• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

‘সহকারী কাজির কারণে বাড়ছে বাল্যবিয়ে’

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৫ মার্চ ২০২২  

ইউনিয়ন পর্যায়ে একজন কাজি থাকার কথা থাকলেও আছেন তিন থেকে চারজন। আবার তাদের রয়েছে সহকারী কাজি—পাঁচ থেকে সাতজন। এজন্য দিন দিন হু হু করে বাড়ছে বাল্যবিয়ে। বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে দরিদ্রতা ধরা হলেও জনসচেতনতার অভাবকে দায়ী করা হচ্ছে। আবার সহকারী কাজিরা অর্থের লোভে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিবন্ধন করাচ্ছেন বাল্যবিয়ে।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) দুপুরে নীলফামারী সদর উপজেলা হলরুমে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধবিষয়ক সমন্বয় সভায় বক্তারা এসব কথা তুলে ধরেন। সামাজিক ক্ষমতায়ন ও সুরক্ষা কর্মসূচির (সেল্প) সহযোগিতায় সভায় সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন নাহার।

এসময় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আহমদ আহসান হাবীব, ব্র্যাকের জেলা সমন্বয়কারী আকতারুল ইসলাম, জেলা ব্যবস্থাপক মাইকেল বাক্সে, সামাজিক ক্ষমতায়ন ও সুরক্ষা কর্মসূচির কর্মকর্তা আবু তাহেরসহ বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তা এবং সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও নিকাহ রেজিস্ট্রার উপস্থিত ছিলেন।

সভায় পল্লীশ্রীর প্রকল্প সমন্বয়কারী তাইবাতুন নাহার বলেন, ‘সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের একই পরিবারের পাঁচ ভাই নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাজ করেন। তাদের কেউ পরিচয় দেন না কে আসল আর কে নকল। এভাবে অন্যান্য ইউনিয়নেও দেখা যায় বেশ কয়েকজন কাজি। প্রয়োজনের তুলনায় সহকারী কাজিরা বেশি থাকায় দিনদিন বাল্যবিয়ের হার বাড়ছে।’

নীলফামারী পৌর এলাকার নিকাহ রেজিস্ট্রার আব্দুল আজিজ বলেন, ‘সব কাজির একজন করে সহকারী আছেন। এমনও দেখা গেছে একটি ইউনিয়নে একজন কাজি থাকার কথা থাকলেও বেশ কয়েকজন কাজি আছেন। অনেকেই বেশি টাকার লোভে বাল্যবিয়ে কিংবা নানান ধরনের ঝামেলা পাকিয়ে রাখছেন। ফলে পরবর্তী সময়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে অনেককে।’

বাল্যবিয়ের কারণে বিভিন্ন জায়গায় সংসারে কলহ লেগে আছে জানিয়ে ব্র্যাকের জেলা সমন্বয়কারী আকতারুল ইসলাম ইসলাম বলেন, ‘আমাদের লিগ্যাল এইডে এই উপজেলা (সদর) থেকে ১১৮২টি অভিযোগ এসেছে। এরমধ্যে মীমংসা হয়েছে ৫৬১টি। বাল্যবিয়ের কারণে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন অনেকে। পরবর্তী সময়ে সংসারে কলহ বাড়ছে।’

ইউপি চেয়ারম্যানদের পরামর্শ দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা পৌরসভায় কাজি অফিস করা দরকার। তাহলে সাধারণ মানুষ চিনতে পারবে আসল কাজিকে। বর্তমানে কাজিরা নিজ বাড়িতে কিংবা অন্যান্য জায়গায় অফিস দেওয়ায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত হচ্ছেন। ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় কাজি অফিস থাকলে সবসময় চেয়ারম্যানরা তদারকি করতে পারবেন। এতে বাল্যবিয়ে কিংবা বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা কমে যাবে।’

ইউএনও জেসমিন নাহার বলেন, ‘আমি (এই উপজেলায়) আসার পর থেকে লক্ষ্য করছি এ অঞ্চলে বাল্যবিয়ের হার অনেক বেশি। বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার এলেই শোনা যায় কোথাও না কোথাও বাল্যবিয়ে হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে আমরা তৎপর আছি।’

বাল্যবিয়ের জন্য জনসচেতনতার অভাবকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘জনসচেনতা বাড়াতে উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। আমি আশা করছি অন্যান্য সংস্থাগুলোও বাল্যবিয়ে রোধে জনসচেনতা বাড়াতে কাজ করবে। অহেতুক কোনো কাজি বাল্যবিয়ে পড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেবে উপজেলা প্রশাসন।’

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –