• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

রংপুরে শত কোটি টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনা

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২১  

গাছে গাছে হলদে আভা ছড়াচ্ছে রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম। আজ রবিবার থেকে বাজারে আসছে জনপ্রিয় এই আম, বসবে হাঁড়িভাঙার হাট। কৃষকের আম রংপুর নগরীর লালবাগ এলাকা থেকে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। চালু করা হবে ‘সদয়’ নামে একটি হাঁড়িভাঙা আম বিক্রির অ্যাপস। বিগত বছরগুলোর মত এবারও হাঁড়িভাঙার ফলন নিয়ে আশাবাদী চাষীরা। তবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় তড়িঘড়ি করে আম বিক্রি করায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন তারা। সব ঠিক থাকলে এ বছর শত কোটি টাকার বেশি আম বিক্রি হবে রংপুর থেকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ছয় হাজার ৯৭৯ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙাসহ অন্যান্য আম বাগান রয়েছে। এতে গাছের সংখ্যা রয়েছে প্রায় দুই লাখ ৫৭ হাজার। এরমধ্যে শুধুমাত্র রংপুর জেলায় হাঁড়িভাঙা আমের জমি রয়েছে দুই হাজার ৫০০ হেক্টর। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৯২৫ মেট্রিক টন। মিঠাপুকুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি এক হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে এই আমের দাম কিছুটা কম থাকলে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙা আম ৬০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

অসাধু ব্যবসায়ীরা সময়ের আগে বাজারে তুললেও হাঁড়িভাঙা আম মুলত জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে গাছ থেকে পাড়ার উপযুক্ত সময়। এসময় আমের স্বাদসহ গুনগত মান ঠিক থাকে। চলতি বছর প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ ২০ জুন হাঁড়িভাঙা আম বাজারে তোলার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষে গত ৭ জুন মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মান্নান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান। তিনি বলেন, '২০ জুন থেকে কৃষকের আম রংপুর নগরীর লালবাগ এলাকা থেকে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। ওইদিনই সদয় অ্যাপস নামে একটি হাঁড়িভাঙা আম বিক্রির অ্যাপস চালু করা হবে। মতবিনিময় সভায় আম পরিবহনের জন্য বিশেষ বাস ও ট্রেন সার্ভিস চালুসহ পরিবহন সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানান চাষিরা। তারা জানান, রংপুরে হাঁড়িভাঙা আমের বিশাল বাজার তৈরি হলেও আম বিক্রির জন্য কোনো ধরণের শেড নেই। কাঁদামাটি মারিয়ে আম বিক্রি করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয় চাষি ও ব্যবসায়ীদের। এছাড়া ন্যায্য দাম নিশ্চিতকরণ, আমের বৃহৎ হাট পদাগঞ্জহাটের রাস্তাঘাটের সংস্কার ও হাটে ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করাসহ পাবলিক টয়লেট স্থাপন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়। এসময় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তরাসহ আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আম গাছে ভরে গেছে বসত-ভিটা, কৃষি জমি, পুকুর ও নদী পারে। বিস্তৃণ এলাকায় বাতাসে ছড়াচ্ছে যেন মিষ্টতার গন্ধ। হাঁড়িভাঙার জন্মভূমি বলে পরিচিত রংপুরের মিঠাপুকুরসহ পাশর্^বর্তী এলাকাগুলোতে আম পারাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে কর্মযজ্ঞ। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে চাষি, ব্যবসায়ীসহ হাঁড়িভাঙাকে ঘিরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়া মানুষদের মাঝে। ‘মধু মাসে মধু মন, জমে ওঠে মধু ক্ষণ’ যেন এমন আনন্দে ভাসছে তারা।

ধান-পাটসহ অন্য চাষাবাদের পরির্বতে মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জে হাঁড়িভাঙা এখন কৃষকের প্রধান ফসলে পরিণত হয়েছে। বদরগঞ্জের কুতুবপুর, লোহানীপাড়া, শ্যামপুর ও ওসমানপুরের আমচাষি বেলাল হোসেন, জাহানুর আলী, আলমশাহ ও বুলবুল মন্ডল জানান, একসময় এখানকার লালচে মাটিতে ধান, পাট গম ও ভূট্টা চাষ করতেন। গতানুগতিক চাষ পদ্ধতিতে তেমনভাবে ভাগ্যের পরিবর্তন হত না তাদের। কৃষিকে ভর করে কোনরকম কষ্টে দিন পার করতেন। মধ্যবিত্ত গৃহস্তের অবস্থা দিন দিন নিচে নামছিল। কিন্তু গত এক দশকেই দিন বদলের হাওয়া লেগেছে এসব গ্রামে। হাঁড়িভাঙা আম চাষের সাফল্য ছড়িয়ে পড়েছে চারদিক। প্রান্তিক কৃষক থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত কৃষকের বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে ধানী জমির আইলেও লাগানো হয়েছে হাঁড়িভাঙার চারা। চারা লাগানোর তিন বছরেই পাওয়া যায় আমের ফলন।

তারা জানান, এলাকায় এক হাজার গাছের নতুন বাগান ব্যবসাযীদের কাছে এক বছরের জন্য বিক্রি করেছেন সাত লাখ টাকায়। আর ১৪০০ বয়স্ক গাছের বাগান তিন বছরের জন্য বিক্রি হয়েছে ২৮ লাখ টাকায়। মৌসুমের শুরুতেই বাগান নিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসেন ব্যবসায়ীরা। বাগানে শুধু গাছ থাকলেই আর চিন্তা করতে হয়না তাদের। ব্যবসায়ী আখতার হোসেন অভিযোগ করেন, এই ব্যবসায় ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। কিন্তু শহর থেকে বাগানের দূরত্ব বেশি আর সহজ পরিবহণ ব্যবস্থা না থাকায় দ্বিগুন দামে আম পরিবহণ করতে হয় তাদের। আম সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় মৌসুমের শুরুতে আমের দামে বিপর্যয় দেখা দেয়। ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হয় এই আম। তবে মৌসুম শেষে আম যখন কমতে থাকে তখন হু-হু করে বেড়ে যায় হাঁড়িভাঙার দাম। মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে প্রতিমণ আম বিক্রি হয় পাঁচ থেকে আট হাজার টাকায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের উদ্যান বিশেষজ্ঞ খোন্দকার মো. মেসবাহুল ইসলাম জানান, মৌসুমের শুরুতে কিছুটা বিরূপ আবহাওয়ার কারনে পুরাতন গাছে মুকুল কম ধরলেও হাঁড়িভাঙার ফলনে বিপর্যয় ঘটেনি। এবারে উৎপাদিত হাঁড়িভাঙা আম শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করেন তিনি।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –