• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

কুড়িগ্রামে কৃষিতে বদলাচ্ছে চরবাসীর ভাগ্য

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

শুধু নিজের পরিবার নয়, চর সারোডোবের প্রায় প্রতিটি পরিবারকেই অভাব-অনটনের দুর্দশাগ্রস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কৃষক মো. মজিবর রহমান (৫০)। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নে ধরলা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত চরটিতে সে সময় চাষাবাদ হতো সনাতনী পদ্ধতিতে। ফসল হতো খুবই কম। মাসের পর মাস কাউনের ভাত খেয়ে থেকেছে এ অঞ্চলের মানুষ। তবে এখন পরিস্থিতি বদলেছে চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য। মজিবর রহমানের মতো চরাঞ্চলের কৃষকদের কাছে অভাবগ্রস্ত দুর্দশার সে দিনগুলো এখন শুধু অতীতের গল্প।

কৃষক মজিবরের জীবনে পরিবর্তনের শুরু হয় প্রায় ৮ বছর আগে। দেশি-বিদেশি কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় চর সারোডোবের দুয়েকজন কৃষক ততদিনে সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিয়েছেন। তাদের দেখাদেখি সনাতন কৃষি পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসেন মজিবর রহমানও। দেশি একটি এনজিও থেকে বীজ সংগ্রহ করে ৫০ শতক জমিতে ভুট্টার চাষ শুরু করেন তিনি। ভালো ফলন ও মুনাফার দেখা মেলায় প্রতি বছর ভুট্টা চাষের জমির পরিমাণ বাড়িয়েছেন তিনি। একক একটি ফসলে আটকে না থেকে বৈচিত্র্য এনেছেন চাষাবাদে। বর্তমানে ভুট্টার পাশাপাশি মরিচ, পেঁয়াজ ও কলার আবাদ করছেন মজিবর রহমান তিনি জানান কৃষি বিভাগের সহযোগিতা বাড়লে এখানকার কৃষকদের আরো ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে।

কয়েক বছর আগেও কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের কৃষকদের মারাত্মক অভাব-অনটনের মধ্যে দিন পার করতে হয়েছে। চরাঞ্চলের জমিতে তখন কাউন, চিনা, ধান, সরিষা ও গমের বাইরে অন্য কোনো ফসল আবাদ করা সম্ভব হতো না। উপরন্তু সনাতন পদ্ধতিতে আবাদ ও সেচের ব্যবস্থা না থাকায় ফলনও হতো অনেক কম। কিন্তু বর্তমানে এখানকার কৃষকরা উন্নত জাতের বোরো ধানের পাশাপাশি ভুট্টা, গম, সরিষা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম, আলু, টমেটো, মসুর ডাল, খেসারি ডাল, মুগডাল, মরিচ, পেঁয়াজসহ সবজি ও অন্যান্য ফসলও চাষ করতে পারছেন। কৃষি বিভাগসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় কৃষি পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে এগিয়ে চলেছেন চরাঞ্চলের কৃষকের ভাগ্য বদলে দিয়েছে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মন্জুরুল হক জানান, চরাঞ্চলসহ জেলার ১ লাখ ১৯ হাজার কৃষককে কৃষি প্রণোদনার আওতায় উন্নত জাতের বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের কৃষকদের বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিনা মূল্যে বীজ ও সার দেয়ার পাশাপাশি লাভজনক ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকায় চর রয়েছে সাড়ে চারশর বেশি। এসব চরের মোট জমির পরিমাণ ৪৬ হাজার ৪২৮ হেক্টর। এর মধ্যে চাষাবাদ হচ্ছে ৩৫ হাজার ৮৭ হেক্টরে। এসব আবাদি জমির বেশির ভাগেই এখন লাভজনক ফসল ফলাচ্ছেন কৃষকরা। উৎপাদিত ফসল নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পর বিক্রি করছেন বাজারে।

চরাঞ্চলের জীবনমান পরিবর্তনে স্থানীয়দের কৃষি ব্যবস্থা উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে দুই শতাধিক এনজিও। বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় এসব এনজিও চরাঞ্চলের কৃষকদের লাভজনক ফসল চাষে উদ্বুদ্ধকরণে কাজ করে যাচ্ছে। বিনা মূল্যে সরবরাহ করছে উন্নত জাতের বীজ, সার ও কীটনাশক। বিভিন্ন ফসল, সবজি, ডাল ও তেলবীজ আবাদে সহায়তার পাশাপাশি এসব সংস্থা এখন গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালনেও সহযোগিতা করছে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –