• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া মুক্তারের পাশে ডিসি

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৩ আগস্ট ২০২২  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তির সুযোগ পাওয়া দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থী মুক্তারুজ্জামান মুক্তারের পাশে দাঁড়িয়েছেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জহুরুল ইসলাম। সোমবার (২২ আগস্ট) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে মুক্তারের হাতে উপহার ও আর্থিক অনুদান তুলে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অনিশ্চয়তা কাটল মুক্তারের। 

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোয়াবাড়ি গ্রামের হতদরিদ্র পাথর শ্রমিক দম্পতি মোশারফ হোসেন ও হনুফা বেগমের ছেলে। মুক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছিলেন না। এ নিয়ে গত রোববার (২১ আগস্ট) ঢাকা পোস্টসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের নজরে আসে। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মুক্তারকে ফোনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসতে বলা হয়। ফোন পেয়ে মুক্তার সোমবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গেলে তাকে শুভেচ্ছা উপহারসহ অনুদান হাতে তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো.জহুরুল ইসলাম।  

মুক্তারুজ্জামান মুক্তার ২০২১ সালে পঞ্চগড়ের মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ থেকে মানবিক শাখায় পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ও ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সমাজ কল্যাণ বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তিনি ‘খ’ ইউনিটে ৬৫৪তম ও ‘ঘ’ ইউনিটে  মেধা তালিকায় ৬৩তম হয়েছেন।

মুক্তারুজ্জামান মুক্তার বলেন, বাবা-মা দুজনেই পাথরশ্রমিক হওয়ায় দারিদ্র্যের কষাঘাতে পড়াশোনা করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া ছিল অত্যন্ত কষ্টের। নিজের বাড়িতে পড়ার পরিবেশ না থাকায় চাচা শরাফত আলীর বাড়িতে ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছি। তবুও হাল ছাড়িনি। বাবার সঙ্গে কাজ করেছি। লেখাপড়া চালাতে টিউশনি করে টাকা জোগাড় করে পরীক্ষা দেই। পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেলেও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করি। চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘খ’ ও ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ‘খ’ ইউনিটে ৬৫৪তম ও ‘ঘ’ ইউনিটে ৬৩তম হয়ে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছি। 

তিনি বলেন, এ দীর্ঘ পথে আমাকে অনেকেই সহযোগিতা করেছেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেলেও খুব টেনশনে ছিলাম যে, টাকার অভাবে আমার কি স্বপ্ন আটকে যাবে? তবে ডিসি স্যারের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশের পর থেকে আমাকে অনেকেই ফোন করেছেন।

মুক্তারের বাবা মোশারফ হোসেন বলেন, পাথর তোলার কাজ করে ছেলেকে খুব কষ্ট করে পড়িয়েছি। স্কুলে ও কলেজে ভালো রেজাল্ট করায় ওর লেখাপড়ায় ভাটা পড়ুক তা চাইনি। অতি কষ্টের ভেতর থেকেও ছেলেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইটা ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে চান্স পাওয়ার পর তার ভর্তির টাকা জোগাড় নিয়ে খুবই দুচিন্তায় ভুগছিলাম। এ নিয়ে সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করায় রোববার রাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ফোন পাই। সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসক স্যারের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার পর আনন্দে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। এখন বুকে সাহস পাচ্ছি।

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, পাথরশ্রমিক দম্পতির মেধাবী সন্তান মুক্তারুজ্জামান মুক্তারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কথা সংবাদমাধ্যমে জানতে পারি। আসলে ছেলেটি সত্যিই এক ‘মুক্তা’।  দারিদ্র্যের কষাঘাত আর আর্থিক অসহায়ত্বে সে একটুও হাল ছাড়েনি, কঠোর পরিশ্রমে সে নিজেকে এগিয়ে নিয়েছে। দীর্ঘ কষ্টের পথ পাড়ি দিয়ে মুক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ বিভাগে চান্স পেয়েছে। বিষয়টি জানার পর তার পরিবারকে ফোন দেওয়া হয়। সোমবার দুপুরে মুক্তারুজ্জামান মুক্তারের হাতে ভর্তির জন্য অনুদান প্রদান করা হয়েছে। আশা করছি সে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, মুক্তারের মতো দারিদ্র্যের কষাঘাতে যারা থেমে যায়নি, কষ্ট সহ্য করে অনেক পথ পাড়ি দিয়েছে, মুক্তো ফলিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে, এমন মুক্তাদের তথা মুক্তারদের সন্ধান আমাদেরকে দিন। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির যাবতীয় খরচ নির্বাহ করে পাশে থেকে সন্মানিত হতে চায় পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –