• মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩০ ১৪৩১

  • || ০৫ জ্বিলকদ ১৪৪৫

লালমনিরহাটে যোগাযোগ খাতে  ১০ বছরে অভ্যুতপূর্ব উন্নয়ন

লালমনিরহাট বার্তা

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০১৮  

উত্তরের মঙ্গা অঞ্চল বলে পরিচিত রংপুর বিভাগের পিছিয়ে পড়া পশ্চাৎপদ একটি সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। ৫টি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত জেলাটিতে তিনটি সংসদীয় আসন রয়েছে। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কালও গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল লালমনিরহাট। সেই লালমনিরহাট জেলাটির মানুষের আর্থসামাজিক ও ভাগ্য উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাঁধা ছিল যোগযোগ ব্যবস্থা। সেই যোগযোগ ব্যবস্থা গত ১০ বছরে প্রায় আমুল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। 


লালমনিরহাট প্রশাসন সূত্র জানায়, লালমনিরহাটের সাথে সারাদেশের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ছিল লালমনিরহাট তিস্তা রেলওয়ে সেতুটি। বৃটিশ আমলে নির্মিত সেই রেলওয়ে সেতুর পূর্বপ্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০১২ সালে ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি সড়ক সেতু নির্মাণ কাজ শেখ করে তা জনসাধারণ ও পণ্য পরিবহনের জন্য খুলে দেয়। যোগাযোগ খাতে লালমনিরহাট অঞ্চল ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এই সেতুটির সুফল ভোগ করতে লালমনিরহাট জেলার পাশাপাশি কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার প্রায় কয়েক লাখ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ধরলা নদীর উপর ৯৫০ মিটার আরো একটি সেতু নির্মাণ করে দেন। এছাড়াও বুড়িমারী স্থলবন্দরের সাথে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাথে ত্রি-দেশীয় পণ্য পরিবহনের সুবিধার জন্য ইতোমধ্যে রংপুর মর্ডাণ মোড় থেকে ঢাকা পর্যন্ত ফোর লেন রাস্তা নির্মাণের কার্যক্রম দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। একাশদ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিজয়ী হলে রংপুর মর্ডাণ মোড় থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত ফোর লেন রাস্তার অবশিষ্ট অংশ নির্মাণ কাজ শেখ করা হবে। তবে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের আদিতমারী উপজেলায় স্বর্ণামতি নদীর উপর প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৫ মিটার একটি ফোর লেন পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করে জনসাধারণ ও পণ্য পরিবহনের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। এটি লালমনিরহাট জেলার মধ্যে প্রথম ফোরলেন সেতু।


অপরদিকে, লালমনিরহাটের আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে কাকিনা-মহিপুর নামকস্থানে তিস্তা নদীর উপর ৮৫০ মিটার দীর্ঘতম ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা তিস্তা সেতু’ নির্মাণ শেষে তা জনসাধারণ ও পণ্য পরিবহনের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণ ও ৩ শতাধিক ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। 


লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার রেলপথ পুনঃনির্মাণ ও ৯টি রেলওয়ে স্টেশন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে এই রুটে গত দশ বছর আগের দিনে একটি ট্রেন চলাচল করতে পারতো না। এখন প্রতিদিন ৮টি ট্রেন চলাচল করছে। এই রুটের ট্রেনে যেমন যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে তেমিন স্থানীয় লোকজনের মাঝে ট্রেন ভ্রমন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
রোখছানা পারভীন একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। তিনি প্রতিদিন সকালে লালমনিরহাট থেকে পাটগ্রাম গিয়ে অফিস করে বাড়ীতে ফিরে আসেন। তুষভান্ডার রেলওয়ে স্টেশন এলাকার বাসিন্দা গোধুলি আক্তার। তিনি চাকুরি করেন পাটগ্রাম সমাজ সেবা অফিসে। তিনিও প্রতিদিন ট্রেনেই চলাচল করেন। তারা বলেন, ‘আগের খুবই খারাপ অবস্থা ছিল যোগাযোগ খাতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গত ১০ বছরে যোগাযোগ খাতে লালমনিরহাটের চেহারাই বদলে দিয়েছে। এই সরকার উন্নয়নের সরকার। তাদের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন হচ্ছে।’ 


লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি লেফটেন্যান্ট(অবঃ) মোতাহার হোসেন এমপি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আবারও ক্ষমতায় গেলে লালমনিরহাট বিমানবন্দর, রংপুর মর্ডাণ মোড় থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত ১৩৮ কিলোমিটার রাস্তার ফোরলেন নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগকে উন্নয়ন করে আরো কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হবে। যোগাযোগ খাতকে টেকসই উন্নয়নের ধারায় ফিরিয়ে আনা হবে।’

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –