• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

কুয়াকাটার ভিন্ন রূপ দেখুন

লালমনিরহাট বার্তা

প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০১৮  

আমরা তাকিয়ে আছি পূর্ব দিগন্তের অসীম সৌন্দর্য ভরা সমুদ্র জলরাশির দিকে। সে জলে সূর্য মিটমিট করে হাসছে। যেন সমুদ্রের জলে সোনার আচ্ছাদনী। কুয়াকাটা এসেছি কেবল সমুদ্র সৈকত থেকে এমন সূর্যোদয় দেখে মুগ্ধ হতে! তবে আমাদের আসাটাও কম রোমাঞ্চকর ছিলোনা!

সন্ধ্যায় অফিস শেষ করে রাত সাড়ে আটটার লঞ্চ ধরতে পারবো কি পারবো না- এমন সংশয় নিয়ে সদরঘাটের উদ্দেশ্যে আমাদের রওনা হওয়া। তবে সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে সদরঘাট পৌঁছে গেলাম পৌনে আটটায়। সুন্দরবন-১০-এ আগে থেকেই কেবিন বুকিং দেয়া ছিলো। লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশ্যে ভাসলো পৌঁনে নয়টায়। লঞ্চের স্পেশাল মুরগী ভুনা, আলু ভর্তা আর ডাল চচ্চড়ি দিয়ে ডিনার সেরে খোলা আকাশ ভর্তি তারা, বিশুদ্ধ বাতাসের দোল খেলাম কিছুক্ষণ। এরপর চারতলার মাস্টার ব্রিজের সামনের খোলা জায়গায় গোল হয়ে বসে গান-বাজনা আর প্রকৃতি দর্শন করতে করতে কখন যে রাত আড়াইটা বেজে গেলো কেউই টের পেলাম না।

ভোর পাঁচটায় ঘুমের মধ্যে মনে হলো লঞ্চটা একটা ধাক্কা খেলো। বুঝে গেলাম আমরা এখন বরিশাল। সকাল সাতটায় লঞ্চ থেকে নেমে সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যাওয়া আসার জন্য আগে থেকেই গাড়ি ভাড়া করা ছিলো। সকাল সাড়ে আটটার দিকে রওনা হলাম কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে। তবে এখান থেকে বাসে করেও যাওয়া যায়।

কুয়াকাটায় পৌঁছালাম দুপুর ১২টা নাগাদ। হোটেলে গিয়ে সবাই ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবারও সেরে নিলাম। সমুদ্র থেকে একেবারে কাছে আমাদের রিসোর্ট সিন্ড্রেলা। রাস্তায় দাঁড়ালে দু’চোখে পড়ে সারি সারি নারিকেল গাছ। মূল সৈকত থেকে একটু দূরে হবার কারণে বেশ নির্জন এই বালুকাবেলা। এখানে সমুদ্র বেশ উপভোগ্য, মাছ ধরার নৌকা আর জাল টানার দৃশ্য চোখে পড়লো। সব মিলিয়ে যেনো ক্যানভাসে আঁকা ঝকঝকে ছবি। এখানে চলাচলের প্রধান বাহন ভ্যান আর মোটর সাইকেল। রিকশাও আছে তবে সবাই মোটর সাইকেলের উপর নির্ভরশীল।

ঠিক বিকেল চারটায় হোটেলের নিচে ভাড়া করা বাইকাররা চলে আসলো। ১৩টা বাইক ভাড়া করেছিলাম। এতগুলা বাইক একসাথে আসায় হোটেলের নিচে তখন সরগরম অবস্থা। একটা বাইকে দুইজন বসা যায়। কিন্তু আমরা একজন করেই বসেছিলাম। বীচের একদম তীর ঘেঁষে বাইকগুলো সারি বেঁধে এগিয়ে যেতে থাকে পশ্চিম দিকে। লেবুর বন পার হয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম ৩নদীর মোহনায়। ওপারে দেখা যায় সুন্দরবনের পূর্বাংশ (ফাতরার বন)।

মোহনায় নেমেই হেঁটে চললাম সমুদ্র সৈকত অভিমুখে। নীল আকাশে সাদা মেঘ আর নারিকেল গাছের সবুজ হাতছানি সত্যি মনোরম। শীতকাল বলেই পর্যটকদের ভিড়। তবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো নয়। সৈকত পাড়ে সারি সারি কাঠের বিছানা আর ছাতা চোখে পড়লো। আমরা একটা ছাতা ভাড়া নিয়ে তার নিচে আশ্রয় নিলাম। তা অল্প সময়ের জন্য।

সানসেট পয়েন্ট থেকে ডুবন্ত সূর্য দেখলাম। এককথায় অদ্ভুত সুন্দর। অদ্ভুত তার আলোকছটা। ডিমের কুসুমের মতো সূর্যটা দূর সমুদ্রের কোথাও যেনো হারিয়ে যাচ্ছে।

রাতের খাবার ছিলো দারুণ। কোরাল মাছ, ডিম, ভর্তা-ভাজি মিলে যেন একবারে নিজের ঘরের রান্না। সে রাতে আমরা অনেকক্ষণ গল্প করে কাটাই। তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। পরদিন ভোরে ঘুম ভাঙে বাইক ড্রাইভার শামিমের কলে। সেদিনের সূর্যাস্তের কথাতো প্রথমেই বললাম! সূর্যাস্ত দেখা শেষে ঠিক করলাম আজ কুয়াকাটা ঘুরে দেখার পাশাপাশি শুটকি পল্লীও যাবো। বীচের তীর ঘেষে চলতে চলতে একে একে দেখলাম কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান, গঙ্গামতীর চর, ঝাউবন, কাউয়ার চর, লাল কাঁকড়ার চর, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ বিহার, রাখাইন পল্লী, কুয়াকাটার কুয়া।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে মিশ্রীপাড়ার দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। মিশ্রীপাড়া রাখাইন পল্লী হিসেবেই পরিচিত। সীমাবৌদ্ধ বিহারের অবস্থান এখানেই। বিশাল বৌদ্ধ মন্দিরটি দেখে মুগ্ধ হতে অনেকটা বাধ্য! অনেকের মতে এটি দেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দির। বৌদ্ধ মন্দিরটির পাশেই রয়েছে একটি কুয়া। বৌদ্ধ মন্দির আর কুয়া দেখা শেষে ফিরে আসি আবার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে। ঝিনুক শামুকের মার্কেট ঘুরে বেড়াই। আবার গিয়ে বসি সমুদ্র সৈকতের পাশে।

রাতে বারবিকিউর আয়োজন করেছিলাম। হোটেলের বারবিকিউ জোনটা খুব সুন্দর। মেন্যুতে ছিলো- চিকেন বারবিকিউ, রুপচাঁদা ফ্রাই, প্রন বারবিকিউ, কোরাল বারবিকিউ আর পরোটা। খাওয়া শেষে রাতে আরেকদফা বীচ ভ্রমন, গান-বাজনা, আড্ডা শেষে ঘুমাতে গেলাম।

ফেরার কেবিন বুকিং দেয়া ছিলো সুন্দরবন-১১-তে। কুয়াকাটার প্রতিটা মূহুর্ত সাগরকন্যার রূপ আমাদের মুগ্ধ করেছে। শেষ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে শশী মিস্টি দোকানের গরম গরম রসগোল্লা। এককথায় অমৃত!

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –