• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ঐতিহ্যবাহী দশহারার মেলা, শত শত পুণ্যার্থীদের ঢল

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১০ জুন ২০২২  

কুড়িগ্রাম জেলার কয়েকটি স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী দশহারার মেলা। অন্যান্য মেলার মত প্রায় দেড়শো বছর ধরে পালিত হয়ে আসা এই মেলাতেও বৃষ্টি উপেক্ষা করেই শত শত পুণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে এক যোগে শুরু হওয়া এ মেলা রাত ১০টা পর্যন্ত জেলা সদরের হলোখানা ইউনিয়নের সারডোবের বাংটুর ঘাট ও লক্ষ্মীকান্ত ঘাটসহ ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্বধনীরাম ও শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর পূর্বপাশে পালিত হয়েছে।

মেলায় স্নান অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ছিল দা, বটি, কাঠারি ও সব ধরনের হাতিয়ারসহ গৃহকর্মে ব্যবহৃত জিনিসপত্র।

এছাড়া উড়ুন, গাইন, লাঙ্গল, জোয়াল, ঝাপি, ডালি, কুলা, ডুলি, ঝাড়ু, হাতপাখাসহ সস্তায় কৃষি কাজে ব‍্যবহৃত দ্রব‍্যাদি ও মৃৎপাত্রের বিভিন্ন বাহারি তৈষজপত্র, বর্ষার বিভিন্ন ফল, বড়মাছের শুটকিসহ বিভিন্ন জাতের বড় মাছ, বাতাসা, মুড়ি, মিষ্টি জিলাপী, বেলুনসহ শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার সামগ্রী।

বিশেষ করে বিভিন্ন রকমারি মিষ্টি ও জিলাপির বিশাল বিশাল দোকান বসে। একদিনের এ মেলায় বিক্রেতারা প্রচুর জিলাপি বিক্রি করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এভাবেই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

ফুলবাড়ীর পূর্বধনীরামের মেলায় আগত পুরোহিত পল্লব চক্রবর্তী বলেন, দশমীতে এখানে স্নান সেরে পুণ্যার্থীরা পাপ মুক্ত হন।

স্নান করতে আসা পুণ্যার্থী শ্রী কান্ত রায় বলেন, স্নান করে পাপ মুক্ত হয়ে ভালো লাগচ্ছে। দেড়শো বছর আগে মেলার নামে মৃত শরৎ চন্দ্র রায় এক একর জমি দান করেন। শুরুতে নিজস্ব জমিতে পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হত।

বর্তমানে ধরলার ভাঙন ও গতিপথ বারবার পরিবর্তন হওয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে প্রতিবছরই এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

বড়ভিটার পূর্বধনীরাম দশহারার মেলার স্নান ও পূজা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেন্দ্র নাথ রায় জানান, বর্তমানে বিভিন্ন কারণে মেলাটি তার জৌলুস হারাতে বসেছে। নীলকমল নদে একটি ব্রিজ নির্মাণ ও রাস্তা সংস্কার করলে পুণ্যার্থীরা সহজে স্নান অনুষ্ঠানে এবং মেলার মুল জমিতে যেতে পারতো।

উল্লেখ্য, সূর্য বংশীয় রাজা দশরত দশমীতে পাপ মোচনের জন‍্য গঙ্গা নদীতে স্নান সেরে পূজা দিয়ে নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরে আসতেন।

এরই অনুকরণে বাংলা ১২৫০ সালে গঙ্গার শাখা নদী ধরলায় পাপ মোচনের জন‍্য গঙ্গা পূজা করে হিন্দুধর্মলম্বীরা দশমীতে নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরেন।

স্নান অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এখানে এদিন গীতাপাঠ, ভগবত আলোচনা, উপবাস এবং সর্বশেষ প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা এদিন বন্ধু বা সই পাতান।

এই বন্ধু বা সই পাতানো প্রক্রিয়া দেখতে খুবই মজাদার। যারা বন্ধু বা সই পাতাতে ইচ্ছুক তারা দুজনে জলে ডুবে পান-সুপারি ও পূর্ণফল বিনিময় ও মন্ত্রপাঠ করে পুরোহিত এর মাধ্যমে বন্ধু বা সই নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। সব ধর্মের লোকের আগমনে মুখরিত হয় মেলা প্রাঙ্গণ।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –