• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দিনমজুর ও মধ্যবিত্তদের তালিকা করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৭ এপ্রিল ২০২০  

করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া দৈনন্দিন কর্মের মানুষ ও মধ্যবিত্তদের তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে করোনা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের চিকিৎসা বীমাসহ তাদেরকে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দেয়ার পাশাপাশি যেসব চিকিৎসক এই সময়ে দায়িত্ব পালন করছেন না তারা ভবিষ্যতে ডাক্তারি করতে পারবেন কি না সেটাও দেখা হবে বলে জানান। 

আজ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সিলেট ও চট্রগ্রাম বিভাগের ১৫ জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সময় তিনি একথা বলেন। দুই বিভাগের জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা এতে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এর  বাইরে যারা খেটে খেত, এই করোনার কারণে তাদের কাজ নেই।

আবার অনেকে আছেন মধ্যবিত্ত। তারা অনেকে হাত পাতবে না, সাহায্য চাইতে আসবে না, মুখ বুজে কষ্ট সহ্য করবে। এই শ্রেণির লোকের সঠিক তালিকা করতে হবে। কেউ যেন বাদ না যায়। সত্যিই যাদের অভাব রয়েছে তাদের তালিকা যেন হয়, তাদের কাছে যেন খাবারটা পৌঁছায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি খাদ্য মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কেও কাজ করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, তালিকা করে রেশন কার্ড করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। রেশন কার্ড থাকলে সুবিধা হবে। এসময় প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের বড় ধাক্কা আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই ভাইরাসটির প্রসারিত হওয়ার বিষয়টি অংকের মতো। এপ্রিলে আমাদের দেশে এর ধাক্কা ব্যাপকভাবে আসবে। এ রকমই আলামত পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের জন্য দুঃসময় আসছে। সব জায়গা থেকে এ ধরনের খরব পাচ্ছি। এ ধরনের কিছু প্রতিবেদনও আমরা দেখতে পাচ্ছি। সেই অবস্থায় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কেউ একটু অসুস্থতা দেখতে পেলে চিকিৎসা করাবেন। কেউ লুকাবেন না। লুকাতে গেলে নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। অন্যদের ক্ষতি করবেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়নের গতি যখন অব্যাহত। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যখন কাজ করে যাচ্ছি ঠিক তখনই করোনা ভাইরাস। সারা বিশ্বে প্রলয় সৃষ্টি করেছে। এজন্য সব কিছু স্থবির। এর প্রভাবটা বাংলাদেশে এসে পড়েছে। এটা পড়াও খুব স্বাভাবিক। সারা বিশ্বের ২০২টি দেশ এর ভুক্তভোগী। প্রতিনিয়ত এটা বাড়ছে। আমরা শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি এর প্রভাবে মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। এটা ঠিক যে একটা স্থবিরতা যেন এসে গেছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে। আমাদের অর্থনৈতিক যে প্রবৃদ্ধি আমরা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলাম তাও কিন্তু থেমে গেছে। এটা আমাদের দেশ নয় সারা বিশ্বব্যাপী। জানমাল রক্ষা করতে হবে। অর্থনীতি গতিশীল রাখতে হবে। উন্নত বিশ্ব এরা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে। এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। সবাইকে কাজ করে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে সতর্কবাণী দিয়েছি এই সতর্কতা মেনে চলবেন। তাহলে অনেক জীবন রক্ষা পাবে। তিনি বলেন, মানুষের দুর্ভোগের সময় ত্রাণ নিয়ে কেউ নয়-ছয় করবেন না। তাহলে কিন্তু রক্ষা পাবেন না। নয়-ছয় করলে আপনাকে ধরা পড়তেই হবে। টাকা-পয়সা কিন্তু লুকানো যায় না। দুঃসময়ে কেউ দুর্নীতি করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে, তাকে কিন্তু আমি ছাড়বো না। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের অবস্থার মতো ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমরা উৎপাদন বাড়ালে বিদেশের কাছে হাত বাড়াতে হবে না, এমনকি উদ্বৃত্ত থাকলে আমরা তাদের সাহায্য করতে পারব।

তিনি বলেন, যে কোনো পরিস্থিতি যেন আমরা মোকাবিলা করতে পারি সেজন্য খাদ্য উৎপাদন করতে হবে এবং প্রস্তুত থাকতে হবে। এসময় প্রধানমন্ত্রী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে যেসব সরকারি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, সরকারি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী যারা কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরু থেকে চিকিৎসা সেবা দিতে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছেন, তাদের তালিকা করার জন্য এরই মধ্যে নির্দেশ দিয়েছি। যারা এ ধরনের সাহসী স্বাস্থ্যকর্মী, তাদের উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন। উৎসাহের সঙ্গে সঙ্গে তাদের আমি বিশেষ সম্মানিও দিতে চাই। সে জন্য তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। তালিকা তৈরির কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে যদি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন তাহলে পদবী অনুযায়ী তাদের ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা দেয়া হবে এবং আল্লাহ না করুক কেউ মারা গেলে তার ৫ গুণ অর্থ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়ার কথাও জানান তিনি।

আরেকটি বিষয় দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী রোগাক্রান্ত, হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে সে চিকিৎসা পায়নি। এটি খুবই কষ্টকর। দুঃখজনক। কোথায় কোথায় গিয়ে ওই ছাত্র চিকিৎসা পাননি এবং সেখানে কোন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেননি আমি সেটা জানতে চাই। এই সময় যারা মানবকিতা হারায় আমি মনে করি তাদের এই পেশায় থাকার কোন প্রয়োজন নেই। তাদেরকে বের করে দেয়া উচিত বলে মনে করি। তিনি বলেন, যারা এই সময়ে দায়িত্ব পালন করছেন না তারা ভবিষ্যতে ডাক্তারি করতে পারবেন কিনা সেটাও দেখা হবে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে ঘরে ফিরে যাওয়ার সংখ্যা বেশি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা একদিক থেকে ভালো খবর। তবে প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাক, এটা চাই না। আমরা চাই দ্রুত এটি নিয়ন্ত্রণ হোক। এর জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এখন বিশ্বব্যাপী এই ঘটনা ঘটেছে, উন্নত দেশও করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। বাঙালিরাও অনেক জায়গায় মৃত্যুবরণ করছে। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, আমি তাদের সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৩ জন, মৃতের সংখ্যা ১২। তবে যারা মারা গেছেন তারা বেশিরভাগই বয়স্ক, শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন। তাদের অন্যান্য জটিলতা ছিল বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –