• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

প্রাপ্ত তথ্য জাতীয় ডাটাবেজের সঙ্গে মিলিয়ে টাকা দেওয়া হচ্ছে

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২০  

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস বলেছেন, তালিকায় প্রাপ্ত তথ্য জাতীয়  ডাটাবেজের সঙ্গে ম্যাচ (মিলে যাওয়া) করলেই টাকা দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তথ্য তিন পর্যায়ে যাচাই করা হয়। এখানে কারও অনিয়ম করার সুযোগ নেই। তিনি জানান, এ পর্যন্ত ১৩ লাখ ৯০ হাজার মানুষের মধ্যে টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ঈদের পরও এ কার্যক্রম চলবে। অন্য কোনোভাবে সহায়তা বা সুবিধাপ্রাপ্ত কেউ এ কর্মসূচির আওতায় টাকা পাবে না।

গতকাল আমাদের প্রতিনিধির সঙ্গে মুঠোফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। আহমদ কায়কাউস জনপ্রশাসনের একজন উদ্যমী, উদ্যোগী ও গতিশীল কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তাঁর নেতৃত্বেই দেশের ৫০ লাখ দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে জনপ্রতি এককালীন আড়াই হাজার টাকা বিতরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ চলছে।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে যাদের দৈনন্দিন আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে তাদের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের ৫০ লাখ মানুষকে একাকালীন আড়াইহাজার টাকা সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন। এজন্য ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এ ভাতা পাওয়ার তালিকায় রয়েছেন- রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিক, কৃষক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহনশ্রমিক, সংবাদপত্রের হকারসহ নিম্ন আয়ের নানা পেশার মানুষ। প্রতি পরিবারে ন্যূনতম চারজন সদস্য ধরে এ কর্মসূচির আওতায় ২ কোটি মানুষ উপকারভোগী হবে। বিকাশ, রকেট, নগদ ও শিওর ক্যাশ-এর মাধ্যমে মোবাইল আর্থিক সেবায় এ টাকা বিতরণের কাজ চলছে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের সাক্ষাৎকার নিম্নে তুলে ধরা হলো-

প্রতিনিধি: টাকা বিতরণের কার্যক্রম এখন কোন পর্যায়ে আছে? বিতরণ কি শেষ হয়েছে?

আহমদ কায়কাউস : আমরা ৫০ লাখ মানুষের তালিকা পেয়েছি। এর মধ্যে ৭ লাখ ৯০ হাজার জনকে টাকা দিয়েছি। নতুন করে আরও ৩৩ লাখ মানুষের তালিকা পেয়েছি। এ তালিকা থেকে আজ (গতকাল শুক্রবার) ৬ লাখ মানুষকে টাকা দেওয়া হয়েছে। কালও (শনিবার) টাকা যাবে।

প্রতিনিধি: তালিকায় ভুল কেমন পেয়েছেন?

আহমদ কায়কাউস : ৫০ লাখের মধ্যে আমরা যাচাই-বাছাই করে ৭ লাখ ৯০ হাজার জনকে টাকা দিয়েছি। পরের তালিকায় পাওয়া ৩৩ লাখের মধ্যে ২৬ লাখ ভুল পেয়েছি। অর্থাৎ তালিকায় ভুল থাকলেও সঠিক মানুষের কাছেই টাকা যাবে। সবকিছুই ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করে হচ্ছে। কেবল ডিজিটাল নম্বরে বিপত্তি হলে অন্য কথা। অন্যথায় ভুল হওয়ার কথা নয়। যেমন একটা মোবাইল নম্বর ইংরেজি-বাংলা জনিত সমস্যায় ‘চার’ ও ‘আট’ নিয়ে গোল বাধে। ফলে একজন ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে টাকা চলে যায়। এটাও ধরা পড়ে। এ রকম অনেক ভুল ধরা পড়ছে। আমরা হাজারে এমন ভুল পাচ্ছি। তালিকায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী পাচ্ছি। তাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। অন্য কোনোভাবে সহায়তা পাওয়া বা সাহায্য পাওয়া কেউ এ তালিকায় থাকবে না।

প্রতিনিধি: এ পরিস্থিতিতে ঈদের আগে কি টাকা বিতরণ শেষ করা সম্ভব হবে?

আহমদ কায়কাউস : এ প্রক্রিয়া চলমান। ঈদের আগ পর্যন্ত দেওয়া হবে। ঈদের পরও এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

প্রতিনিধি: তালিকা প্রণয়নে কিছু জায়গায় অনিয়মের অভিযোগ ছিল।

আহমদ কায়কাউস : প্রাপ্ত তালিকা জাতীয় পর্যায়ে সংরক্ষিত ডাটাবেজ ব্যবহার করে ম্যাচ (মিলে যাওয়া) করছি। প্রথমেই তালিকা পাঠানো হচ্ছে নির্বাচন কমিশনে। সেখানে এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) নম্বরে ম্যাচ করাচ্ছি। এরপর তা পাঠাচ্ছি বিটিআরসিতে (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন)। সেখানে এনআইডি ও মোবাইল নম্বর ম্যাচ করানো হয়। যেগুলো ম্যাচ হবে না সেগুলো বাদ দেওয়া হয়। এরপর তালিকার যে নামগুলো ম্যাচ হয় তা পাঠানো হয় অর্থ বিভাগে। সেখানে তালিকাভুক্তরা অন্য কোনো সুবিধাপ্রাপ্ত কিনা তা যাচাই করা হয়। যদি এ তালিকার কেউ সরকারি অন্য কোনো সাহায্যপ্রাপ্ত বা সুবিধাভোগী হয়, তারা এ টাকা পাবে না। যারা অন্য কোনো সুবিধাভোগী নয়, কেবল তাদের তালিকা অর্থ বিভাগ থেকে বাংলাদেশে ব্যাংকে পাঠানো হয়। সেখান থেকে চূড়ান্তভাবে সংশ্লিষ্টদের কাছে আড়াই হাজার করে টাকা পাঠানো হচ্ছে।

প্রতিনিধি: ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা নানাভাবে চাপে থাকেন। স্বচ্ছতার জন্য স্বতন্ত্র কোনো সংস্থা দিয়ে কি তালিকা প্রণয়নের বিষয়টি বিবেচনা করা যায়?

আহমদ কায়কাউস : তালিকা প্রণয়নের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) প্রধান করে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, বিভাগীয় সরকারি কর্মকর্তা, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, শিক্ষক এবং স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। মূলত তালিকা করা হচ্ছে উপজেলা পর্যায় থেকে। আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে কোনো কমিটি করিনি।

প্রতিনিধি: হয়তো অনেকের মোবাইল ফোন নেই। বাধ্য হয়ে তারা অন্যের নম্বর দিচ্ছেন। তালিকা প্রণয়নে এটাও তো একটা সমস্যা।

আহমদ কায়কাউস : আমাদের কাছে বলতে হবে তো যে আমার মোবাইল ফোন নেই। তালিকা করার সময় বলা হচ্ছে না তার মোবাইল ফোন নেই। এমন কোনো তথ্যও আসছে না যে টাকা পাওয়ার মতো সম্ভাবনাময় ২০ ভাগ মানুষের মোবাইল ফোন নেই। যদি এ রকম তথ্য পেতাম তাহলে বিকল্প ভাবতে পারতাম। আর এ তালিকা করা হচ্ছে হতদরিদ্রদের বাইরে। কেবল স্বল্প আয়ের মানুষকে সহায়তা করা আমাদের লক্ষ্য। হতদরিদ্র এবং দরিদ্র এমন কয়েক কোটি মানুষকে এরই মধ্যে ত্রাণসহ নানাভাবে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আড়াই হাজার টাকা বিতরণের জন্য যাদের টার্গেট করা হয়েছে, তাদের মোবাইল ফোন নেই- তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

প্রতিনিধি: আপনাকে ধন্যবাদ।

আহমদ কায়কাউস : আপনাকেও ধন্যবাদ।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –