কম। অত্র উপজেলার অন্যান্য ক্লিনিকগুলোতে গর্ভবতী নারীর অভিভাবকরা কমিউনিটি ক্লিনিকে এনে নরমালি ডেলিভারি করাচ্ছেন। সিএইচসিপি মেহেরুন নেহার লিলির এমন রেকর্ড প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। তাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –