• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

বেরোবিতে নিজের পদোন্নতি বোর্ডে নিজেই সদস্য!

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২০  

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্যের একক সিদ্ধান্তে অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জনি পারভীনকে অনিয়মের মাধ্যমে পদন্নোতি দিতে পদন্নোতি বোর্ড সম্পন্ন করার অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী, যে শিক্ষকের পদন্নোতি বোর্ড হবে তাকে সেই বোর্ডে উপস্থিত থাকা যাবেনা। কিন্তু নিজের পদন্নোতিতে বোর্ডে জনি পারভিন নিজে উপস্থিত তো ছিলেন এবং হয়েছেন সেই বোর্ডের সদস্যও।

সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মোরশেদ হোসেনের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করেই তড়িঘড়ি করে ছুটিতে থাকা জনি পারভীনকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেন উপাচার্য। নিয়ম অনুযায়ী ছুটি থেকে ফিরে বিভাগে যোগদান করানোর ক্ষেত্রে সুপারভাইজার কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোন অনুমতি প্রয়োজন হলেও উপাচার্যের একক সিদ্ধান্তে বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন তিনি।

এদিকে প্লানিং কমিটি গঠন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্লানিং কমিটিতে যে শিক্ষককে সদস্য বানানো হয়েছে সে শিক্ষক জানেনই না পদন্নোতি বোর্ডের বিষয়ে। এই অনিয়মের পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজেই দায়ী বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। এদিকে জনি পারভিনের সহকারী অধ্যাপক পদে স্থায়ীকরণ না করেই উপাচার্য নিজের মতো করে তৈরি করা প্ল্যানিং করে গতকাল মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে নিজের একক সিদ্ধান্তে তার সুপারিশের মাধ্যমে মাত্র একদিনের নোটিশে ওই শিক্ষকের সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সাক্ষাৎকার বোর্ড সম্পন্ন করেন। এতে ক্ষুব্ধ সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ অন্যান্য শিক্ষকরা।

এদিকে বিভাগের শিক্ষকের পদন্নোতির ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী শিক্ষকদের মধ্যে থেকে জ্যেষ্ঠতা অনুসারে তিনজন শিক্ষকের সমন্বয়ে প্ল্যানিং কমিটি গঠনের কথা থাকলেও জনি পারভীন সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর নিয়ম ভঙ্গ করে প্ল্যানিং কমিটি তৈরি করেন যেখানে সদস্য বানানোর কথা জৈষ্ঠতা অনুযায়ী বিভাগের একমাত্র প্রফেসর ড. মোরশেদ সহকারি অধ্যাপক খন্দকার জাহাঙ্গীর আলমকে। কিন্তু তা না করে তিনি ড. মোরশেদ এবং খন্দকার জাহাঙ্গীর আলমের জায়গায় তিনি উপাচার্যকে সদস্য করেছেন।

এদিকে প্ল্যানিং কমিটির পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন লাগে, সেটিও মানা হয়নি এখানে। তবে ২০২০ সালে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে জনি পারভিন ভিসিকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগীতা করার পুরস্কার হিসেবে এই পদন্নোতি বলে শিক্ষকদের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

এ প্লানিং এর বিষয়ে আমি কিছুই জানতেন না জানিয়ে বিভাগের সদ্য সাবেক সভাপতি ও জ্যৈষ্ঠ প্রফেসর ড. মোরশেদ হোসেন বলেন, ভিসি তার একক সিদ্ধান্তে তাকে পদন্নোতি দিয়েছেন যা আইনের দৃষ্টিতে এটি সর্ম্পূর্ণ জালিয়াতি এবং প্রতারণা।

এই পদন্নোতিকে নিয়মবহির্ভুত উল্লেখ করে অর্থনীতি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম নিরব বলেন, গত ৬ বছর ধরে আমার বিভাগের জন শিক্ষকের সমন্বয়ে প্লানিগ বোর্ড গঠিত হয়ে আসছে কিন্তু জনি পারভিন বিভাগীয় প্রধান হওয়ার পর তিনি বিভাগের শিক্ষকদের ডিঙ্গিয়ে ভিসিকে সদস্য বানিয়ে নিজে অনিয়ম করে পদোন্নতি নিয়েছেন।

অভিযুক্ত শিক্ষক জনি পারভিনের সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার বিভাগীয় অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে ফোন দেয়া হলে প্রতিবেদককে ব্যক্তিগত নাম্বারে কেন ফোন দিয়েছেন তা জানতে চান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে জানার ইচ্ছা হলে প্রশাসনকে ফোন করেন, আমাকে ফোন করেছেন কেন? আপনি আমার মোবাইল নাম্বার পেয়েছেন কোথায়? এটা আমার পার্সোনাল মোবাইল নাম্বার কোন অফিসিয়াল মোবাইল নাম্বার না। পার্সোনাল মোবাইল নাম্বারে আপনি কখনো অফিসিয়াল ইনফরমেশন নিতে পারেননা। 

একদিনের মধ্যে স্থায়ীকরণের বোর্ড এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়াই জনি পারভীনকে কিভাবে আবেদনের অনুমতি দেয়া হলো- এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ এবং রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামালের সঙ্গে পরপর দুইদিন কথা বলতে তার দফতরে গেলে বিষয়টি সম্বন্ধে জানা যায়নি। কর্মচারীরা জানান, তারা দুজনেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। একাধিকবার ফোন দিলে ফোন কেটে দেন।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –