• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জমি লিখে নিয়ে মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন ছেলে

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৩ আগস্ট ২০২৩  

মায়ের সব জমি নিজের নামে লিখে নিয়ে মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন ছেলে ও তার ছেলের বউ। তাই বৃদ্ধা মা তছিরন বেওয়া (৭৫) বিচার চেয়ে লালমনিরহাটের আদিতমারী থানায় তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

তছিরন বেওয়া আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের উত্তর গোবদা গ্রামের মৃত আনছার আলীর স্ত্রী। অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন (৫৫) বৃদ্ধার একমাত্র ছেলে ও ছেলের বউ আম্বিয়া (৪৮)। 

অভিযোগ পত্রে জানা গেছে, জন্মের পর থেকেই বাবা মাকে হারিয়ে অন্যের আশ্রয়ে বড় হয়ে উত্তর গোবদা গ্রামের আনছার আলীর সঙ্গে বিয়ে হয় তছিরনের। এক ছেলে এক মেয়ে রেখে আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্বামী আনছার আলী মারা যান। মাত্র ৬ মাস বয়সী মেয়ে আনিছা ও ৩ বছর বয়সী ছেলে আনোয়ার হোসেনকে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে বড় করেন। ছেলে মেয়ের কথা চিন্তা করে নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের মুখ দেখে কাটিয়ে দেন যৌবন। 

দীর্ঘ দিন অন্যের জমিতে বসবাস করে ছেলে মেয়ের বিয়ের পর পৈত্রিক সূত্রে ৫৪ শতাংশ জমি পান তছিরন বেওয়া। ফলে সেই জমিতে শেষ বয়সে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় তার। এখন সেই জমিই কাল হয়ে দাঁড়ায় বৃদ্ধার। বাড়ি করা ১১ শতাংশ জমি ছেলে আনোয়ার হোসেনকে ও চাষাবাদের জমির ১৫ শতাংশ মেয়ে আনিছাকে দলিল করে দেন বৃদ্ধা। বাকী জমিতে আসা ফসল আর বয়স্ক ভাতার টাকায় চলত তার সংসার খরচ। ছেলে ও ছেলের বউ আম্বিয়ার আচরণে নিজে রান্না করে খেতেন তিনি।

গত ১০ মাস আগে ছেলে আনোয়ার হোসেন চাষাবাদের বাকী ২৮ শতাংশ জমি মায়ের কাছ থেকে দলিল করে নেন। এরপর মায়ের উপর অত্যাচার বাড়িয়ে দেন। খোঁজ খবর নেওয়াও বন্ধ করে দেন। উলটো বিগত দিনে চিকিৎসা বাবদ মায়ের পিছনে খরচ হওয়া ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। সম্বলহীন বৃদ্ধা তছিরন সেই টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ৪ মাস আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন ছেলে আনোয়ার ও ছেলের বউ আম্বিয়া।

নিরুপায় হয়ে একমাত্র মেয়ে আনিছা বেগমের বাড়িতে পাড়ি জমান বৃদ্ধা তছিরন। সেই থেকে মেয়ে জামাই তার সকল দেখভাল করছেন। বৃদ্ধা মাকে স্থান দেওয়ায় বোনের উপর ক্ষিপ্ত হন ভাই আনোয়ার ও তার স্ত্রী। 

বিগত দিনের মত এ বছরও মায়ের কাছ থেকে পাওয়া ১৫ শতাংশ জমিতে আমন ধান রোপণ করেন আনিছা। গত শনিবার (১৯ আগস্ট) সেই জমিতে সার দিতে গেলে বাঁধা দেন আনোয়ার। দাবি করেন, মায়ের চিকিৎসা করাতে খরচ হওয়া সেই ২০ হাজার টাকা না দিলে জমিতে নামতে পারবে না। বৃদ্ধা তছিরন মেয়ের বাড়িতে থাকেন তাই তার পাওনা টাকা মেয়ে আনিছাকেই পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় জমিতে নামতে পারবে না।

এ দিকে চিকিৎসায় খরচ ২০ হাজার টাকা ছাড়া বাড়ি ফিরলে বৃদ্ধা তছিরনকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন ছেলে আনোয়ার। এ ঘটনায় বৃদ্ধা তছিরন বেওয়া ভরণপোষণ ও তার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ছেলে ও ছেলের বউ এবং দুই নাতির বিরুদ্ধে গত রোববার (২০ আগস্ট) আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

বৃদ্ধার মেয়ে আনিছা বেগম বলেন, মাকে কখনই মা বলে ডাকেননি ভাই আনোয়ার। বিয়ের কিছুদিন পরেই বউয়ের কথামতো মাকে মারপিট করেছিল। তখন গ্রামবাসী তাকে শাসনও করে। এখন মায়ের জমি লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমি আশ্রয় দিয়েছি তাই মায়ের কাছে পাওনা ২০ হাজার টাকা আমাকে পরিশোধ করতে বলে। টাকা না দেওয়ায় আমাকে জমিতে নামতে বাঁধা দেয়।

বার বার আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বৃদ্ধা তছিরন বেওয়া বলেন, বউয়ের কথামতো ছেলে অনেক নির্যাতন করেছে। বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে আমার ঘরে তালা দিয়েছে। পরিচয়পত্র নিতে গেলেও আমাকে দেয়নি। এখন চিকিৎসা করানোর ২০ হাজার টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। বৃদ্ধ বয়সে সবাই সন্তানদের আশ্রয়ে নিরাপদ থাকে। আমার ক্ষেত্রে উলটো। সন্তানই এক কাপড়ে বাড়ি ছাড়া করেছে। আমি এর বিচার চাই।

আদিতমারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –