• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

`২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ব্যবসা ও শিল্প সহায়ক`

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৯ জুন ২০২২  

জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ব্যবসা ও শিল্প সহায়ক বলে মনে করছে রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আরসিসিআই)। সংগঠনটির সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু এ বাজেট কর্মসংস্থানমুখী এবং মূল্যস্ফীতি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন।

তিনি বাজেট বাস্তবায়নে দুর্নীতি প্রতিরোধ, অর্থপাচার রোধ ও প্রবৃদ্ধির সুফল যেন  সুষমভাবে বন্টন হয়, সেদিকে নজর দেয়ার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দুপুরে নতুন অর্থবছরের জন্য ৬.৭৮ লাখ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো প্রক্রিয়ায় এ কথা জানান আরসিসিআইর সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু।

প্রস্তাবিত বাজেটে ২০৪১ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট (এসডিজি) অর্জন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ব্যাপক পরিকল্পনা থাকলেও সারাদেশে প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়লেও রংপুর বিভাগে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দারিদ্র্য। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রংপুর অঞ্চলের দারিদ্র নিরসন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রংপুর বিভাগের জন্য পোশাক ও কৃষি ভিত্তিক শিল্প জোন গড়ে তোলার পাশাপাশি উন্নয়ন বৈষম্য দূরীকরণে রংপুর বিভাগের আট জেলার উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ রাখার পাশাপাশি এ বিভাগের শিল্পায়নে আলাদা ঋণ, কর ও ভ্যাট নীতি প্রণয়ন, রংপুরে প্রস্তাবিত স্পেশাল ইকোনমিক জোন ও উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নের স্বার্থে ‘‘নর্থ বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রি’’ গঠনের মত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত ছিল বলে রংপুর চেম্বার মনে করে।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, বাজেটে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রংপুর বিভাগের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নের জন্য তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা ও অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব না থাকায় রংপুর চেম্বার হতাশ। তাই রংপুর অঞ্চলের দারিদ্র্য নিরসন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রংপুর চেম্বারের প্রস্তাবগুলো সংশোধিত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি মনে করছে, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ বাজেটে মূল্যম্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে নজর বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষি খাতে রেকর্ড পরিমাণ ভর্তুকি, মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যকে স্বাভাবিক রাখতে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন সম্পন্ন করা, কর ও ভ্যাট কমিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য আর বিনিয়োগকে চাঙা করার চেষ্টার মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। এবং খাদ্য, কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা, বাজেট ঘাটতি কমানো, নতুন দারিদ্র্য ঠেকানো, দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে করপোরেট করহার হ্রাসের উদ্যোগুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ায় প্রস্তাবিত বাজেট হবে ব্যবসা ও শিল্প সহায়ক।

এছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানতে এবং উৎপাদন ব্যয় কমাতে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি, নিম্নআয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় ভর্তুকি প্রদানের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকায় অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে বলে এ বাজেটকে সময়োপযোগী মনে করছে সংগঠনটি।

প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। এ কারণে ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বৈদেশিক উৎস, অবকাঠামো তহবিল, অবকাঠামো বন্ড ও অন্যান্য আর্থিক উপাদানের ওপর জোর দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তফা সোহরাব টিটু। বেসরকারি খাত বাধাগ্রস্ত হলে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হবে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ায় উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ করদাতারা অস্বস্তিতে পড়বেন বলে মনে করছেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

প্রস্তাবিত বাজেটে স্বল্প আয়ের ব্যবসায়ীদের জন্য থোকভিত্তিক করব্যবস্থা প্রবর্তন করা, আয় অনুসারে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করে পৃথক করকাঠামো গঠন এবং আয় অনুসারে করছাড়ের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকার পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা থাকলে নতুন ও তরুণ উদ্যোক্তারা ব্যবসা ও শিল্প স্থাপনে আগ্রহী হতো বলে রংপুর চেম্বার মনে করে। তাই বিষয়টি সংশোধিত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের এই সংগঠন।

প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসি পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বৃদ্ধি করার পাশাপাশি মেড ইন বাংলাদেশ পণ্যে কর অব্যাহতি থাকায় অটোমোবাইল, থ্রি হুইলার, ফোর হুইলার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, ও হাল্কা প্রকৌশল শিল্পের বিকাশ ঘটবে বলে রংপুর চেম্বার মনে করে। এছাড়া খেলাপি ঋণ কমাতে করারোপ, সমুদ্রগামী জাহাজের আয় করমুক্ত, সব রপ্তানি খাতে একই হারে কর, পাশাপাশি কর জাল বাড়াতেও টিআইএনের (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) রিটার্ন জমা শিল্প বাধ্যতামূলক করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বহুগুণে ত্বরান্বিত হবে।

আরসিসিআই সভাপতি মোস্তফা সোহরাব বলেন, বাজেটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ অর্জনের নিমিত্তে বেসরকারি বিনিয়োগে প্রাণ ফেরানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখাসহ আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা, পন্থা, অর্থের সুষম বন্টন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক কর্মসূচি ও কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র বিমোচন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে ইতিবাচক সুফল বয়ে আনতে পারে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –