• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

‘মেয়েকে সঙ্গে ওর নানার বাড়িতে নিয়ে গেলে এই দৃশ্য দেখতে হতো না’

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০  

‘মেয়ের ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু তার এই আশা চিরতরে ধুলায় মিশিয়ে দিল ঘাতক মাহাফুজার রহমান রিফাত। বৃহস্পতিবার মেয়েকে আমার সঙ্গে ওর নানার বাড়িতে নিয়ে গেলে হয়ত এই দৃশ্য দেখতে হতো না।’

মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর নগরীর মধ্যপড়া গণেষপুরের নিজ বাড়িতে আক্ষেপ করে এই কথাগুলো বলেন নিহত জান্নাতুল মাওয়ার বাবা ইলেকট্রিক মিস্ত্রী মমিনুল ইসলাম। 

মমিনুল বলেন, ঘটনার এক সপ্তাহ আগে ছোট মেয়ে মিত্তাহুল জান্নাতিকে নিয়ে স্ত্রী রিপা বেগম তার বাবার বাড়ি উলিপুরে বেড়াতে যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় মাওয়াকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চাইলে তাকে কোনো ভাবেই নেয়া সম্ভব হয়নি।

তিনি আরো বলেন, মেয়েকে বাড়িতে একা রেখে যেতে ইচ্ছে করছিল না। বাসে ওঠার পর মনটা খুব খারাপ লাগছিল। মনে মনে চিন্তা করছিলাম মেয়ের যদি কোনো বিপদ হয়? 

শ্বশুরবাড়ির লোকজন মাওয়াকে সঙ্গে না নেয়ায় রাগ হন। আমি তখন বলি, ‘মাওয়াকে অনেকবার বলেছি সে রাজি হয়নি।’ এই বলে মমিনুল কান্নায় ভেঙে পড়েন। 

মমিনুল বলেন, শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় মা জরিনা বেগমকে বলি, ‘মা তোমার নাতনিকে রেখে গেলাম ওকে দেখে রাখিও।’ 

জান্নাতুল আমাকে জানায়, বাবা আমার সঙ্গে দাদির থাকার দরকার নেই। মীম আপুকে বলেছি সে আমার সঙ্গে থাকবে। তোমাকে আর চিন্তা করতে হবে না। মেয়ে আমাকে এই কথা বলায় বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে উলিপুরে রওনা হই। উলিপুরে পৌঁছার পর থেকে মনের ভেতরে কেমন যেন ছটফট করতে থাকে। কখন বাড়ি যেতে পারবো। সন্ধ্যায় মেয়ের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। মাওয়া বলে, ‘বাবা তুমি আমার জন্য চিন্তা করো না। বাড়িতে সবাই আছে। কোনো অসুবিধা হবে না।’ এর পর মনের ভেতরে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। 

মমিনুল বলেন, শুক্রবার দুপুরে ভাতিজা শোভন ফোন করে জানায়, জান্নাতি আর মীমের মরদেহ আপনার ঘরে পড়ে আছে। এই কথা শোনার পর কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। ঘটনা জানার জন্য এলাকার একাধিক ব্যক্তিকে ফোন দিয়েছি। তারা সবাই একই কথা বলেছেন। এর পর আমার স্ত্রী, মেয়েসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে নিজ বাড়িতে আসি। এরপর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে দেখি মেয়ের নিথর দেহ পড়ে আছে।  

মমিনুল বলেন, মেয়ের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দিলো না ঘাতক রিফাত। ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে তার উপযুক্ত বিচার চাই। 

নিহত জান্নাতুল মাওয়ার মা রিপা বেগম জানান, লেখাপড়ায় ভালোই ছিল সে। পরিবারের সবাই তাকে উৎসাহ যুগিয়েছে। মেয়ে প্রায়ই বলতো, ‘মা আমি ডাক্তার হতে চাই।’  কিন্তু তার সেই ইচ্ছা পূরণ করতে দিল না রিফাত।

রংপুর নগরীর মধ্য গণেশপুর এলাকার একটি বাসা থেকে শুক্রবার দুপুরে জান্নাতুল মাওয়া ও তার চাচাতো বোন সুমাইয়া আক্তার মীমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জান্নাতুলের মরদেহ ছিল তার বাবার ঘরের মেঝেতে। মীমের মরদেহ ছিল পাশের ঘরে ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায়। এ ঘটনায় পরদিন মীমের প্রেমিক মাহফুজার রহমান রিফাতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে সে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –