• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

নীলফামারীতে ভুট্রা খেতে চিতা বাঘের অবস্থান ঘিরে জনমনে আতঙ্ক 

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২২  

নীলফামারী সদর উপজেলার হাজীগঞ্জ এলাকায় বৈদ্যুতিক ফাঁদে একটি চিতাবাঘের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষুধার্ত বাঘটি রাতের অন্ধকারে আশিক রুদ্র পোল্ট্রি ফার্মে ঢুকতে চেষ্টা করলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। আরেকটি চিতাবাঘ লুকিয়ে আছে পার্শ্ববর্তী ভুট্টা ক্ষেতে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। তবে বাঘটি উদ্ধারে কাজ করছে রংপুর থেকে আসা বনবিভাগের একটি টিম।  

মৃত বাঘটি উদ্ধার করে বনবিভাগে হস্তান্তর করেছে পুলিশ । এদিকে জীবিত ক্ষুধার্ত বাঘটি আশেপাশে থাকায় স্থানীয়দের সর্তক করছেন স্থানীয় প্রশাসন।

জানা গেছে, দীর্ঘ ৯ বছর ধরে মুরগির খামার করে আসছেন নীলফামারী সদরের চওড়া বড়গছা ইউনিয়ন কাঞ্চনপাড়ার অলিয়ার রহমান। তার খামারে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার মুরগি। গত দেড় থেকে দুই মাস ধরে চরম বিপাকে পড়েছে মুরগি খেকো নানান প্রাণীর উৎপাতে। এসব প্রাণীর উৎপাত ঠেকাতে বিস্তীর্ণ খামার জুড়ে তারের মাধ্যমে ব্যবহার করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক ফাঁদ। আর এই ফাঁদে প্রাণ গেলো ভারত থেকে আসা একটি চিতা বাঘের।

আশিক রুদ্র প্লোট্রি ফার্মের স্বত্বাধিকারী অলিয়ার রহমান বলেন, আগে এমন হয়নি, দেড় মাস ধরে আমার খামারের কোনো মুরগির পা থাকে না কোনটার গলা ছিড়ে যায়। আবার ১৫-২০ টা করে মুরগি মারা যায়। এভাবে আমার ৬০-৭০ হাজার টাকার মুরগি মারা গেছে। পরে আমরা শিয়াল সন্দেহে কারেন্টের জিআই তার দিয়ে বেড়া দেই। আজকে এখানে দুইটা বাঘ আসছিলো। একটা মারা গেছে, তখন আরেকটা বাঘ অনেক চিল্লাচিল্লি করে পাশের ভুট্রা খেতে ঢুকছিলো।

পার্শ্ববর্তী ভুট্টা খেতের কৃষক গোলাম মোস্তফা বলেন, এই খামারের পাশের ভুট্টাখেতটি আমার। সকালে জানতে পারি অলিয়ার ভাইয়ের খামারের বিদ্যুতের ফাঁদে জড়িয়ে একটি বাঘ মারা গেছে। আর একটি বাঘ আমার ভুট্টা খেতে আছে। তখন থেকে এখানে আছি।

স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউর করিম বলেন, আমরা তো রাত বিরাতে বাইরে কাজে থাকি, না জানি কখন বাঘ আক্রমণ করে বসে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

বাঘ দেখতে আসা আরফিনা বেগম বলেন, বাঘ মরার কথা শুনে এসে দেখি, বাঘটাকে রাস্তায় ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছে। ভয়ও কাজ করছে। আরেকটা বাঘ আছে, কখন এলাকার মানুষের ওপর আক্রমণ করে।

চওড়া ইউপির চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বিঠু বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে মসজিদে মাইকিং করে এলাকাবাসীদের সর্তক করছি। ক্ষুধার্ত বাঘটি যাতে কারো ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন নাহার বলেন, সকালে জানতে পারি, দুটি বাঘের সন্ধান পাওয়া গেছে। একটি বাঘ বৈদ্যুতিক ফাঁদে মারা গেছে। আরেকটা পার্শ্ববর্তী ভুট্টা খেতে আছে। সেটিকে উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এখানকার মানুষজনকে অনুরোধ করব, অতি উৎসাহী না হয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখি। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জানতে পারি মৃত বাঘটি ছিল সেটিকে পরীক্ষা করে জানা গেছে বাঘটি ক্ষুধার্ত ছিল। তারা ধারণা করছেন সঙ্গী বাঘটিও ক্ষুধার্ত, এজন্য সকলকে অনুরোধ করবো এ স্থান ত্যাগ করতে।

বন্যপ্রাণি ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা স্মৃতি রায় সিংহ জানান, লোকবল সংকট থাকায় প্রাথমিকভাবে খাঁচা তৈরি করে বাঘটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। বাঘটিকে পর্যবেক্ষণে রাখার পর গতিপথ পরিবর্তন করে গন্তব্যে ফিরে না গেলে ঢাকা থেকে টিম নিয়ে এসে চেতনানাশক দিয়ে অবশ করে ধরা হবে। আর ময়নাতদন্তের পর রির্পোট অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ 

তবে এলাকাবাসীকে সতর্ক রাখতে গ্রামে চলছে মাইকিং, তাছাড়া খামারটির আশেপাশে লাল ঝান্ডি দিয়ে ঘেরাও করা হয়েছে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –