• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

জাককান ইবিতে শিবির নেতাকে নিয়োগ দিতে এসে ধরা খেলেন ইবি অধ্যাপক

লালমনিরহাট বার্তা

প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮  

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দিতে এসে ধরা খেয়েছেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড.মাহবুবুল আরফিন।

গত ২৯ অক্টোবর ওই বিভাগের নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। ইবি অধ্যাপক মাহবুবুল আরফিন সেই বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্য (এক্সপার্ট) হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সূত্রে জানা যায়, ওই বোর্ডের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন ড. দেলোয়ার হোসেন নামের এক প্রার্থী। পিতা- মৃত শহিদুল ইসলাম, গ্রাম-উচলিয়াপাড়া (বড়বাড়ী), সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, রোল নম্বর- খঐজগ-৬১। তিনি ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ হতে ২০০৩ সালে  স্নাতক (২.৭৫) এবং বেসরকারী আশা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ২০১২ সালে মাস্টার্স (৩.৭৩) ডিগ্রী অর্জন করেন।

অধ্যাপক আরফিন নিয়োগ বোর্ডের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে দেলোয়ারকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করান এবং মৌখিক পরীক্ষায় কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলেও বোর্ডকে প্রভাবিত করে তাকে নিয়োগ দিতে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু জাককাইনবি উপাচার্য অধ্যাপক এএইচএম মোস্তাফিজুর রহমান অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে অসম্মত হলে তিনি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।

পরে বিষয়টি বিভিন্ন মহলে জানাজানি হয় এবং স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হয়। এদিকে বিষয়টি হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগীয় সভাপতিসহ শিক্ষকদের নজরে আসে। ওই বোর্ডে বিভাগীয় সভাপতি মাসুদ রানার স্ত্রীও প্রার্থী হিসেবে ছিলেন। ফলে তিনি বিশ^বিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী পূর্ব ঘোষণা দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া হতে বিরত ছিলেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. দেলোয়ার ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের দাপুটে এবং প্রভাবশালী শিবির নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলের। তার অত্যাচারে ২০০২-২০০৩ সালে ছাত্রলীগের ছেলেরা মুখ খুলতে ভয় পেত। এই দেলোয়ার অধ্যাপক আরফিনের সহোদর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুসারে, কোন শিক্ষকের নিকট আত্মীয় পরীক্ষায় অংশ নিলে তিনি ওই পরীক্ষার কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারবেন না, নিয়োগ বোর্ডের ক্ষেত্রেও একই বিধান। তবে অধ্যাপক মাহবুবুল আরফিন তথ্য গোপন করে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নসহ বোর্ডকে প্রভাবিত করে নিজের ভাইকে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা চালান।

এদিকে অধ্যাপক আরফিনের এসব তৎপরতার বিষয়ে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি মাসুদ রানা অনুষদীয় ডীনের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। সেখানে তিনি অধ্যাপক আরফিনের বিরুদ্ধে আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।

বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। পরে সেই কমিটি তদন্ত শেষে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৬২তম সিন্ডিকেট সভায় তথ্য গোপনের অভিযোগে অভিযুক্ত করে বিষয়টি ‘গর্হিত অন্যায় ও নৈতিকতা বিরোধী অপরাধ’ চিহ্নিত করে বিশেষজ্ঞ সদস্য হতে অপসারণ ও আজীবনের জন্য দূর্নীতিবাজ শিক্ষককে কালো তালিকাভুক্ত করে এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার কর্মকান্ডে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন একইসাথে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অফিসিয়ালি প্রেরণের নির্দেশ দেয়।

এ বিষয়ে জাককানইবির হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান মাসুদ রানা বলেন, ‘আমার স্ত্রী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ায় পূর্ব ঘোষণা দিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে নিয়োগ বোর্ডে থাকিনি। অথচ ইবির ড. আরফিন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আপন ভাইকে নিয়োগের চেষ্টা করে গর্হিত অপরাধ করেছেন।’ রেজিস্ট্রার হুমায়ুন কবিরের কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘ঘটনা সত্য। সিন্ডিকেটে বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং প্রার্থীর সকল প্রকার মূল্যায়নে অংশ নিয়ে তথ্য গোপন করে প্রফেসর আরফিন নিজের ভাইকে নিয়োগের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গর্হিত অন্যায় ও নৈতিকতা বিরোধী অপরাধ করায় বিশেষজ্ঞ সদস্য হতে অব্যহতি এবং কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রকার কর্মকান্ডে অংগ্রহণ করতে না পারেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অবহিত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও অফিসিয়ালি বিষয়টি জানানো হয়েছে।’

এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিন এবং ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারীর মুঠোফোনে কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেন নি।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –