• বুধবার ০১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

বালুচরে থমকে আছে জীবন-জীবিকা

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৬ মার্চ ২০২৪  

 
বর্ষা এলেই বন্যা আর ভাঙনের মুখে পড়েন তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। ভাঙন আর প্রবল স্রোতে ভেসে যায় তিস্তাপাড়ের মানুষের ফসলি জমি ও বসতভিটাসহ সব স্থাপনা। সেই প্রমত্তা তিস্তা নদী শুকিয়ে এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। হেঁটেই পারাপার হচ্ছেন স্থানীয়রা। বর্ষার পানিতে ফুলে ফেঁপে ওঠা তিস্তা এখন পানির অভাবে ধু ধু বালুচর। নদীর পাড়ে নেই নৌকা, মাঝি-মাল্লাদের হাঁকডাক। নেই জেলেদের মাছ ধরার ব্যস্ততা। এ যেন নিরাশার বালুচরে থমকে গেছে তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ)  দুপুরে সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চলের চর গোকুন্ডা গ্রামে গেলে এমনই চিত্র দেখা যায়। মৌসুম না ফুরোতেই এই ফাল্গুনে পানির অভাবে তিস্তার বুক এখন ধু ধু বালুচর। নেই নৌকা বা ট্রলার আর মাঝি-মাল্লাদের হাঁকডাক। নেই জেলেদের মাছ ধরার ব্যস্ততা। সব মিলিয়ে তিস্তাপাড়ের জীবন-জীবিকা এখন থমকে দাঁড়িয়েছে নিরাশার বালুচরে।

জানা যায়, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারী জেলার ডিমলার কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে তিস্তা। এরপর লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রক্ষ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশেছে। নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার।

উজানে গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত একতরফা নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করায় বর্ষা শেষেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়। ফলে লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার ১২৫ কিলোমিটার তিস্তার অববাহিকায় জীবনযাত্রা, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়ে। দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ভাটিতে বালুচরে এখন হেঁটেই নদী পাড়ি দিচ্ছে মানুষ। ফলে ব্যারাজ, তিস্তা রেলসেতু, সড়ক সেতু ও গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু দেখে মনে হয় যেন এগুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে ধু ধু বালুচরে।

নদী পাড়ের জেলেরা জানান, এক সময় তিস্তায় প্রচুর মাছ ধরা পড়তো। সেই মাছ বিক্রি করেই তারা সংসার চালাতেন। সেই সময় তিস্তার মাছকে ঘিরে সদর উপজেলার তিস্তা বন্দরে শুঁটকির আড়ৎ ছিল। যেখান থেকে সারাদেশে যেত তিস্তা নদীর শুঁটকি। এখন মাছই পাওয়া যায় না। তাই শুঁটকির অভাবে তিস্তা বন্দরের আড়তেরও নেই আগের জৌলুস। যা আছে তা বাইরের শুঁটকি। পানি শূন্য তিস্তায় মাছের আকাল পড়েছে। অনেক জেলে পেশা পরিবর্তন করেছেন। যারা রয়েছেন তাদের সংসার চলে অনাহারে-অর্ধাহারে।

তিস্তার বাম তীরে সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের পাঙ্গাটারী গ্রামের জেলে জীতেন্দ্রনাথ বলেন, আগে এ নদীতে দিনভর মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার সুখেই চলত। মাছের শুঁটকি করেও সারাবছর বিক্রি করতাম। এখন নিজের খাবার মাছও পাওয়া যায় না। আশপাশের গর্তে থাকা মাছ ধরে কোনরকম খেয়ে না খেয়ে কাটছে দিন। অনেকেই পেশা বদল করেছেন। অন্য কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় এ পেশাতেই রয়েছি। পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করে তিস্তার প্রাণ ফেরানো জরুরি।

তিস্তা চরাঞ্চলে গোবর্ধ্বন গ্রামের কৃষক নজির হোসেন বলেন, শুস্ক মৌসুমে যখন চাষাবাদের জন্য পানির প্রয়োজন তখন তিস্তায় পানি পাই না আমরা। ন্যায্য হিস্যা পেলে শুষ্ক মৌসুমেও পানি থাকত তিস্তায়। তখন মাছই শুধু নয়, নদীর পানি ব্যবহার করে চরাঞ্চলের অনাবাদি জমিগুলোতে চাষাবাদ করা যেত। এখন অনেক টাকা খরচ ও প্রচুর পরিশ্রম করে কোনো রকম চাষাবাদ করছি। যার উৎপাদন খরচও উঠে না।

খেয়া ঘাটের মাঝি সফিকুল বলেন, এখন নদীর মূল পানি প্রবাহ যেখানে, সেখানেই পানি হাঁটুর নিচে। হেঁটেই পাড়ি দেওয়া যায়। বাকিটুকু ধু ধু বালুচর। নৌকা চালানোর সুযোগ নেই। হাঁটু পানি ভেঙে সবাই নদী পাড়ি দিচ্ছে। তাই যাত্রীর অভাবে নৌকা তুলে রেখেছি।

তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা জানান, নদীতে মাত্র ২ হাজার কিউসেক পানি রয়েছে। যা দিয়ে ৪৫ হাজার হেক্টর জমির চাষ হচ্ছে। পানি কম থাকায় মূল স্রোত ধারার সব জলকপাট বন্ধ রয়েছে। ফলে পানি শূন্য রয়েছে মূল নদী।
 

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –