• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

রংপুরে সবজির বাম্পার ফলন

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪  

রংপুরের ৮ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, গাজর, করলাসহ রকমারি শীতকালীন সবজিতে ভরে গেছে মাঠ। কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন তাদের সবজি ক্ষেত পরিচর্যায়। দম ফেলারও যেন সময় নেই তাদের।

তবে এবারে সিন্ডিকেটের কারণে সবজির দাম চড়া বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। চড়া দামে সবজি বিক্রি হলেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। 

জানা যায়, রংপুরে উৎপাদিত শীতকালীন সবজি ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গেলেও খোদ রংপুরেই শাকসবজির দাম চড়া। ফলে স্বস্তি ফেরেনি ক্রেতাদের। সবজির দাম বাড়ার পেছনে সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচের খরচ বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন কৃষকরা। সেই সঙ্গে হাতবদলের পর মধ্যস্বত্বভোগীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

কৃষকরা জানান, তাদের সরাসরি মহাজনদের কাছে দরদাম করে সবজি বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। শুধুমাত্র হাতবদল করেই লাভ করছেন স্থানীয় পাইকাররা। বাজার থেকে ভোক্তাদের সেই সবজি কিনতে হচ্ছে দ্বিগুন দাম দিয়ে। রংপুর অঞ্চলের মধ্যে মিঠাপুকুর উপজেলা সবজি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এরপরেই রয়েছে গঙ্গাচড়া উপজেলা। এই দুই উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় এবং স্থানীয় বাজার ব্যবস্থার অভাবে ন্যায্যমূল্য থেকে বেশিরভাগ সময় বঞ্চিত থাকেন কৃষকরা আর লাভ গুনছেন পাইকাররা। 

কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি মুলা ২-৩ টাকা, পাইকারী ৫-৭ টাকা, ভোক্তা পর্যায়ে ২০ টাকা, পাতা কপি কৃষক পর্যায়ে ১০ টাকা, পাইকারী ১৫ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ২৫ টাকা, ফুলকপি কৃষক পর্যায়ে ২০ টাকা, পাইকারী ৩০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৪০ টাকা, কাঁচা পিয়াজ কৃষক পর্যায়ে ৫০ টাকা, পাইকারী ৬০-৬৫ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা।

কাঁচা মরিচ কৃষক পর্যায়ে ৪০ টাকা পাইকারী ৫০ টাকা, ভোক্তা পর্যায়ে ৬০ টাকা, ঢোপা বেগুন কৃষক পর্যায়ে ৪৫ টাকা, পাইকারী ৬০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৮০ টাকা, চিকন বেগুন কৃষক পর্যায়ে ৪০-৪৫ টাকা, পাইকারী ৫৫-৬০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো কৃষক পর্যায়ে ২০ টাকা পাইকারী ৩০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর কৃষক পর্যায়ে ১৫ টাকা, পাইকারী ২০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা, শিম কৃষক পর্যায়ে ২৫ টাকা পাইকারী ৩৫-৪০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

মিঠাপুকুর উপজেলার রুপসি গ্রামের কৃষক লেবু মিয়া জানান, এবার পাঁচ বিঘা জমিতে ফুলকপি ও বাধাকপির চাষ করেছেন। জমি তৈরিসহ বীজ, সার, কীটনাশকসহ অন্যান্য খরচ হয়েছে বিঘা প্রতি প্রায় ২০ হাজার টাকা।

তিনি আরো বলেন, ক্ষেত থেকে যে দামে পাইকাররা কিনে নিয়ে যায়, তার দ্বিগুন দামে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করে তারা। এতে আমরাও ন্যায্যমূল্য থেকে যেমন বঞ্চিত হই। সেই সঙ্গে ভোক্তারা চড়া দামে সবজি কিনছেন।

রানীপুকুর এলাকার কৃষক সবুজ মিয়া, মনসুর আলী ও মনোরঞ্জন জানান, স্থানীয় পাইকাররা তাদের কাছ থেকে প্রতিটি লাউ কেনেন ১০ থেকে ১৫ টাকায়। আর বাজারে গিয়ে সেই লাউ বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। 

তিনি আরো বলেন, আমরা অনেক সময় নিজেই আমাদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে বাজারের আড়তে যাই সেখানেও এই অবস্থা। অথচ খুচরা ব্যবসায়ীরা ২০ টাকায় সবজি কিনে নিয়ে গিয়ে ৫০ টাকায় বিক্রি করছে। সেদিক থেকে আমাদের সবেই লস।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) আনোয়ার হোসেন বলেন, সবজি মানেই পচনশীল পণ্য। সংরক্ষণ সুবিধা না থাকায় ক্ষেত থেকে উত্তোলন করেই বিক্রি করতে হয় কৃষকদের। যার কারণে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। 

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –