• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

‘কবর দেওয়ার জায়গাও নাই বাহে’

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

এক একর আবাদি জমি, পুকুর ভরা মাছ আর গোয়াল ভরা গরু ছিল। সবগুলা তিস্তা নদী গিলে খাইছে। পাঁচবার ভাঙ্গতে হইছে বাড়ি। এখন মরলে কবর দেওয়ার মতো জায়গা নাই বাহে। বাঁধ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ভোট নেয়। এমপি মন্ত্রী হইলে আর দেখা পাওয়া যায় না। হামার দু:খ কায়ো দেখে না বাহে।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে সাংবাদিকদের কথাগুলো বলেন তিস্তা নদীর করাল গ্রাসে বিধ্বস্ত লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের সিংগিমারী গ্রামের বয়োবৃদ্ধ মাহবুবার রহমান (৮৫)।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে তিস্তা নদীর বাম তীরে তাদের সিংগিমারী গ্রামের ১০ পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে। গ্রামটির বাসিন্দা মানিক, তোফাজ্জল, মোকলেছার, মন্টু, মোজাহার, মতিন, রফিকুল, দুলাল, মকবুল ও আব্দুল জলিলকে রাতের মধ্যে ঘর বাড়ি সরাতে হয়েছে। কেউ অন্যের ডোবা জমিতে বা বাঁশ বাগানে ঘর আপাতত রেখেছেন। কেউ জায়গা না পেয়ে ঘর খুলে রাস্তার পাশে স্তূপাকারে রেখে খুঁজছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই।

একবার বা দুই বার নয়। কেউ কেউ ১৫ থেকে ২০ বার পর্যন্ত তিস্তার করাল গ্রাসে বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছেন অনেকে। দ্বিতীয়বার থেকে ঠাঁই হয়েছে অন্যের পরিত্যক্ত জমিতে। তবুও মাত্র একটি ঘর বা টিনের নিচে তাদের মানবেতর জীবন-যাপন। কেউ কেউ জমি বন্দক নিয়ে ঘর বাড়ি গড়ে তুলেন। কিন্তু রক্ষা নেই, বছর অতিবাহিত না হতেই আবার ভাঙনের কবলে পড়তে হয়। তাই ত্রাণ নয়, তিস্তা নদী খনন করে স্থায়ী বাঁধ দিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

জানা গেছে, গত সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে হঠাৎ বাড়তে থাকে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ। যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে পরদিন রাত ১ টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্যায় প্লাবিত হয় নদী তীরবর্তী অঞ্চল। 

এর একদিন পর বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পানি প্রবাহ কমে গিয়ে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি ঘটে। স্বল্প সময়ের এ বন্যায় তিস্তা পাড়ের কৃষকদের আমন ধান ক্ষেত ডুবে যায়। পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল জেলার ৫টি উপজেলার পাঁচ থেকে সাত হাজার পরিবার।

বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর বাড়ি মেরামত করতে না করতেই ভাঙনের কবলে পড়েছে তিস্তার বাম তীরের মানুষ। বন্যার পানি কমলেই তিস্তার তীরে ভাঙন শুরু হওয়া তিস্তা নদীর একটা চিরাচরিত রূপ বলে দাবি করেন তিস্তা পাড়ের মানুষ।সিংগিমারী গ্রামের মন্টু মিয়া বলেন, ভাঙনের কবলে পড়ে গত এক মাসে তিনবার বাড়ি সরাতে হয়েছে। জীবনে ১৮ থেকে ২০ বার তিস্তার ভাঙনে বসতভিটা হারিয়েছি। বন্যা আর ভাঙনের সময় রাত জেগে পাহারা থাকতে হয়। ঘর বাড়ি ভেসে যাওয়ার আতঙ্কে কাটে রাত। ত্রাণ চাই না, স্থায়ী বাঁধ চাই। যাতে ডাল ভাত খেয়ে নিশ্চিন্তয় ঘুমাতে পারি।

তিস্তা পাড়ের দক্ষিণ বালাপাড়ি গ্রামের জামিলা বেগম বলেন , এ বন্যা স্থায়ী না হলেও স্রোতে গতি ছিল খুব বেশি। অনেক জায়গায় রাস্তাঘাট নষ্ট হয়েছে। বাড়ি ঘরের অনেক জিনিসপত্র পানিতে ভেসে গেছে। ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর মত রাস্তাও নেই। চারদিকে পানি; তাদেরকে স্কুলে পাঠানোও অনিরাপদ। পেটের দায়ে শ্রম বিক্রি না করে সন্তানদের স্কুলে রাখতে গেলে না খেয়ে মরতে হবে।

গেল ভোটের সময় মন্ত্রী বললেন, উজানে তিস্তার বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়েছে। ভোট দিলে বাকী কাজ শেষ হবে। ভোট নিয়া এখন আর বাঁধের কোন খবর নাই। সবাই খালি গরিবকে ধোঁকা দেয়- যোগ করেন জামিলা বেগম।

সদর উপজেলার কালমাটি বাগডোরা গ্রামের বাসিন্দা তোফাজ্জল বলেন, কতবার আর বাড়ি সরাই? কেউ তো বাড়ি করার মত জমি দিতে চায় না। জীবনে আটবার বাড়ি ঘর বিলিন হয়েছে। রাস্তার ধারে করা টিনের চালার পাশেই বয়ে চলছে হিংস্র তিস্তা নদী। যেকোনো মুহূর্তে ভেসে যাবে ঘর বাড়ি। কিন্তু জায়গার অভাবে সরাতে পারছি না।

তিনিও  তিস্তা নদীর স্থায়ী বাঁধের দাবি জানান।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার বলেন, ইতিপূর্বে ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোকে পরিবার প্রতি দুই বান ঢেউটিন ও ৬ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। গেল বন্যার পর নতুন করে ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর তালিকা করতে বলা হয়েছে। তালিকা পেলে তাদেরকেও পুনর্বাসন করতে টিন ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –