• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

মেনিনজাইটিস- কেন এত ভয়ানক?

লালমনিরহাট বার্তা

প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০১৮  

১৯৮৭ সাল।সৌদি আরবের মক্কায় হজ করতে এসেছেন লাখ লাখ মুসল্লি। হজ মৌসুম শেষের মুহূর্তেও হাজিরা বুঝতে পারেন নি,সৌদি থেকে তারা শরীরে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন মেনিনজাইটিস নামক ভয়ঙ্কর অসুখ। দুই হাজারেরও বেশি হাজি মেনিনজাইটিস এর জীবাণু দেহে নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। ওই সময়ে জীবাণুটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ধারণা করা হয় সেই দুই হাজার মানুষ থেকে সারা বিশ্বে প্রায় সত্তর হাজার মানুষ মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হন।

আমাদের ব্রেইন ও স্পাইনাল কর্ডকে রক্ষার জন্য এদের বাইরে তিনটি টিস্যু স্তর রয়েছে, যার নাম মেনিনজেস। আর অল্প কথায় বলতে গেলে, এই মেনিনজেসের প্রদাহই হলো মেনিনজাইটিস। অন্যান্য রোগের তুলনায় মেনিনজাইটিস এর প্রকোপ যে বেশ ভয়াবহ তার কারণ হলো, এরা বিদ্যুৎ গতিতে একজন মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় একজন মানুষ মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মাত্র এক দিনের মধ্যেই মারা যেতে পারেন! সৌভাগ্যবশত, যদি সময়মত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়, এ অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হয় অনেক ক্ষেত্রেই।

প্রাথমিকভাবে কারো মেনিনজাইটিস হতে পারে তিনটি উপায়ে- ছত্রাক বাহিত হয়ে, ভাইরাসের মাধ্যমে অথবা ব্যাকটেরিয়াবাহিত হয়ে।এদের মধ্যে ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস সবচেয়ে প্রাণঘাতী।একজন মানুষ যখন ব্যাক্টেরিয়াল মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হন, তখন তার লালা ও মিউকাসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে। এগুলোর সংস্পর্শে এলে অন্য একজন সুস্থ মানুষও মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হতে পারেন।এছাড়া চুম্বন, সিগারেট বা টুথব্রাশ অথবা চামচ ভাগাভাগি করলেও এ রোগ একজনের থেকে অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। মেনিনজাইটিস আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে কোনো রকম লক্ষণ প্রকাশ পাবার আগেই তিনি উপরোক্ত উপায়গুলোর মাধ্যমে রোগ ছড়ানো শুরু করতে পারে।

একবার যখন মেনিনজাইটিসের ব্যাক্টেরিয়াগুলো আমাদের মুখ, নাক অথবা গলার ভেতরে প্রবেশ করে, তারা এসব অঙ্গের প্রাচীর ভেদ করে রক্তস্রোতে মিশে যায়।এতে করে ব্যাক্টেরিয়া খুব দ্রুত শরীরের টিস্যুগুলোতে পৌঁছানোর সুযোগ পায়।এ টিস্যুগুলের মধ্যে একটি হলো ব্লাড-ব্রেইন মেমব্রেন। এই পর্দাটি খুব আঁটসাঁট কোষের গাঁথুনিতে তৈরি এবং এটি রক্তনালী ও ব্রেইনকে আলাদা করে রাখে। এই মেমব্রেন ভেদ করে কেবলমাত্র কিছু নির্দিষ্ট তরল ও গ্যাস যেতে পারে। মেনিনজাইটিস ব্যাক্টেরিয়া বিশেষ কৌশলে এ পর্দা অতিক্রম করে, যা বিজ্ঞানীরা এখনো খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

ব্রেইনে প্রবেশ করে মেনিনজাইটিস ব্যাক্টেরিয়া খুব দ্রুত মেনিনজেসকে আক্রমণ করে।দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্রুত এর প্রতিকার করতে চাইলে শুরু হয় প্রদাহ। ফলাফল হিসেবে দেখা দেয় প্রচণ্ড জ্বর ও মাথাব্যথা। একটা সময় গিয়ে মেনিনজেস ফুলতে শুরু করে ও বেশি ফুলে গেলে রোগীর ঘাড় শক্ত হয়ে যায়।ব্রেইনের স্বাভাবিক কর্মতৎরতা ব্যহত হয়, রোগী কানে শুনতে পায় না ও আলো দেখলে অস্বস্তি বোধ হয়। মেনিনজেস বেশি ফুলে গেলে মাথার ক্রেনিয়াম (হাড়) এ চাপ পড়ে, এর ফলে রোগী দিশেহারা হয়ে পাগলের মত আচরণ শুরু করে। এ লক্ষণটি দেখা গেলে মেনিনজাইটিস নিয়ে আর কোনো সন্দেহ থাকে না।

মেনিনজাইটিস ব্যাক্টেরিয়া ব্রেইনে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করার পর বংশবৃদ্ধি করা শুরু করে ও বিশেষ এক ধরণের টক্সিন নির্গত করে। ফলস্বরূপ, দেখা দেয় সেপ্টিসেমিয়া। সেপ্টিসেমিয়াকে ব্লাড পয়জনিংও বলা হয়। এর ফলে রক্তনালী ফেটে যায় ও চামড়ার নিচে রক্ত জমে ফুসকুড়ি দেখা যায়। একই সময়ে রক্তের অক্সিজেনের সহায়তা নিয়ে টক্সিন দাহিত হয়, ফলে ফুসফুস ও বৃক্কের মতো অঙ্গগুলোতে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়।এসব অঙ্গ তখন কাজ করা বন্ধ করে দেয়, সারা শরীরে সেপ্টিসেমিয়া ছড়িয়ে পড়ে ও রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

তবে আশার আলো হচ্ছে, মেনিনজাইটিস এর রয়েছে খুবই কার্যকর চিকিৎসা। রোগ শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসা দিতে পারলে বাঁচানো সম্ভব অধিকাংশ সময়ে। কিন্তু চিকিৎসা দিতে বিলম্ব হলে অক্সিজেনের অভাবে দেহের অধিকাংশ কোষের মৃত্যু ঘটেলে পরে আর রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। তাই আমাদের সকলেরই এই সর্বনাশা রোগের লক্ষণ জেনে রাখা ও সাবধানে থাকা অতি জরুরি।
 

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –