• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের দিনে গোবিন্দগঞ্জ ও মহিমাগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়েছিল

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯  

দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ এবং এ দেশীয় পাকিস্তানী দালালদের সৃষ্ট  বিভীষিকাময় দিনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৭১ সালের ১২ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট দেশের অন্যান্য এলাকার মতোই এ এলাকার মানুষ সম্মিলিতভাবে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে পাক হানাদার বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে চুড়ান্ত আঘাত আসে ১১ ডিসেম্বর ভোরে। সেদিন হিলি, গাইবান্ধা, বোনারপাড়া এবং মহিমাগঞ্জ থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিমুখী আক্রমণে গোবিন্দগঞ্জের রাখালবুরুজ ইউপি আর সাঘাটার কচুয়া ইউপির ত্রিমোহিনী এলাকায় সম্মুখযুদ্ধে প্রায় দুই শতাধিক পাকসেনা নিহত হয়।

এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকসেনারা তাদের পোষাক পরিবর্তন করে লুঙ্গি ও গেঞ্জি পড়ে প্রাণভয়ে পালিয়ে যায়। ফলে চূড়ান্ত বিজয়ের চারদিন আগেই স্বাধীনতার স্বাদ পান এখানকার মুক্তিকামী মানুষ। সেদিনের এ বিজয়ের খবরে উচ্ছ্বাস আর আনন্দে ফেটে পড়েছিল গোবিন্দগঞ্জের মুক্তিকামীরা।

গাইবান্ধা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মো. এন্তাজুর রহমান জানান, সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে এখানকার ছাত্র-জনতা করতোয়া নদীর উপরের কাটাখালী সেতুটি ধ্বংস করে পাকিস্তানী বাহিনীর রসদ ও যুদ্ধাস্ত্র বহনের যাত্রাপথ ধ্বংস করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২৭ মার্চ সকালে শুরু হয় সেতু ভাঙ্গার কাজ। এ সময় রংপুরের দিক থেকে পাকবাহিনীর একটি কনভয় ছুটে আসে ব্রিজের কাছে। কনভয়টি পৌঁছেই এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। এ সময় নিরস্ত্র বাঙালি প্রাণভয়ে ছুটে পালাতে গেলে হানাদারের এলোপাতাড়ি গুলির আঘাতে শহীদ হন আব্দুল মান্নান আকন্দ, বাবলু মোহন্ত, বাবু দত্তসহ অজ্ঞাত পরিচয় এক কিশোর ও এক বৃদ্ধ। সেদিন থেকেই এ জনপদে যুদ্ধ শুরু হয়।

এরপর রেলপথ, সড়কপথ ও নদীপথের সহজলভ্যতার কারণে ভারতের আসাম প্রদেশের ‘মানকার চরে’ মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং এ যাওয়ার ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করা হয় মহিমাগঞ্জকে। এ কারণে পরবর্তীতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী মহিমাগঞ্জে দুটি ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে পাক হানাদার বাহিনী আর তাদের ও এ দেশীয় দালালদের সহায়তায় কাটাখালী সেতুর হাওয়াখানা, মহিমাগঞ্জ আলিয়া মাদরাসা এবং রংপুর চিনিকলের অতিথি ভবনে স্থাপিত ক্যাম্পে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয় এখানকারসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধরে আনা শতাধিক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষকে। মহিমাগঞ্জের তিন বিশিষ্ট ব্যক্তি শহীদ এমাদ উদ্দিন আকন্দ, আব্দুল কাদের সরকার আর আব্দুস সোবহান আকন্দকে হত্যা করা হয়।

শহীদের পরিজনরা অভিযোগ করেছেন, ২০১৫ সালের এ দিনে স্থানীয় কর্মকারপাড়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া সড়কটির নামকরণ ‘শহীদ অমূল্য কর্মকার সড়ক’ করা হলেও আজও শহীদের তালিকায় ওঠেনি তার নাম।

দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ি, সাঘাটার পর শত্রুমুক্ত হয় গোবিন্দগঞ্জ। ১১ ডিসেম্বর ভোরে হিলি, গাইবান্ধা, বোনারপাড়া ও মহিমাগঞ্জ থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিমুখী আক্রমণে প্রায় দুই শতাধিক পাকসেনা ত্রিমোহিনীঘাট এলাকায় নিহত হয়।

পরদিন ১২ ডিসেম্বর জয়বাংলা স্লোগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে বিজয় আসে এ জনপদে। স্বাধীনতাকামী গণমানুষের বিপুল হর্ষধ্বনি আর মিছিলে বিজয়ের বার্তা জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও ছাত্র-জনতা গোবিন্দগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে সমবেত হয়ে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা উত্তালন করে। স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের গর্বিত পতাকা পতাকা ওড়ে মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকল আর রেলস্টেশনসহ সর্বত্র।

চুড়ান্ত বিজয়ের চারদিন আগেই হানাদার মুক্ত হয় রংপুরের প্রবেশদ্বার গোবিন্দগঞ্জ আর মহিমাগঞ্জ। এ বিজয়ের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে শত্রুমুক্ত হয় গাইবান্ধা মহকুমা।

এদিকে ১২ ডিসেম্বর গোবিন্দগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠন দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মহিমাগঞ্জেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –