• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

নারীর জান্নাত জাহান্নাম

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاء بِمَا فَضَّلَ اللّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُواْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللّهُ وَاللاَّتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلاَ تَبْغُواْ عَلَيْهِنَّ سَبِيلاً إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا

‘পুরুষেরা নারীদের ওপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের ওপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীরা হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাজতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাজত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার ওপর শ্রেষ্ঠ।’ (সূরা: নিসা , আয়াত: ৩৪)।

হজরত ওয়াহিদী (রহ.) বলেছেন, আয়াতে বর্ণিত-‘নূশুয’ শব্দের অর্থ হলো স্বামীর অবাধ্য হওয়া এবং তার কথা না মানা। হজরত আতা (রহ.) বলেন, এর অর্থ হলো স্বামীর সান্নিধ্য থেকে দূরে থাকা, তাকে যৌন মিলনে বাধা দেয়া এবং তার প্রতি যে আনুগত্য প্রদর্শন করতো তা না করা। তাদরেকে পবিত্র কোরআনের বানী শুনিয়ে এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেধ জানিয়ে উপদেশ দেয়া এবং কর্তব্য সচেতন করে তোলা।

তাদরে শয্যা বর্জন করার ব্যাখ্যায় হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, তাদের দিকে পিঠ রেখে শয়ন করবে, তাদের সঙ্গে কোনো কথাবার্তা বলবে না। শারী (রহ.) এবং মুজাহিদ (রহ.) বলেছেন, এর অর্থ হলো তাদেরকে এক বিছানায় শয়ন করতে দিও না। তাদেরকে এমনভাবে প্রহার করো যাতে কোনো প্রকার জখম না হয়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, তাদেরকে এমনভাবে প্রহার করতে হবে যেমনটি আদব শিখাবার জন্য করা হয়ে থাকে। যেমন কি দ্বারা প্রহার করা। এ আয়াতে স্বামীকে তার স্ত্রীর অবাধ্যতা শুধরাবার জন্য হালকাভাবে প্রহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে এবং স্ত্রীকে সঠিক পথে পরিচালিত করা স্বামীর দায়িত্বও বটে। যদি তারা ঠিক হয়ে যায় এবং তোমাদের আনুগত্য করতে থাকে তাহলে তাদের ওপর অত্যাচার বা বাড়াবাড়ি করো না।

হজরত হাসান (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে শুনেছেন এমন একলোক বলেছেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন নারীদেরকে সর্বপ্রথম যে প্রশ্ন করা হবে তা হলো তার নামাজ এবং তার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কিত।’ (কানযুল উম্মাল)।

হাদিস শরিফে আছে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে নারী আল্লাহ এবং পরকালের ওপর ঈমান রাখে তার জন্য স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোজা রাখা জায়েয় নয় এবং স্বামীর অনুমতি ছাড়া কাউকে তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি দেয়াও বৈধ নয়। (বোখারি)।

রোজা রাখা জায়েয না হওয়ার কারণ হলো স্বামীর হক আদায় করা এবং তার অনুগত থাকা হলো ফরজ আর রোজা হলো নফল। নবী করিম (সা.) আরো বলেছেন, ‘আমি যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করার আদেশ দিতে পারতাম তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য।’ (তিরমিযী)।

হুসাইন ইবনে মুহসিনের ফুফু বলেন, তিনি রাসূলূল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে তার স্বামী সম্পর্কে আলোচনা করলে তিনি বলেন, ‘দেখ তোমার স্থান কোথায় এবং তোমার স্বামীর স্থান কোথায়? সে তোমার জন্য জান্নাত এবং জাহান্নাম।’ (নাসাঈ)।

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ নারীর প্রতি আল্লাহ তায়ালা দৃষ্টিপাত করবেন না, অথচ সে তার স্বামীর মুখাপেক্ষী।’

হজরত ইবনে উমর (রা.) আরো বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো নারী তার স্বামীর ঘর থেকে অনুমতি ছাড়া বের হয়ে যায় সে ফিরে না আসা পর্যন্ত অথবা তওবা না করা পর্যন্ত ফেরেশতারা তার ওপর অভিশাপ বর্ষণ করতে থাকে। (নাসাঈ)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, ‘যে নারীর স্বামী তার ওপর থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করবে সে জান্নাতে যাবে।’ (ইবনে মাজাহ, তিরমিযী)।

অতএব, স্বামীর সন্তুষ্টি বিধান, সে যেন রাগান্বিত বা অসন্তুষ্ট না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা এবং যখন সে তাকে পেতে চাইবে তখন তার কাছে যাওয়া নারীদের ওপর ওয়াজিব। কেননা নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কোনো নারী যদি রান্না-বান্নার কাজে ব্যস্ত থাকে এবং এমতাবস্থায় তার স্বামী যদি তাকে তার সঙ্গে শয়ন করার জন্য ডাকে তবে তখনো তাকে তার ডাকে সাড়া দিতে হবে।’

স্বামীর সামনে সর্বদা লজ্জাবোধ করা, দৃষ্টি অবনিমতি রাখা, তার আদেশ পালন করা, আর তার কথা বলার সময় চুপ থাকা, তার আগমনে উঠে দাঁড়ানো, বাইরে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে কিছু দূর গিয়ে বিদায় অভ্যর্থনা জানানো, তার শয়নকালে নিজেকে তার কাছে সমর্পণ করা, তার অনুপস্থিতিতে তার বিছানায়, অর্থ-সম্পদে এবং ঘরের ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা না করা, সুগন্ধী ব্যবহার করা, নিয়মিত মেসওয়াকের মাধ্যমে দাঁত মাজা এবং পরিপাটিভাবে থাকা, তার সঙ্গে সৌন্দর্য চর্চা করা, তার অনুপস্থিতিতে সাজ-গোজ পরিহার করা, তার পরিবারের লোকজন ও আত্নীয়-স্বজনদের সম্মান ও আদর-যত্ন করা এবং তার নিকট হতে সব পাওয়াকে বড় করে দেখা প্রত্যেক নারীর জন্য ওয়াজিব।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –