• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিনা খরচেই ‘বোতল বাতি’ জ্বলবে বছরের পর বছর

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২০  

সাদা ও স্বচ্ছ প্লাস্টিকের বোতল। সেটার মধ্যে দেয়া হয় ক্লোরিন মেশানো পানি। টিনের চাল ফুটো করে বোতলটি স্থাপন করলেই আলোকিত হয় এমন সব ঘর—যেগুলোতে দিনের বেলাতেও থাকে ঘুরঘুট্টি আঁধার। বিদ্যুৎ, ব্যাটারি—কিছুরই প্রয়োজন হয়না এই বাতির জন্য।  তারপরও সূর্যালোক যেন চুইয়ে পড়ে ঘরের ভেতর। এটিকে বলা হয় ‘বোতল বাতি’।

কয়েক বছর আগে প্রাকৃতিক আলোর এই ব্যবহার বেশ সাড়া ফেলে। দেশের লাখো গরিব ও বিদ্যুৎহীন মানুষের ঘর উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে চমৎকার এই উদ্যোগে। এছাড়া টাকা-পয়সার সংকট সত্ত্বেও দিনের বেলায় বাধ্য হয়ে যারা ঘরে বিদ্যুৎ জ্বালান, এটি তাদের খুব কাজে দিচ্ছে। এক বোতল থেকে ৬০ ওয়াটের বাল্বের সমপরিমাণ আলো পাওয়া যায়।

যেভাবে বোতল বাতির জন্ম

বোতল বাতির ধারণাটা মূলত এক ব্রাজিলিয়ান মেকানিকের। তার নাম আলফ্রেডো মোজার। তবে এই প্রজেক্ট সবচেয়ে জনপ্রিয় হয় ফিলিপাইনে। ২০১৩ সালে ‘লিটার অব লাইট’ শিরোনামের প্রজেক্টটি দেশটির ম্যানিলা শহরে বেশ বড় আকারে চালু করে। মাত্র এক বছরের মধ্যেই তারা দুই লাখ বোতল লাইট স্থাপন করা হয়।

এরপর প্রতিষ্ঠানটি আরো বড় উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০১৫ সালের মধ্যে প্রায় এক মিলিয়ন বাড়ি আলোকিত করেছে তারা। তাছাড়া পরবর্তীতে রাতের বেলায় সৌরশক্তি ও ব্যাটারির মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ঘরের চাল ফুটো করে কীভাবে বোতল বাল্ব লাগাতে হবে তার নির্দেশনামূলক একটি মোবাইল অ্যাপও তৈরি করা হয়েছে। 

ব্রাজিল থেকে ফিলিপাইন; এরপর ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ, ভারত, কেনিয়াসহ ১৫টি দেশে ‘লিটার অব লাইট’ প্রজেক্ট ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে লিটার অব লাইট ভারত চ্যাপ্টার মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর, হায়দারাবাদসহ বড় বড় শহরগুলোতে স্বেচ্ছাসেবকদের সম্পৃক্ত করছে।

বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ছাড়াও পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে ‘বোতল বাতি’ বেশ ভালো সাড়া জাগিয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণদের সামাজিক সংগঠন ‘লাইটস ফাউন্ডেশন’ বোতল বাতি জনপ্রিয় করতে ফটিকছড়ি উপজেলায় প্রকল্প হাতে নেয়। উপজেলার শত শত পরিবারকে বিনামূল্যে এই বাতি সরবরাহও করেছে সংগঠনটি।

প্রকল্পের পরিচালক মুহাম্মদ সানজিদুল আলম জানান, এ বাতি ব্যবহারে প্রতি মাসে ১০০ থেকে ২০০ টাকার বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব। একবার লাগালে চার-পাঁচ বছর পর্যন্ত কোনো খরচ লাগে না। একেকটি বাতি স্থাপনে সর্বসাকল্যে খরচ পড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

বর্তমানে ‘লিটার অব লাইট বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিওর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রকল্পটিসচল রাখতে। এর মাধ্যমে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার ২৫ জন তরুণ-তরূণীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। প্রশিক্ষণ শেষে তারা ক্ষুদ্র আকারে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য প্রকল্প থেকে মূলধন পাচ্ছেন। তাদের তৈরি লাইট যাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, স্থানীয় লোকজনের কাছে।

চাইলে এই বাতি দিয়ে রাতের বেলায়ও আলোর ব্যবস্থা করা সম্ভব। বস্তিবাসীরা মোমবাতি, কেরোসিন বাতি বা বিদ্যুতের জন্য যে টাকা খরচ করছিলেন, এবার তা রাতের আলোর পেছনে খরচ করতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে ছাদে সৌর প্যানেল লাগাতে হবে। বোতল-বাতির নীচে সৌরশক্তি চালিত বাতি ঠিকমতো ঝুলিয়ে দেয়া হয়৷ দিনের বেলায় তা চার্জ হয়ে যায়৷ এই পদ্ধতিকে বলা হয় সোলার ল্যাম্প।

সোলার ল্যাম্পটির মূল অংশ দুইটি। ছোটো সোলার চার্জার ও ব্যাটারি সমৃদ্ধ লাইট। লাইটটির ক্যাসিং তৈরি হয় পিভিসি পাইপ এবং পিভিসি ক্যাপ দিয়ে। যার ভেতরে থাকে একটি রিচার্জেবল ব্যাটারি, একটি চার্জিং সার্কিট, একটু পুশ সুইচ, একটি চার্জিং সকেট। আলোর জন্য এটিতে আছে একটি এলইডি টিউব। এই লাইটটিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আবরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় এক লিটারের স্বচ্ছ বোতল। ল্যাম্পটি চার্জ করার জন্য সোলার প্যানেলটি রোদে রেখে এর সঙ্গে থাকা তারের কর্ডটি লাইটের সকেটে লাগাতে হয়।

অন্যদিকে স্ট্রি লাইট তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ১৫-২০ ফুটের উঁচু পিভিসি পাইপ, কিছু পিভিসি এঙ্গেল, দুটি রিচার্জেবল ব্যাটারি, একটি চার্জিং সার্কিট, একটি অটো অন অফ সার্কিট, একটি এলইডি টিউব। যার আবরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় একটি প্লাস্টিকের বোতল। লাইটটিকে প্রতিদিন চার্জ করার জন্য পিভিসি পাইপের উপরে লাগানো থাকে একটি সোলার প্যানেল, যা দিনের বেলায় লাইটকে চার্জ করতে সক্ষম। সন্ধ্যা হলেই জ্বলে উঠে এবং দিনের আলো ফুটলেই লাইটটি বন্ধ হয়ে যায়।

প্লাস্টিক ৫০০ বছরেও পঁচে না যা পরিবেশের অকল্পনীয় ক্ষতি করছে। এজন্যই এই উদ্যেগের মাধ্যমে ফেলে দেয়া প্লাস্টিক বোতল পুনরায় ব্যবহার করা হয়। এতে জলবায়ু পরিবর্তনেরও মোকাবিলা করা সহজ হবে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –