• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

লালমনিরহাটে মৃৎ শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারী ভাতা চায় শিল্পীরা

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০১৯  

প্রায় ৬৭ বছরের শ্রীমতি পঞ্চমী পাল। খুব অল্প বয়সে মৃৎ শিল্পী শ্রী অমূল্য চন্দ্র পালের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর পেশাকেই আপন করে নিয়েছিলেন পঞ্চমী পাল। মৃৎ শিল্পের বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরিতে সাহায্য করে এসেছেন। তখন তাদের বাড়ি থেকেই মাটির জিনিসপত্র কেনাবেচা হতো। 

কালের পরিবর্তনে প্লাস্টিক ও সিমেন্টের তৈরি আধুনিক জিনিসপত্রের কারণে এবং সরকারিভাবে কোনো সহযোগীতা না পাওয়ায় তাদের পূর্ব পুরুষের এ শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাই মাটির জিনিসপত্র এখন চলে না।

এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের আদিতমারীর দুর্গাপুর ইউপির ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা দিঘলটারী গ্রামের কুমারটারীর বাসিন্দা শ্রীমতী পঞ্চমী রানী পাল। তিনি আরো জানান, তার যখন বিয়ে হয় তখন তাদের সংসারে কোন অভাব ছিল না। বিয়ের ছয় বছরের মধ্যেই তাদের ঘরে দুই ছেলে সন্তান আসে। সংসারে অভাবের কারণে বড় ছেলে সন্তোষ চন্দ্র পাল রংপুরে লেবারের কাজ করে আর ছোট ছেলে প্রশান্ত চন্দ্র পাল তার পূর্ব পুরুষের এই ব্যবসাকে ধরে রেখেছে। 

তিনি জানান, তাদের মাটির জিনিসপত্রের এই ব্যবসা আগের মতো আর চলে না। আগে মাটির হাড়িতেই ভাত রান্না হতো। মাটির প্লেটে খাওয়া দাওয়া,  মাটির গ্লাসে পানি খাওয়া হতো। কিন্তু এখন আর ওসব কিছুই চোখে পড়ে না। 

পাশের বাড়ির পঞ্চাশোর্ধ বিধবা উর্মিলা বালা পাল বলেন, তিন মেয়ে ও এক সন্তানের সংসারে একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি ছিলেন তার স্বামী। ফেরি করে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে মাটির বাঘ, সিংহ, হরিণ, ঘোড়া, টব, মাটির ব্যাংকসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করতেন। সারাদিন বিক্রি করে যে আয় হতো তার একটি অংশ মাটির কেনার জন্য রেখে সংসার চালাতে হতো। এই কষ্টের মধ্যেই তিন মেয়েকে বিয়ে দেই। ছেলে বড় হওয়ায় সে তার বাবাকে সহযোগীতা করতে থাকে। কখনো তার বাবাকে আবার কখনো অন্যের জমিতে কৃষি কাজ সংসারে সহযোগীতা করতো। দুই বছর আগে ছেলেরও বিয়ে হয়। 

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার স্বামী মারা গেলে তিনিও ভেঙে পড়েন। চিকিৎসার অভাবে শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধতে থাকে। চোখেও ঠিক মতো দেখতে পান না। তাই আগের মতো মাটির জিনিসপত্রও বানাতে পারেন না। ছেলে ও ছেলের বউ অন্যের কাজ করার পর যতটুক সময় পায় ওই সময়েই মাটির কিছু খেলনা তৈরি করেন। পরে সেগুলো পুড়িয়ে কাধেঁ করে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন তিনি। এভাবেই তার সংসার চলছে। তবে সরকারি কোন সাহায্য বা সহযোগীতা এখন পর্যন্ত পাননি বলেও জানান তিনি।

কুমারটারীর অমূল্য চন্দ্র পাল বলেন, জন্মের পর থেকেই দেখছি তার বাপ দাদারা এ ব্যবসা করেছেন। পাল বংশের এই কুমারটারীতে ২৭ পরিবার এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। অল্প বয়সেই আমিও বাবার ব্যবসার দায়িত্ব নেই।

তিনি বলেন, চাহিদা থাকায় এক সময় তাদের ৫১ প্রকার মাটির জিনিসপত্র বাড়ি থেকেই অনেকে কিনে নিতেন। কালের পরিবর্তনে তাও প্রায় বিলুপ্তির পথে। আগের মতো এ ব্যবসা আর চলে না। তাই সংসার চালাতে এই পাল বংশের অনেকেই অন্যের জমি চাষ এবং রিকশা-ভ্যান চালাতে হচ্ছে। শুধু তাই না এসব মাটির জিনিসের জন্য এখন উপযুক্ত মাটিও পাওয়া যায় না। 

তিনি আরো বলেন, আমরা পাল বংশের মানুষ গুলো বরাবরেই সরকারী সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছি। অথচ ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা আমাদের সরকারি সাহায্য এনে দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর আর আমাদের কথা মনে রাখে না।

দুর্গাপুর ইউপির চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামান প্রামাণিক ছালেক বলেন, কুমার পল্লীর ২৭ পরিবারের সবার নামের তালিকা করে সরকারের বিভিন্ন দফতরে পাঠানো হয়েছে। এরইমধ্যে সেখানকার কয়েকজনকে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –