• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

দেশি শিল্প বাঁচাতে একগুচ্ছ সুবিধা

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২০  

করোনার আঘাতে বিপর্যস্ত দেশের শিল্প খাত। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তা বলা যাচ্ছে না। এ পটভূমিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে শিল্প খাতে একগুচ্ছ নতুন সুবিধার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পাশাপাশি বিদ্যমান সব সুবিধাও বহাল থাকবে। ব্যবসায়ীরা একে স্বাগত জানালেও করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এসব সুবিধা কতটা কাজে লাগানো সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।

এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘করোনার কারণে বাংলাদেশের শিল্প খাত প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। শিল্প খাত গতি হারালে অর্থনীতির বিপর্যয় আরো বাড়বে। এবারের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী এই সত্য সামনে রেখে শিল্প খাতে সুবিধা দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে শিল্প খাতে ধস নেমেছে। এবারের বাজেট প্রস্তাবে শিল্প খাত চাঙ্গা করতে অনেক পদক্ষেপ আছে। আবার পুরনো সুবিধাগুলোও বহাল রেখেছে। কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ শিল্প হলো একটি অর্থনীতির প্রাণ। প্রাণ বাঁচাতে চেষ্টা করতেই হবে। এখন দেখা যাক, করোনা সংকটে তা কতখানি কাজে লাগানো সম্ভব হয়।’

অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেন, করোনার কারণে ২০২০ সালে বিশ্ববাণিজ্য হ্রাসের পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। ফলে বাংলাদেশেও তৈরি পোশাকসহ সার্বিক রপ্তানি ক্রমাগত হ্রাস পেতে পারে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের কারণে সামনের দিনগুলোতে রপ্তানি আরো কমবে। করোনার প্রভাব মোকাবেলায় চলমান সব সুবিধা বহাল রাখা এবং নতুন সুবিধা দেওয়া হবে।

করোনাসংকট মোকাবেলায় রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক শিল্পে বিদ্যমান সব সুবিধার সঙ্গে আগামী অর্থবছরের জন্য ১ শতাংশ হারে অতিরিক্ত রপ্তানি প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। আগামীতে গ্রিন বিল্ডিং সার্টিফিকেশন আছে এমন প্রতিষ্ঠানের করহারে ছাড় দিয়ে ১০ শতাংশের প্রস্তাব  করা হয়েছে। এই খাতে উৎস কর কর্তনের হার ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। 

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, করোনার কারণে তৈরি পোশাক শিল্পে খারাপ সময় যাচ্ছে। বাজেট প্রস্তাবে নেওয়া পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে এই মন্দা কাটিয়ে উঠতে তা সহায়তা করবে। বাজেট প্রস্তাবে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়ায় শিল্পে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, মোবাইল হ্যান্ডসেট উত্পাদনে ছাড় এবং অটোমোবাইল, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশন শিল্পের সব সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। এসব সুবিধা কাজে লাগাতে পারলে শিল্পে গতি বাড়বে। এসব খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তবে করোনার এই বিপদের মধ্যে এসব সুবিধা কতটা কাজে লাগানো যাবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।  

বর্তমানে দেশে ৭৮ লাখ ১৩ হাজার ৩১৫টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জিডিপিতে এসব প্রতিষ্ঠানের অবদান ২৫ শতাংশ। এসএমই খাতের অবদান ৩২ শতাংশে উন্নীত করতে আগামী অর্থবছরে সারা দেশে ১৭৭টি ক্লাস্টারভিত্তিক এসএমই উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের উদ্যোগ চলমান রাখা হবে। করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কুটির শিল্পসহ সব এসএমই প্রতিষ্ঠানের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার দুটি আলাদা স্বল্প সুদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধাও আগামীতে চালু রাখা হবে।

বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, করোনা সংকটে রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতা আনতে ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে রপ্তানি সম্ভাবনাময় পণ্যকে চিহ্নিত করা হবে। এর মধ্যে জাহাজ, ওষুধ, ফার্নিচার, বহুমুখী পাটপণ্য, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড হোম অ্যাপ্লায়েন্স, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ সামগ্রী, কাগজ, প্রিন্টেড ও প্যাকেজিং সামগ্রী, আইসিটি, রাবার, পাদুকা, কাট ও পলিশড ডায়মন্ডসহ সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতকে প্রয়োজনমতো বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে কাগজ, ইস্পাত, প্লাস্টিক ও প্যাকেজিং শিল্পের বিকাশে কাঁচামালের আমদানিতে শুল্কহার হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমদানি পর্যায়ে শিল্পের কাঁচামালের ওপর আগাম কর হ্রাস করে ৪ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের রেয়াত গ্রহণের সময়সীমা বাড়িয়ে চার করমেয়াদ করা হয়েছে। পরিবহন সেবার ৮০ শতাংশ রেয়াতযোগ্য করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। আসছে বাজেটেও সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।  ভারী প্রকৌশল শিল্প, রপ্তানি খাতের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং দেশীয় শিল্পের বিকাশে অটোমোবাইল, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার শিল্পসহ কয়েকটি শিল্প খাতে বিদ্যমান মূসক ও সম্পূরক শুল্কের অব্যাহতি বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল সেট উত্পাদনের ওপর মূসক অব্যাহতি এবং সংযোজন খাতে ৫ শতাংশ হারে মূসক রাখা হয়েছে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –