• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

শিশুর নাম নির্বাচনে ইসলামী দৃষ্টিকোণ

লালমনিরহাট বার্তা

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০১৮  

শিশু জন্মলাভের পর তার একটি সুন্দর ইসলাম সম্মত নাম রাখা প্রত্যেক মুসলিম পিতা-মাতার কর্তব্য। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানদের মত বাংলাদেশের মুসলমানরাও ইসলামী সংস্কৃতি ও মুসলিম ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে শিশুর নাম নির্বাচন করতে আগ্রহ পোষণ করেন। এজন্য তাঁরা নবজাতকের নাম নির্বাচনে পরিচিত ইসলামী ব্যক্তিত্বদের শরণাপন্ন হন। তবে সত্যি হল দ্বীনের অন্যান্য মৌলিক বিষয়ের মত এ বিষয়েও আমাদের জ্ঞান খুবই অপ্রতুল।

একারণে ইসলাম সম্মত নাম রাখার আগ্রহ থাকার পরও অজ্ঞতাবশত কখনো আমরা এমনসব নাম নির্বাচন করে ফেলি যেগুলো আদৌ ইসলাম সম্মত নয়। কখনো আবার এই বলে অস্বীকারও করে বসি যে “নামের কোন ধর্ম হয় না, ইসলামিক নাম বলে কিছু নেই”। ইসলাম তো নির্দিষ্ট করে কিছু নাম ধরিয়ে দিয়ে বলে দেয়নি যে এগুলো ইসলামিক নাম। বরং ইসলাম কিছু নীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছে যে মুসলমানদের নাম কেমন হবে আর কেমন হবে না।

শব্দটি আরবী অথবা কুরআনের শব্দ হলেই ইসলামী নাম হিসেবে উপযুক্ত হবে তাতো নয়। কুরআনে তো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কাফেরদের নামও উল্লেখ আছে। ইবলিস, ফেরাউন, হামান, কারুন, আবু লাহাব ইত্যাদি নাম তো কুরআনে উল্লেখ আছে; তাই বলে কী এসব নামে নাম বা উপনাম রাখা সমীচীন হবে!? অথবা নামের কোনো ধর্ম নেই বলে যদি এমন কোনো নাম রাখা হয়, যা শিরক ও কুফরের অর্থবাহী হয় তাহলে তা কি জায়িয হবে? নয়তো এমন কোনো নাম রাখা হল যার কোনই অর্থবাচকতা নেই, তাহলে সেটাই বা কতটুকু ঠিক হল? একজন মুসলমানের যেকোনো কিছুই তো উদ্দেশ্যহীন বা নিরর্থক হওয়া শরীয়তের মাকাসেদের পরিপন্থী।    

ব্যক্তির নাম তার স্বভাব চরিত্রের উপর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে।

শাইখ বকর আবু যায়েদ বলেন, “ঘটনাক্রমে দেখা যায় ব্যক্তির নামের সাথে তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের মিল থাকে। এটাই আল্লাহর তা‘আলার হেকমতের দাবী। যে ব্যক্তির নামের অর্থে চপলতা রয়েছে তার চরিত্রেও চপলতা পাওয়া যায়। যার নামের মধ্যে গাম্ভীর্যতা আছে তার চরিত্রে গাম্ভীর্যতা পাওয়া যায়। খারাপ নামের অধিকারী লোকের চরিত্রও সাধারণত খারাপ হয়ে থাকে। ভাল নামের অধিকারী ব্যক্তির চরিত্রও সাধারণত ভাল হয়ে থাকে।” (তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ১/১০ ও তুহফাতুল মাওদুদ লি-ইবনিল কায়্যিম, পৃষ্ঠা-১/১২১)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারো ভাল নাম শুনে আশাবাদী হতেন। হুদাইবিয়ার সন্ধিকালে মুসলিম ও কাফের দুইপক্ষের মধ্যে টানাপোড়নের এক পর্যায়ে আলোচনার জন্য কাফেরদের প্রতিনিধি হয়ে সুহাইল ইবনে আমর নামে এক ব্যক্তি এগিয়ে এলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুহাইল নামে আশাবাদী হয়ে বলেন:

“সুহাইল তোমাদের জন্য সহজ করে দিতে এসেছেন।”(আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং- ৯১৫ সহিহ)  

সুহাইল শব্দটি সাহলুন (সহজ) শব্দের ক্ষুদ্রতানির্দেশক রূপ। যার অর্থ হচ্ছে- অতিশয় সহজকারী।

বিভিন্ন কবিলার ভাল অর্থবোধক নামে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশাবাদী হওয়ার নজির আছে। তিনি বলেছেন:

“গিফার (ক্ষমা করা) কবিলা তথা গোত্রের লোকদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিন। আসলাম (আত্মসমর্পণকারী/শান্তিময়) কবিলা বা গোত্রের লোকদেরকে আল্লাহ শান্তি দিন।” (বুখারী, হাদিস নং- ৯৫১; মুসলিম, হাদিস নং- ১০৯৬)

নিম্নে আমরা নবজাতক শিশুর নাম রাখার ক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য কিছু নীতিমালা তুলে ধরব:

এক. নবজাতকের নাম রাখার সময়কালের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনটি বর্ণনা রয়েছে। শিশুর জন্মের পরপরই তার নাম রাখা। শিশুর জন্মের তৃতীয় দিন তার নাম রাখা। শিশুর জন্মের সপ্তম দিন তার নাম রাখা। এর থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম এ বিষয়ে মুসলিমদেরকে অবকাশ দিয়েছে। যে কোনোটির উপর আমল করা যেতে পারে। (তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ১/১০)

এমনকি কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা কোনো কোনো নবীর নাম তাঁদের জন্মের পূর্বে রেখেছেন মর্মে উল্লেখ আছে। (সূরা আলে ইমরানে- ৩৯)

দুই. আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম নাম হচ্ছে ‘আব্দুল্লাহ’ ও ‘আব্দুর রহমান’। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন -

إِنَّ أَحَبَّ أَسْمَائِكُمْ إِلَى اللَّهِ عَبْدُ اللَّهِ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ

অর্থ-“তোমাদের নামসমূহের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে- আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ও আব্দুর রহমান (রহমানের বান্দা)।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং- ৩৯৭৫)

এ নামদ্বয় আল্লাহর প্রিয় হওয়ার কারণ হল- এ নামদ্বয়ে আল্লাহর দাসত্বের স্বীকৃতি রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর দুটি নাম এ নামদ্বয়ের সাথে সম্বন্ধিত আছে। একই কারণে আল্লাহর অন্যান্য নামের সাথে আরবী ‘আব্দ’ (বান্দা বা দাস) শব্দটিকে সমন্ধিত করে নাম রাখাও উত্তম। (হাশিয়া ইবনে আবেদিন, পৃষ্ঠা- ৫/২৬৮)

অজ্ঞতাবশত যারা নামের সাথে ধর্মের সংশ্লিষ্টতাকে অস্বীকার করেন, তারা প্রমাণ(!) স্বরূপ এমনও দাবি করেন যে, ‘আব্দুল্লাহ নামটি সব থেকে বেশি সহী ইসলামী নাম। আব্দুল্লাহ ছিলেন নবীজির পিতা যিনি নবীজির জন্মেরও আগে মারা যান। খেয়াল রাখতে হবে, আব্দুল্লাহ পৌত্তলিক হিসেবেই মারা যান। আব্দুল্লাহ নামের অর্থ আল্লাহর দাস। কিন্তু কোন আল্লাহ্‌র দাস? তখনও ইসলামের জন্মও হয়নি এবং ইসলামের প্রচারকেরও জন্ম হয়নি। ইসলামের পূর্ববর্তী ইহুদী-খৃষ্টান ধর্মেও আল্লাহ বলে কোনো শব্দ-ই নেই। এই আল্লাহ্‌ সেই প্যাগানদের মধ্যে প্রচলিত আল্লাহ্‌ নামের দেবতা যে লাত, মানাত ও উজ্জাতের পিতা।” 

এ কথা বলে তারা ইসলামী নামের স্বাতন্ত্র্যকেই নাকচ করতে চান। তাদের এ কথা নিঃসন্দেহে ইসলাম সম্বন্ধে চরম অজ্ঞতারই বহিরপ্রকাশ।

পবিত্র কোরআন এ কথার সাক্ষ্য বহন করে যে, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পরে যত নবী রাসূল এসেছেন, তাঁরা সবাই তাঁরই পবিত্র বংশধর থেকেই এসেছেন। সব রাসূল এমনকি আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও পূর্বে ইবরাহীম (আঃ)-এর দ্বীনের (একেশ্বরবাদ) অনুসারী ছিলেন। যেমন দেখুন, পবিত্র কোরআনের আয়াত–ثُمَّ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ ‘অতঃপর আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছি যে, ইব্রাহীমের দ্বীন অনুসরণ করুন, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন এবং শিরককারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।’ (সূরা নাহল-১২৩)

ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (রহ.) তার তাফসীরে কাবির গ্রন্থে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মা-বাবা মুশরিক বা পৌত্তলিক ছিলেন না। তাঁরা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করতেন এবং হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ‘দ্বীনে হানিফ’-এর ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁরা মূর্তিপূজা করেছেন মর্মে কোনো প্রমাণ নেই। তাঁদের নামও প্রমাণ করে তারা মুশরিক ছিলেন না।

আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী (রহ.) এ বিষয়ে আলাদা ৪টি পুস্তিকা লিখেছেন। ৯টি প্রবন্ধ লিখেছেন। যাতে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিতা মাতা জান্নাতী। জাহান্নামী নয়। তাঁরা মুশরিক বা পৌত্তলিক ছিলেন না। তাঁরা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করতেন। অতএব, নবীজির পিতার নাম যে আবদুল্লাহ- আল্লাহর বান্দা, এই আল্লাহ কোনো প্যাগান ধর্মীয় বিশ্বাসের লাত, উযযা ও মানাতের পিতা নন। আর এ কথা তো কুরআন ও হাদিসের কোনো স্থানেই আসেনি যে আল্লাহ নামে লাত উযযা মানাতের কোনো পিতা ছিল – অথচ লাত, উযযা, মানাতের কথা কুরআনে এসেছে যে পৌত্তলিকেরা এ সকল কাল্পনিক দেবতাদেরকে আল্লাহর কাছে কেবল সুপারিশকারী মনে করতো।

তিন. যে কোনো নবীর নামে নাম রাখা ভাল। যেহেতু তাঁরা আল্লাহর মনোনীত বান্দা। (কাশ্‌শাফুল কিনা, পৃষ্ঠা- ৩/২৬ ও তুহফাতুল মাওদুদ, পৃষ্ঠা- ১০০)

হাদিসে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

“তোমরা আমার নামে নাম রাখ। আমার কুনিয়াতে (উপনামে) কুনিয়ত রেখো না।” (বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং- ৮৩৭)  

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কুনিয়ত ছিল- আবুল কাসেম। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের সন্তানের নাম রেখেছিলেন ইব্রাহিম। কুরআনে কারীমে ২৫ জন নবী-রাসূলের নাম বর্ণিত আছে মর্মে আলেমগণ উল্লেখ করেছেন। এর থেকে পছন্দমত যে কোনো নাম নবজাতকের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। (আল-ইতকান ফি উলুমিল কুরআন পৃষ্ঠা-২/ ৩২৪)

চার. নেককার ব্যক্তিদের নামে নাম রাখাও উত্তম। এর ফলে সংশ্লিষ্ট নামের অধিকারী ব্যক্তির স্বভাবচরিত্র নবজাতকের মাঝে প্রভাব ফেলার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায়। এ ধরনের আশাবাদ ইসলামে বৈধ। এটাকে তাফাউল (تَفَاؤُلٌ) বলা হয়। নেককার ব্যক্তিদের শীর্ষস্থানে রয়েছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবায়ে কেরাম। তারপর তাবেয়ীন। তারপর তাবে-তাবেয়ীন। এরপর আলেম সমাজ। (তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ১/১৬)

পাঁচ. আমাদের দেশে শিশুর জন্মের পর নাম রাখা নিয়ে আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা দেখা যায়। দাদা এক নাম রাখলে নানা অন্য একটা নাম পছন্দ করেন। বাবা-মা শিশুকে এক নামে ডাকে। খালারা বা ফুফুরা আবার ভিন্ন নামে ডাকে। এভাবে একটা বিড়ম্বনা প্রায়শঃ দেখা যায়। এ ব্যাপারে শাইখ বাকর আবু যায়দ বলেন, “নাম রাখা নিয়ে পিতা-মাতার মাঝে বিরোধ দেখা দিলে শিশুর পিতাই নাম রাখার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।

“তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।” (সূরা আহযাব ৩৩:৫)

শিশুর পিতার অনুমোদন সাপেক্ষে আত্মীয়স্বজন বা অপর কোনো ব্যক্তি শিশুর নাম রাখতে পারেন। তবে যে নামটি শিশুর জন্য পছন্দ করা হয় সে নামে শিশুকে ডাকা উচিত। আর বিরোধ দেখা দিলে পিতাই পাবেন অগ্রাধিকার। (তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ১/১২)

ছয়. কোনো ব্যক্তির প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য তাকে তার সন্তানের নাম দিয়ে গঠিত কুনিয়ত বা উপনামে ডাকা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বড় সন্তানের নামের পূর্বে আবু বা পিতা শব্দটি সম্বন্ধিত করে কুনিয়ত রাখা উত্তম। যেমন- কারো বড় ছেলের নাম যদি হয় “উমর” তার কুনিয়ত হবে আবু উমর (উমরের পিতা)। এক্ষেত্রে বড় সন্তানের নাম নির্বাচন করার উদাহরণ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমল থেকে পাওয়া যায়। এক সাহাবীর কুনিয়াত ছিল আবুল হাকাম। যেহেতু হাকাম আল্লাহর খাস নাম তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পরিবর্তন করে দিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: তোমার ছেলে নেই? সাহাবী বললেন: শুরাইহ, মুসলিম ও আব্দুল্লাহ। তিনি বললেন: এদের মধ্যে বড় কে? সাহাবী বললেন: শুরাইহ। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার নাম হবে: আবু শুরাইহ।” (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং- ৮১১)

সাত. যদি কারো নাম ইসলামসম্মত না হয়; বরঞ্চ ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ এমন নাম হয় তাহলে এমন নাম পরিবর্তন করা উচিত। (ইআনাতুল মুসতাফিদ বি শারহি কিতাবিত তাওহিদ, পৃষ্ঠা- ২/১৮৫)

যেমন- ইতিপূর্বে উল্লেখিত হাদিস হতে আমরা জানতে পেরেছি একজন সাহাবীর সাথে ‘হাকাম’ শব্দটি সংশ্লিষ্ট হয়েছিল, কিন্তু হাকাম আল্লাহর খাস নামসমূহের একটি; তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পরিবর্তন করে দিয়ে তাঁর নাম রেখেছেন আবু শুরাইহ।(আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং- ৮১১)

মহিলা সাহাবী যয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহা এর নাম ছিল বার্‌রা (بَرَّةٌ -পূর্ণবতী)। তা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন তুমি কি আত্মস্তুতি করছ? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নামও পরিবর্তন করে ‘যয়নব’ রাখলেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৩৭৩২)

আট. সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশে বাংলা শব্দে নাম রাখার প্রবণতা দেখা যায়। ইসলামী নীতিমালা লঙ্ঘিত না হলে এবং এতদঅঞ্চলের মুসলিমদের ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে এমন নাম রাখাতে দোষের কিছু নেই। ‘আল-মাউসু‘আ আলফিকহিয়া কুয়েতিয়া’ তথা ‘কুয়েতস্থ ফিকহ বিষয়ক বিশ্বকোষ’ গ্রন্থে বলা হয়েছে- “নাম রাখার মূলনীতি হচ্ছে- নবজাতকের যে কোনো নাম রাখা জায়েয; যদি না শরিয়তে এ বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকে।”(আল-মাউসুআ আলফিকহিয়া আলকুয়েতিয়া, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা- ৩৩১)

কিন্তু অনন্ত, চিরঞ্জীব, মৃত্যুঞ্জয় এ অর্থবোধক নাম কোনো ভাষাতেই রাখা কোনো অবস্থায় জায়েয নয়। কারণ নশ্বর সৃষ্টিকে অবিনশ্বর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর গুণাবলীতে ভূষিত করা জায়েয নেই।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –