বঙ্গবন্ধুর কারামুুক্তি দিবস
শাহাদাৎ হোসেন এফসিএ
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তান বিভিন্নভাবে শোষণ করেছে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশকে। গড়ে তুলেছিল পাহাড় সমান বৈষম্য। পূর্ব পাকিস্তানের পণ্য রপ্তানি করে সে রপ্তানি আয় থেকে আমদানি করা হতো পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষের ভোগ-বিলাসের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের এই শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন আর বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বঙ্গবন্ধু আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। সহ্য করেছেন জেল-জুলুম-অত্যাচার। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ২৩ বছরে বঙ্গবন্ধু বহুবার গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং মুক্তি পেয়েছেন, কারাভোগ করেছেন চার হাজার ৬৮২ দিন অর্থাৎ প্রায় ১৩ বছরই কেটেছে দেশের বিভিন্ন জেলখানায় বা কারাগারে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের এতটাই বঞ্চিত করেছিল যে ১৯৭০-এর নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করেও পাকিস্তানি সামরিক শাসক বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে দেয়নি।
বাংলাদেশের মানুষকে এই বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তিদানের উদ্দেশ্যে দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করলেন—‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু। ২৫শে মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সশস্ত্র আক্রমণ চালায় এবং গণহত্যা শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনী মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে বাংলার জনপদের জনবসতির যে ক্ষতি ও ধ্বংস সাধন করেছে তা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়েও কোনো দেশের শত্রুপক্ষ করেনি, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর এতটা পরিকল্পিত আঘাত আসেনি। পাকিস্তানি বাহিনী গ্রামের ঘরবাড়ি, স্কুলঘর, বিশেষ করে হাট-বাজারগুলো জ্বালিয়ে দেয়। লাখ লাখ সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। নারী নির্যাতন করে চরম আকারে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে, পুড়িয়ে দেয় খাদ্যগুদাম, ভেঙে ফেলে কৃষিব্যবস্থা, পুড়িয়ে ফেলে ব্যাংকের টাকা। শুধু গ্রামাঞ্চলেই ৪৩ লাখ বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল বিশ্বব্যাংকের জরিপ প্রতিবেদনে।
চট্টগ্রাম বন্দরটি সম্পূর্ণভাবে শুধু ধ্বংসই করেনি, বন্দর থেকে বহু দূর পর্যন্ত সমুদ্রপথে মাইন পেতে রেখেছিল, যাতে খাদ্যশস্য নিয়ে জাহাজ এসে নোঙর করতে না পারে। স্থলপথে রেল যোগাযোগ প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। সড়ক যোগাযোগ ধ্বংস করা হয়েছিল সেতুগুলো উড়িয়ে দিয়ে। সব মিলিয়ে এক হিসাবে দেখা যায়, যুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যে সম্পদ ধ্বংস হয়েছে এবং যুদ্ধ-পরবর্তীকালে তার যে অর্থনৈতিক প্রভাব—সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৩.৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা তৎকালীন সময়ের বিনিময় হার অনুযায়ী ১১ হাজার ২৩৮.৩৬ কোটি টাকা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই ধ্বংসাত্মক কর্মযজ্ঞ চালালেও দেশের মুক্তিযোদ্ধা এবং মিত্রবাহিনীর কাছে টিকতে না পেরে একই বছর অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযুদ্ধে দেশ বিজয় লাভ করে।
দেশের স্বাধীনতা লাভের ইতিহাস বা যুদ্ধে ক্ষতির তথ্য প্রায় সবারই জানা—এটি উল্লেখ করাই এ লেখার মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। প্রাসঙ্গিকতার কারণে স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলেও এই লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো, দেশ শত্রুমুক্ত হওয়া সত্ত্বেও জাতির মহান নেতা রাষ্ট্রপ্রধান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখনো কারামুক্ত হননি, শত্রুরাষ্ট্র পাকিস্তানের হাতে বন্দি। তাঁকে ছাড়া আমাদের স্বাধীনতা শুধু অপূর্ণ নয়, অসুরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ। দেশবাসী তখনো জানে না তিনি কেমন আছেন, কী অবস্থায় আছেন। নানা রকম গুঞ্জনে তখন আকাশ-বাতাস ভারী। ২২ ডিসেম্বর প্রথম বাংলাদেশ সরকার কলকাতা থেকে স্বাধীন দেশে ফিরে আসে।
ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথমেই বলেন, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে না আসা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।’ তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করে, ‘স্বাধীন বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি ব্যতীত স্বাধীনতা অসম্পূর্ণ। তাঁহাকে বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাত হইতে মুক্ত না করা পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকিবে।’
অবশেষে পাকিস্তানি শাসকের বিভিন্ন নাটকীয় ভাষাভঙ্গি, কার্যকলাপ শেষে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ পাকিস্তানি বন্দিশালা থেকে মুক্ত হয়ে পাকিস্তানের জাতীয় এয়ারলাইনস পিআইএর একটি বিশেষ বিমানে লন্ডনে পৌঁছান। লন্ডনে বঙ্গবন্ধু ব্যস্ত ও চমৎকার সময় অতিবাহিত করে নয়াদিল্লি হয়ে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, রূপকার, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মাটিতে ফিরে আসেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসাকে উদযাপন করতে সেদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে আলোচ্য দিকটি হচ্ছে বারবার, এমনকি একই দিনে একাধিকবার কারাবরণ করে দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করা। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই দুটি থেকে সহজেই উপলব্ধি করা যায়, বঙ্গবন্ধুর কারাগার জীবনের করুণ কাহিনি। কিন্তু কেন বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাগারে যেতে হয়েছে? তার একটিই উত্তর হচ্ছে, এ দেশের মানুষকে নিপীড়ন, নির্যাতন আর বঞ্চনার হাত থেকে মুক্ত করা।
দেশ মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভের সঙ্গে সঙ্গে সেদিনটিও ঐতিহাসিকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, যেদিন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হন। ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর সেই দুর্বিষহ কারাজীবনের অবসান ঘটে বিধায় ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করার পাশাপাশি ঐতিহাসিক তাৎপর্য বিবেচনায় নিয়ে ৮ জানুয়ারি কারামুক্ত দিবস হিসেবে স্মরণপূর্বক নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষদের মুক্তির লক্ষ্যে কারাগারে বঙ্গবন্ধুর যাপিত জীবনের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন অত্যাবশ্যক।
লেখক: সাবেক সহসভাপতি, দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ।
সূত্র: কালেরকণ্ঠ।
– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –- লালমনিরহাট জেলা সমিতির নতুন কমিটি গঠন
- বাজুস এখন শক্তিশালী সংগঠন
- ধূমপান বা তামাক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর
- সত্যি কী আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা পাচ্ছেন শাকিব খান?
- হজের জন্য মাহরাম না পেলে নারীদের করণীয় কী?
- রাশিয়ার সাথে সম্ভাব্য সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে ন্যাটো: মস্কো
- অপসাংবাদিকতা মূল সাংবাদিকতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
- ট্রেন সুবিধায় আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল দক্ষিণবঙ্গ: রেলমন্ত্রী
- ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে আমরা পাপমুক্ত হয়েছি’
- ‘মৎস্যসম্পদ রক্ষার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে হবে’
- উপজেলা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে যে নির্দেশনা দিল ইসি
- টেনিস খেলাকে জনপ্রিয় করতে কাজ করা হচ্ছে: নৌপ্রতিমন্ত্রী
- ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে রাজধানীর চাপ কমে আসবে: চিফ হুইপ
- ‘উদ্যোক্তারাই দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রগতির কাণ্ডারি’
- তীব্র গরমেও শীতল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
- চাই না মুক্তিযুদ্ধ চেতনাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় আসুক
- ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৫ শতাংশ কার্বণ নিঃসরণ কমাতেই হবে
- খুলেছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
- হাতীবান্ধায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নতুন কমিটি ঘোষণা
- গ্রীষ্মকালে শীতল ত্বক : শসার মাস্ক
- মুসলিম উম্মাহর একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে
- বাংলাদেশ-গাম্বিয়া জয়েন্ট বিজনেস টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব
- ডর্টমুন্ডের সঙ্গে এক যুগের সম্পর্ক ছিন্ন করছেন এই ফুটবলার
- ব্যাভিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে পুরস্কার পেলেন ‘অভাগী’ মিথিলা
- হজের ক্ষেত্রে শয়তান যেসব ওয়াসওয়াসা দেয়
- মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলার পরিকল্পনা ভেস্তে দিলো কুয়েত
- যেসব জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শনিবার বন্ধ থাকবে
- আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান: ইসি রাশেদা
- খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণের আহ্বান প্রধান বিচারপতির
- রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি চায় বাংলাদেশ-গাম্বিয়া
- আদিতমারীতে জুয়ার আসর থেকে স্কুলশিক্ষকসহ আটক ৮
- দেশজুড়ে আরো ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি
- বোরো মৌসুমের ধান-চালের মূল্য নির্ধারণ করল সরকার
- রোগীর প্রতি চিকিৎসকের অবহেলা সহ্য করবো না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- সরকারি সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলে প্রার্থিতা বাতিল
- ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে আমরা পাপমুক্ত হয়েছি’
- কারিগরির সনদগুলো কারা কিনেছেন বের করা হবে: ডিবিপ্রধান
- ইসরায়েলের এই বর্বরতা মেনে নেয়া যায় না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার কবে বন্ধ হবে, জানালেন শিক্ষামন্ত্রী
- আইকনিক লিডার এখন কুন্তলা চৌধুরী
- প্রত্যেকের উচিত প্রধানমন্ত্রীকে সহায়তা করা: গণপূর্তমন্ত্রী
- বেরোবি উপাচার্যের নামে ভুয়া ই-মেইল, থানায় জিডি
- সৌদিতে ভারী বৃষ্টিতে ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, ভেসে গেছে গাড়ি
- হাতীবান্ধায় মাদক ব্যবসায় বাঁধা দেয়ায় স্ত্রীকে মারধর
- আইপিএলে পান্ডিয়াদের বিরুদ্ধে জোচ্চুরির অভিযোগ!
- পুলিশের প্রতি ১১ নির্দেশনা
- আদিতমারীতে স্বামীর থাপ্পড়ে প্রাণ গেল স্ত্রীর
- ঢিলেঢালা পোশাক ও যথাসম্ভব ছায়ায় থাকুন: চিফ হিট অফিসার
- চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা
- অপবিত্র জায়গায় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা, শরিয়ত কী বলে?