• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

বুড়িমারী স্থলবন্দর: ৫০ হাজার কর্মহীন শ্রমিকের মানবেতর জীবনযাপন

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২০  

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলাধীন বুড়িমারী স্থলবন্দওে বিভিন্ন সেক্টরের প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন গত ২২ মার্চ থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করার পর থেকে শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। তবে সরকার ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধের তালিকা আরো ৪দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আগামী ৪ এপ্রিলের পর আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে উঠবে সেই নিশ্চয়তাও নেই।  

বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকায় প্রায় আড়াই হাজারের বেশি পাথর ভাঙা কারখানা রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ শতাধিক আমদানি পণ্য বোঝাই ট্রাক আনলোড ও দেশীয়  প্রায় ১ হাজার মতো ট্রাক প্রতিদিন লোডিং হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। ভারতে রফতানি হতো প্রতিদিন প্রায় অর্ধশতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কারণে বর্তমানে এই স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে স্থানীয় ভাবে কর্মমূখর বুড়িমারী স্থলবন্দর এখন সুনসান নিরবতায় ভুতুরে অবস্থা বিরাজ করছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে পাথর ভাঙা কারখানার শ্রমিকরা। এসব কারখানায় প্রায় ৩৩ থেকে ৩৬ হাজার শ্রমিক দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করতো বুড়িমারী স্থলবন্দরের বিভিন্ন কারখানায়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রভাবের কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বুড়িমারী স্থলবন্দও দিয়ে আমদানি রফতানি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার ঘটনায় এসব শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ে। এসবের পাশাপাশি পণ্যবাহী ট্রাকের লোড-আনলোডের সাথে যুক্ত প্রায় ৮-১০ হাজার শ্রমিকও কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া সিএন্ডএফ এজেন্টের অফিসে কর্মরত শ্রমিকরাও কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

শ্রমিক নেতা সফর উদ্দিন বলেন, শ্রমিকরা দিন আনে দিন খায়। এই শ্রমিকরা গত ৫ দিন যাবত কর্মহীন হয়ে বাড়ীতে দিন কাটাচ্ছে। তাদের অনেকের ঘরেই খাবার নেই। আরো যে কতদিন পর কাজ শুরু হবে কেউ কিছুই বলতে পারছে না। এজন্য সরকারিভাবে এসব শ্রমিকদের তালিকা করে অন্তত চাউল, আলু ও লবন দেওয়া উচিত। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদকে অবহিত করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বুড়িমারী স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট ও আমদানি কারক ব্যবসায়ী সায়েদুজ্জামান সাঈদ বলেন, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। বুড়িমারীতে বিভিন্ন সেক্টরে নিয়োজিত প্রায় পঞ্চাশ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এসব শ্রমিক দিনে যা পেত, তা দিয়ে সংসার চালাত। এখন এসব পরিবারের খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। এজন্য সরকারিভাবে তাদের সাহায্য করা উচিত।

বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমস সহকারী কমিশনার(এসি) সোমেন কুমার চাকমা বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারি ভাবে আমদানি রফতানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে আমার কিছুই করার নেই। তবে শ্রমিকদের দন খুব খারাপ যাচ্ছে। শ্রমিকদের উপজেলা প্রশাসন বিভিন্নভাবে আর্থিক সাহায্য প্রদান করতে পারে।

জানতে চাইলে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, দিন আনে দি খায় এমন ৭ থেকে ১০ হাজার শ্রমিক রয়েছে। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে আমি নিজেও কথা বলে বলেছি। যদি সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা আসে তাহলে আমরা এসব শ্রমিকের হাতে পৌঁছে দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

জানতে চাইলে লালমনিরহাট-১ আসনের সাংসদ সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন বলেন, বর্তমান করোনা ভাইরাস নিয়ে সারাদেশ এক ধরনের কঠিন সময় পার করছে। এখন চিকিৎসা সামগ্রী এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের বিষয়টি নিয়ে সরকার কাজ করছে। এর পাশাপাশি একই সাথে সরকার শ্রমিকদের নিয়েও ভাবছে। বিষয়টি নিয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি সরকার দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী এসব শ্রমিকের নিকট পৌঁছানোর উদ্যোগ নেবে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –