• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত মিয়ানমার

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২০  

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) দোষী সাব্যস্ত হয়েছে মিয়ানমার।
বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত এই আদালতে মামলার অন্তর্বর্তী রায় পড়ে শোনান আইসিজে’র প্রধান বিচারপতি আব্দুলকোয়াই আহমেদ ইউসুফ। সেখানেই মিয়ানমারকে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন তিনি।

এদিকে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমারকে চারটি অন্তবর্তী আদেশ দেয়া হয়েছে। আইসিজে’র ১৭ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বিচারিক দল এই আদেশ জারি করে।

আদেশগুলো হল-

১. গণহত্যাসহ সব ধরনের নিপীড়ন থেকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেয়া।

২. রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের সামরিক আধা সামরিক অথবা এই জাতীয় কোন সংস্থা এমন কোন ব্যবস্থা বা কাজ করবে না যাতে মিয়ানমারে চলমান পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে।

৩. গণহত্যার কোনো আলামত নষ্ট না করা।

৪. মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কি কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রতি চারমাস অন্তর অন্তর আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে পেশ করতে হবে।

রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালানো এবং গণহত্যা সনদ লঙ্ঘনের অভিযোগে গত বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত আইসিজে'তে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে গাম্বিয়া। গত নভেম্বরে এই মামলার শুনানিতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি উপস্থিত থাকলেও আজ আদালতে হাজির ছিলেন না তিনি। তার বদলে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন মন্ত্রী চো টিন্ট সোয়ে।

মিয়ানমার ও গাম্বিয়া উভয়েই ১৯৪৯ সালে গৃহীত গণহত্যা সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ। এই সনদের বাধ্যবাধকতা পূরণে মিয়ানমারকে বাধ্য করার লক্ষ্যেই এই মামলা। তিনদিনের ওই শুনানিতে অংশ নেন অং সান সু’চির নেতৃত্বে মিয়ানমারের একটি আইনজীবী দল। রাখাইনে কোনো অপরাধ ঘটে থাকলে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমার সেগুলোর বিচার করবে বলে জানানো হয় শুনানিতে। পাশাপাশি এই বিচারপ্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিকীকরণের বিরোধিতা করে মিয়ানমার।

শুনানিতে অন্তবর্তী আদেশ জারির বিরোধিতা করে সু চি অজুহাত দেন, অন্তর্বর্তী আদেশ পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তুদের সম্ভাব্য পুনর্বাসনে বাধা তৈরি করবে। পাশাপাশি এ মামলা করার এখতিয়ার নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

আইসিজেতে করা গাম্বিয়ার এ মামলায় রায় পেতে কয়েক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে ‘অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ’কে এই আইনি প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে কয়েকটি নিরাপত্তা পোস্টে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সেনা অভিযান চালায় মিনায়মারের সেনাবাহিনী।

প্রাণ বাঁচাতে সেখানকার প্রায় সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পেরিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। পালিয়ে আসা ওইসব রোহিঙ্গাদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বা শরীরে পোড়া ক্ষত নিয়ে আসেন। নারীদের শরীরে গণধর্ষণের শিকার হওয়ার চিহ্ন স্পষ্ট ছিল।

পালিয়ে আসা ওই সব মানুষদের অভিযোগ ছিল, সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রামে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে এবং বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। নারী ও শিশুদের ধর্ষণ করছে।

অভিযোগ তদন্তের জন্য ওই বছরই জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল বিভিন্ন দেশের তদন্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি স্বাধীন তদন্তদল গঠন করে।

গত আগস্টে সেই তদন্তদলের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। যাতে বলা হয়, সংখ্যালঘু মুসলমানদের নির্মূল করতে গণহত্যার অভিপ্রায় থেকেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়ন করেছে।

এর আগে ২০১৮ সালে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন রাখাইনে রোহিঙ্গা মুলসমানদের উপর ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ চালানোর অভিযোগ তুলে মিয়ানমার সেনাপ্রধান মিন অং হলাইং এবং আরো পাঁচ জেনারেলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করতে বলেছিল।

তখন মিয়ানমার ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –