• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

রিজিক কমায় যে চার অভ্যাস

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২০  

(১) উদাসীনতা: আল্লাহর জিকির থেকে উদাসীনতা মানুষের রিজিকের বরকত উঠিয়ে নেয়। কেননা যে ধরনের মানুষ দুনিয়ার মোহে পড়ে যায়। তাদের অন্তরে শয়তান বাসা বাঁধে। ফলে তারা সব অশ্লীল ও অহেতুক কাজে আত্মনিয়োগ করতে থাকে। এতে তাদের মন থেকে স্থিরতা দূর হয়ে যায়। একের পর এক অহেতুক বাসনা তাদের সর্বস্বান্ত করে দেয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তাকে ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সূরা: মুনাফিকু, আয়াত: ৯)।

তাই সন্তান সন্ততি ও ধন-সম্পদের মোহে পড়ে আল্লাহকে ভুলে গেলে চলবে না। বরং আল্লাহর দেখানো পথেই এগুলোর পরিচালনা করতে হবে।

(২) সুদ: মানবতাকে ধ্বংস করার হাতিয়ার এই সুদ। সুদখোর সর্বাবস্থায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থায় থাকে। এটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দৃষ্টিতে অত্যন্ত জঘন্য একটি অপরাধ। রাসূল (সা.) সুদখোর, সুদদাতা ও সুদের সাক্ষীকে অভিশাপ দিয়েছেন এবং বলেছেন, তারা সবাই সমান অপরাধী। (মুসলিম)। তিনি বিদায় হজের ভাষণে সব ধরনের সুদকে নিষিদ্ধ করেছেন। (বুখারি)। পবিত্র কোরআন মজিদেও মহান আল্লাহ বিভিন্ন আয়াতে মুমিনদের সুদ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। যেমন- সূরা বাকারার ২৭৮ থেকে ২৭৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ আল্লাহকে ভয় করো  এবং তোমাদের যে সুদ বাকি আছে তা ছেড়ে তোমরা ঈমানদার হও। যদি  তোমরা এমন না করো তাহলে তোমারা আল্লাহ ও তার রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। আল্লাহ সুদের কারণে বান্দার রিজিক কমিয়ে  দেন।’ 
পবিত্র কোরআন মজিদে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সুদকে হ্রাস করেন এবং সদকাকে বর্ধিত করেন।’ (সূরা- বাকারা, আয়াত: ২৭৬)। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা বলেন, সুদ সম্পদের বরকত নষ্ট করে দেয়।

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে জাতির মধ্যে সুদ প্রসারিত হয় তারা অবশ্যই দুর্ভিক্ষে নিপতিত হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ)। এই দুর্ভিক্ষ অনেক ধরনেরই হতে পারে। যেমন- আগে দুর্ভিক্ষ ছিল খাবারের অভাব। আর এখন দুর্ভিক্ষ হচ্ছে নির্ভেজাল খাবারের অভাব। মানুষের কাছে টাকার নোট বাড়লেও সংসারে শান্তি নেই। শরীরে সুস্থতা নেই।

(৩) অকৃতজ্ঞতা: রিজিক কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো অকৃতজ্ঞতা। আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া না করা। আল্লাহ অকৃতজ্ঞদের পছন্দ করেন না। পবিত্র কোরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেবো। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, তবে মনে রেখো, আমার শাস্তি বড়ই কঠোর।’ (সূরা: ইব্রাহিম, আয়াত: ৭)। 
আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া যেমন ইবাদতের মাধ্যমে করা হয়, তেমনি তার দেয়া নিয়ামতকে তার দেয়া বিধান মোতাবেক পরিচালনার মাধ্যমেও করা যেতে পারে। আল্লাহর নিয়ামত শুধু টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি নয়, বরং মানুষ নিজেই আল্লাহর নিয়ামত। দুনিয়ার বুকে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর নিয়ামত। হাজারটা জীবনের তার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা সম্ভব নয়। তবে আমাদের ব্যক্তিজীবন সাজানোর মাধ্যমে সর্বদা আল্লাহর দরবারে নত হয়ে থাকা উচিত।

(৪) গুনাহ: রিজিকে বরকত আসার জন্য আল্লাহর ওপর ঈমান ও তাকওয়া অবলম্বন অত্যন্ত জরুরি। যে বান্দা এই দু’টি জিনিস অর্জন করতে পারেন না, তার রিজিকে সংকীর্ণতা নেমে আসবে। পবিত্র কোরআন মজিদে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে।(সূরা: আরাফ, আয়াত: ৯৬)।

প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনেনি তাদের এত সম্পদ কোথা থেকে এলো? রিজিকে বরকত আসার উদ্দেশ্য শুধু টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া নয়, রিজিকের বরকত কখনো উভয় জাহানের হতে পারে। যেমন- তার উপার্জন থেকে তার পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করেছে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে পরকালীন সওয়াব দান করবেন। যা তার খরচকৃত অর্থের চেয়ে বহুগুণে সে ফেরত পাবে। কেউ আল্লাহর রাস্তায় দান করেছে, তার প্রতিদান সে দুনিয়ায় যেমন পাবে, আখিরাতেও পাবে। তবে যারা আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে না, তারা তাদের ভালো কাজের প্রতিদিন দুনিয়াতেই পেয়ে যাবে। পৃথিবীর সমস্ত ধন-সম্পদকে একত্র করলেও আখিরাতে একটি সওয়াবের সমপরিমাণ হবে না।

ফলে একজন ঈমানদার বাহ্যিকভাবে যতই দরিদ্র হোক, প্রকৃতপক্ষে সে দরিদ্র নয়। তার আমলনামায় দৈনিক জমা হচ্ছে হাজার হাজার নেকি। এর বিপরীতে যারা ঈমান আনেনি তারা যা কিছু অর্জন করছে তা কিছুই নয়। গুনাহ ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে এটিও রিজিকের বরকত কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। কখনো কখনো মুমিন বান্দার দুনিয়ায়ই এর শাস্তি ভোগ করতে হয়। যার ফলে তার ওপর বড় বিপদ- আপদ, অভাব- অনটন, অসুস্থতা ইত্যাদি চেপে বসতে পারে। প্রিয় নবী (সা.) এর হাদিসে এ ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না  এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে তাকদির রোধ হয় না। মানুষ তার পাপ কাজের দরুন তার প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০২২)।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –