• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ঠাকুরগাঁওয়ে ছেলের ঘর দেখে মরতে চান বৃদ্ধা ফজিলা 

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২২  

দুই মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর ছেলেকে নিয়ে ভালোই চলছিল বৃদ্ধা ফজিলার সংসার। তবে বিধি বাম। সেই ভালো থাকাটা বেশি দিন ভাগ্যে জোটেনি তার। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় সংসারে শুরু হয় অশান্তি। স্বামী মারা যাওয়ার পর জানতে পারেন, ভিটেমাটি দলিল করে দিয়েছেন দ্বিতীয় সংসারের সন্তানদের। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে চলে আসেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের পটুয়া ফকদনপুর গ্রামে ভাইয়ের বাড়িতে। সেখানেই কোনো রকমে মাথা গোঁজার একটু জায়গা করে নিয়েছেন। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ একটি ঘরের সামনে চালা পড়ে আছে। চারদিকের বেড়া ভাঙা, বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে ভেতরের সব কিছু। ঘরের ভেতরে একটি চৌকি, নেই বিদ্যুতের আলো। খড়ি, হাড়ি-পাতিল আর কিছু পুরোনো কাপড় চোপড় নিয়ে ছেলেসহ এক ঘরে থাকেন। ছেলেকে চৌকিতে দিয়ে ফজিলা থাকেন মেঝেতে। 

ছেলে কাজ করেন অন্যের বাড়িতে। যা আয় করেন তা দিয়ে মায়ের ওষুধ আর দুই বেলার খাবার খেতে চলে যায়। এদিকে জমি খালি করে দেওয়ার জন্য মামার কাছ থেকে শুনতে হয় কটু কথা।

প্রতিবেশী পারভেজ হাসান বলেন, ফজিলা আপা অনেক কষ্ট করে ভাঙা ঘরে থাকেন। ঘরে বিবাহ উপযুক্ত ছেলে থাকলেও বাধ্য হয়ে এক ঘরে থাকেন। ইসলামের দৃষ্টিতে বিষয়টি খারাপ হলেও কিছুই করার নেই। যদি সরকারের পক্ষ থেকে তাকে ঘর করে দেওয়া হয়, তাহলে সন্তান নিয়ে ভালোভাবে বসবাস করতে পারবেন। 

প্রতিবেশী নাজিমা বেগম বলেন, মানুষ পরিস্থিতির শিকার না হলে এভাবে দিন কাটাতে পারে না। ভাঙা ঘরে সব কিছু নিয়ে তাকে থাকতে হচ্ছে। ভালোভাবে ঘুমাতে পারেন না। শীত-বৃষ্টিতে অনেক কষ্ট করেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা উচিত। 

স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন শরীফ আহমেদ বলেন, ফজিলা সম্পর্কে প্রতিবেশী বোন হন। তার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়েছিল। স্বামীর ভিটেমাটি ছাড়া আলাদা কিছু ছিল না। সেটাও দ্বিতীয় সংসারের সন্তানদের নামে লিখে দিয়ে মারা গেছেন। এখন ভাইয়ের অল্প জমিতে ছেলেসহ অনেক কষ্টে আছে।  

বিধবা ফজিলা খাতুন বলেন, প্রথমে সংসারটা ভালোই চলছিল। স্বামীডা পরে আরেকখান বিহা করিল। তারপর থেকে কুটকাচাল আর অশান্তি। স্বামীডা মারা যাবার পরে শুননো থাকার জমিখান সতীনের বেটাক লিখে দিছে। তখন আর থাকা হইলনি। ভাইয়ের জায়গাত আছি। ভাইও চলে যাবা কহেচে। তার জমিত থাকিবা দিবেনি। এলা কি করিম? 

তিনি আরও বলেন, মুই নিজেই অসুস্থ। কখনও যে মরে যাও। ছোয়াডার একটা ঘর হইলে বিহা করিবা পারলেহে। মোর ছোয়াডাক দেখিবার মতো কেউ নাই। মরার আগে কি থাকিবা পারিম ছোয়াডাক লেহেনে একটা ঘরত। সরকারি ঘর দিবা চাহেচে কিন্তু টাকা চাহেচে মেলা। এত টাকা মুই কোনঠে পাম। মোক সরকার যদি একটা ঘর দিলেহে তাহলে থাকিবা পারিনিহু ভালাে করে। 

রহিমানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হান্নান (হান্নু) বলেন, ফজিলা খাতুনের স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করার পর থেকে তাকে পাশবিক নির্যাতন করতেন। সে বর্তমানে আমার ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ফকদনপুর গ্রামে ভাইয়ের জমিতে থাকছেন। তার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন প্রশাসনকে জানানো হবে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান বলেন, ফজিলা খাতুনের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ওই বৃদ্ধা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরেজমিনে গিয়ে আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব। তিনি গৃহহীন হয়ে থাকলে আমরা তাকে মুজিববর্ষের ঘর উপহার দেব।
সুত্র-ঢাকাপোস্ট।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –