• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

লালমনিরহাটে এবার শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

আদালতে দায়ের হওয়া বাদী সৈয়দ সূফী মোঃ তাহেরুল ইসলামের নালিশি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত লালমনিরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মুল বেদি না সড়ানো এবং শহীদ মিনারের পুনঃনির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে লালমনিরহাটের সিনিয়র সহকারী জজ (সদর) আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোছাঃ সুরাইয়া বেগম।  বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি এই আদেশ দেন। 

এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পিগোষ্ঠী লালমনিরহাট জেলা সংসদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন লালমনিরহাট জেলা সংসদ, লালমনিরহাট সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, নীলাঞ্জন সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে লালমনিরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মুল বেদি না সড়ানো এবং নকশা বহির্ভুত এক কোণে পুনঃনির্মাণাধীন শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, উদীচী শিল্পিগোষ্ঠীর সভাপতি অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান হাফিজ, সহ-সভাপতি ডাঃ আশিক ইকবাল মিলন, কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মধুসূদন রায়, লালমনিরহাট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক সৈয়দ সূফী মোঃ তাহেরুল ইসলাম, নীলাঞ্জন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়কারী রাজুপ ভুঁইয়া, সাপ্তাহিক আলোর মনি’র সম্পাদক মাসুদ রানা রাশেদ, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহিমা রঞ্জন রায় হৃদয় প্রমূখ।   

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক লালমনিরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে। এই রায় বাস্তবায়ন না করা হলে শেষ রক্ত বিন্দু থাকা পর্যন্ত আমরা লড়াই চলবে শহীদ মিনার নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত। প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন সুমন খানকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার চক্রান্ত বন্ধ করে নির্মাণাধীন শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে জনগণের দাবীকে সম্মান দিয়ে আগের অবস্থায় এবং জায়গায় শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে।’

এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাদী সৈয়দ সূফী মোঃ তাহেরুল ইসলামের এক নালিশি অভিযোগে লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টুকে ১০ দিনের মধ্যে জবাব দাখিলের নির্দেশ প্রদান করে শোকজ করে একই আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোছাঃ সুরাইয়া বেগম।  ২০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে সরাসরি যোগাযোগ করলে লালমনিরহাট সিনিয়র সহকারী জজ (সদর) আদালতের নাজির মোঃ নুরুজ্জামান শহীদ মিনার ও মুল বেদি না সড়ানো এবং পুনঃনির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার বিষয়ে স্থিতাবস্থা আদেশ দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।

লালমনিরহাটের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার নালিশি আবেদনের শুনানি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত লালমনিরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ চেয়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) বিজ্ঞা আদালতে আবেদন করলে শহীদ মিনার ও মুল বেদি না সড়ানো এবং পুনঃনির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার বিষয়ে বিজ্ঞ আদালত স্থিতাবস্থা আদেশ দেন।     

এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) লালমনিরহাট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক সৈয়দ সূফী মোঃ তাহেরুল ইসলাম উক্ত আদালতে দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৯ আদেশের ১নং নিয়ম মতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার নালিশী আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত গত ১৮ ফেব্রæয়ারি (মঙ্গলবার) লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টুকে শোকজ করেন। 

বিজ্ঞ আদালতের আদেশে বলা হয়, ‘বাদীর নালিশি অভিযোগের শুনানি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টুকে ‘স্ট্যাটাস কো’ স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নিদের্শ দেওয়া হলো।’   

বাদীর আইনজীবী ও লালমনিরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, ‘বাদীর নালিশি অভিযোগে লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়ারকে শোকজ নোটিশের পর এবার অপর একটি অভিযোগে লালমনিরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মুল বেদি না সড়ানো এবং পুনঃনির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য মেয়রকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়ে আদেশ দিয়েছেন। আমরা চাই যেন কোনো পক্ষই আদালত অবমাননা না করে।’

লালমনিরহাট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিচালক ও মামলার বাদী সৈয়দ সূফী মোঃ তাহেরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে মামলা দায়ের করেছি। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার শুনানি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিজ্ঞ আদালত বৃহস্পতিবার আমার অপর এক আবেদনে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়ে আদেশ দিয়েছে। শহীদ মিনারের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনের সাথে জড়িত সকল শ্রেণি পেশার মানুষ আদালতের রায়ে খুশি।’

তিনি আরো বলেন, ‘অবিলম্বে আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে যেন লালমনিরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মুল বেদি না সড়ানো হয় এবং পুনঃনির্মাণ কাজ বন্ধা রাখা হয়। যদি আদালতের আদেশ অমান্য করা হয়, তাহলে এবার আদালত অবমাননার নালিশ করা হবে।’  

উল্লেখ্য, লালমনিরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি ১৯৭২ সালে লালমনিরহাট থানা রোড়-বাহাদুর মোড়স্থ কালীবাড়ী মোড়ে নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন পর লালমনিরহাট পৌরসভার অর্থায়নে গত ২০ জানুয়ারি পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। আগের স্থান থেকে শহীদ মিনার ও মুল বেদি সড়িয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করা সাংস্কৃতিককর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সমাজকর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, আইনজীবী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মনে কষ্ট পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং আন্দোলন কর্মসূচী চালিয়ে আসছে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আদালতে গড়াল।       

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –