• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব

লালমনিরহাট বার্তা

প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮  

শিক্ষা মানুষের অন্তরকে বিকশিত করে। মানব সভ্যতার এতোটা এগিয়ে আসার মূলে রয়েছে শিক্ষা। শিক্ষাহীন মানুষ পশু বা প্রাণীর কাছাকাছি। পশু-পাখি, প্রাণীর ও আলাদা শিক্ষা রয়েছে, হয়তো তার ধরণ ভিন্ন। প্রাগৈতিহাসিক কাল হতে মানুষ প্রবীণ কর্তৃক নবীনদের শিক্ষা দেয়ার পদ্ধতিগত জ্ঞানলাভের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আসছে।

পবিত্র কোরআন শরীফে প্রথম নাজিলকৃত বাক্যে শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন শরীফে ইরশাদ করেন, ‘পড়! তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একবিন্দু জমাট রক্ত থেকে। পড়! আর তোমার প্রতিপালক পরম সম্মানিত। যিনি কলমের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।’ (সূরা আলাক, আয়াত: ১-৫)

প্রথম মানব, নবী ও আদি পিতা হজরত আদম আলাইহিস সালামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশিত হয়েছিলো শিক্ষা এবং পাণ্ডিত্যর মাধ্যমে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর তিনি (আল্লাহ) আদমকে বস্তুজগতের যাবতীয় জ্ঞান শিক্ষা দিলেন।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ৩১)।

তখন ফেরেশতাদের বলা হয়েছিলো, হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সম্মান সূচক সেজদা করতে। সকল ফেরেশতা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা করলেও একমাত্র অহংকারী ইবলিশ সিজদা করেনি। এরপর থেকে ইবলিশকে আল্লাহ তায়ালা অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত করে দেন।

ইসলামে যেকনো বিষয়ে জানার জন্যে জ্ঞানী লোকের দ্বারস্থ হওয়ার জন্যে বলা হয়েছে। পৃথিবীতে সব মানুষের সব কিছু জানা হয়তো সম্ভব নয়। তাই মহাজ্ঞানী আল্লাহ তায়ালা জ্ঞান ও শিক্ষা অর্জনের জন্যে গুরুর কাছে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।

পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “যদি তোমাদের কোনো বিষয়ে জানা না থাকে, তবে আহলুজ জিকির তথা জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস করো।” (সূরা: নাহল, আয়াত: ৪৩)।

ইসলামে দ্বীনী শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতি তত উন্নত। একটি দেশের উন্নয়নের পথে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী মূল ভূমিকা রাখতে পারে। জাতিসত্তার সৃষ্টি হয় শিক্ষার মাধ্যমে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি শিক্ষা।

আমরা উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেখতে পাই সেখানে শিক্ষার হার প্রায় শতভাগ, যে কারণে তারা সমৃদ্ধি ও উন্নতির চরম শিখরে উঠতে সক্ষম হয়েছে। তাই ইসলাম সবসময় যেকোনো বিষয়ের ওপর শিক্ষার গুরুত্ব দেয় শুধুমাত্র হারাম বিষয়সমূহ ছাড়া। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম জ্ঞান অর্জন ফরজ করে দেন। মহানবী (সা.) বলেন ‘প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ)

ইসলামে শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি শিষ্টাচার শিক্ষা নেয়ার ও আদেশ দেয়া হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত নবীজি (সা.) বলেন, “তোমরা জ্ঞান অর্জন কর এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব শিষ্টাচার শিখ, তোমরা তাকে সন্মান কর যার কাছ থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন করছে”। (আল মুজামুল আউসাত-৬১৮৪)।

খেলাফতের যুগেও ইসলাম প্রত্যেকের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছিলো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দুনিয়ায় অসংখ্য নেয়ামত দিয়েছেন যার মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভাব প্রকাশ শিখিয়েছেন, শিক্ষা স্বরূপ দিয়েছেন পবিত্র কোরআন এবং হাজারো নিদর্শন। পবিত্র কোরআন শরীফে সূরা আর রাহমানে আল্লাহ বলেন, “দয়াময় আল্লাহ, তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে। তিনিই তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে।” (সূরা আর-রাহমান : ১-৪)

যিনি শিক্ষা অর্জন করতে বেরিয়ে পড়েন তিনি আল্লাহর রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ইলম অনুসন্ধানে বের হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে।” (তিরমিজি : ২৬৪৭)।

শিক্ষা অর্জনের জন্যে কলমের প্রয়োজন হয়। কলমের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এবং কলমের গুরুত্ব অনুধাবনের জন্যে পবিত্র কোরআনে একটি সূরা নাজিল হয়। যে সূরার নাম 'আল কলম'।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিক এবং শুদ্ধ শিক্ষা অর্জনের তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –