• সোমবার ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ২২ ১৪৩১

  • || ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাসূলুল্লাহ (সা.) যাদের জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২৩  

 
বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের মধ্যে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন, তাদের বলা হয় আশারায়ে মুবাশশারাহ। তারা হলেন নবীদের পর উম্মতের সবচেয়ে উত্তম লোক।

এই ১০ জন আশারায়ে মুবাশশারাহ ছাড়াও রাসূল (সা.) আরো অনেক সাহাবির নাম উল্লেখ করে, আবার কারো জন্য ইঙ্গিতবাচক কথা বলে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন বলে হাদিসে উল্লেখ আছে।

তা ছাড়া তিনি একটি পরিবার, সাহাবিদের কিছু জামাতকেও জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জনের তালিকা নিয়ে বেশ কিছু হাদিসে এসেছে।

একটি হাদিসে এসেছে, আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, আবু বকর জান্নাতি, ওমর জান্নাতি, ওসমান জান্নাতি, আলী জান্নাতি, তালহা জান্নাতি, জুবাইর জান্নাতি, আবদুর রহমান ইবনু আওফ জান্নাতি, সাদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস জান্নাতি, সাঈদ জান্নাতি এবং আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ জান্নাতি। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৭৪৭)

এই ১০ জন নবীদের পর সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি, উম্মতের অগ্রগামী ব্যক্তি। কতই না সৌভাগ্য তাদের! এই ১০ জন ছাড়া আরো যাদের রাসূল (সা.) জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন হাসান ইবনু আলী (রা.), হুসাইন ইবনু আলী (রা.)।

রাসূল (সা.) তাদের উভয়ের সম্পর্কে বলেছেন, ‘হাসান ও হুসাইন দুজন জান্নাতের যুবকদের নেতা’। (সহিহ ইবনু হিব্বান, হাদিস: ৬৯৫৯)

এ ছাড়া হামজা ইবনু আব্দুল মুত্তালিব (রা.)। মুসতাদরাকে হাকেমের বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (সা.) বলেন, সাইয়িদুশ শুহাদা হলেন হামজা ইবনু আব্দুল মুত্তালিব। সুতরাং শহিদরা যদি জান্নাতি হন তাহলে তাদের নেতাও জান্নাতি হবেন।

জান্নাতিদের তালিকায় আছেন জাফর ইবনু আবি তালেব (রা.)। রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমি জান্নাতে জাফর ইবনু আবি তালিব (রা.)-কে ফেরেশতাদের সঙ্গে পাখির মতো উড়তে দেখেছি’। (জামে সগির, হাদিস: ৪৩৬৭)

জান্নাতিদের তালিকায় আছেন বিলাল ইবনে রাবাহ (রা.)। বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন ভোরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বিলাল (রা.)-কে ডেকে বলেন, হে বিলাল! তুমি জান্নাতে কী কারণে আমার আগে আগে থাকছ? যখনই আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছি সে সময়ই আমার আগে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। গত রাতেও আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছি এবং আমার আগে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি।

তারপর বিলাল (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কখনো আমি আজান দিলেই দুই রাকাত নামাজ আদায় করি এবং কখনো আমার ওজু ছুটে গেলেই আমি ওজু করি এবং মনে করি, আল্লাহ তাআলার নামে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা আমার কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ দুটি কারণেই (তোমার এ মর্যাদা)। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৮৯)

জান্নাতিদের তালিকায় আছেন ইয়াসার (রা.) এর পরিবার- সুমাইয়া (রা.), ইয়াসার (রা.), আম্মার ইবনু ইয়াসার (রা.) এর ওপর কাফিরদের নির্যাতন দেখে রাসূল (সা.) তাদের বলেছিলেন, ধৈর্য ধরো হে ইয়াসারের পরিবার, তোমাদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা আছে। (ইবনু আবিদ দুনিয়া, কিতাবুস সবর)

জান্নাতিদের তালিকায় আছেন বদরি সাহাবিরা। ইসলামের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধ বদরের প্রান্তরে ৩১৩ জন সাহাবি অংশগ্রহণ করেছেন। বদরি সাহাবিদের সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, যারা বদর ও হুদায়বিয়াতে অংশগ্রহণ করেছে তারা কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। (মুসনাদে আহমাদ)

জান্নাতিদের তালিকায় আছেন বায়াতে রিদাওয়ানের শপথকারী সাহাবিরা। ষষ্ঠ হিজরিতে হুদায়বিয়ার সন্ধি হয়। যেসব মুমিন হুদায়বিয়ার দিন গাছের নিচে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন তাদের প্রতি মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে জান্নাতের সুসংবাদ দেন। তাদের সংখ্যা এক হাজার ৪০০। জাবের (রা.) বলেন, হুদায়বিয়ার দিন আমাদের ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা পৃথিবীবাসীদের মধ্যে উত্তম মানুষ’। (বুখারি, হাদিস : ৪১৫৪)

রাসূল (সা.) আরো বলেন, ‘যারা গাছের নিচে বাইয়াত করেছে তাদের কেউ জাহান্নামে যাবে না’। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৬০)

এ ছাড়া বিভিন্ন হাদিস থেকে আরো কিছু সাহাবির ব্যাপারে রাসূল (সা.) কর্তৃক জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়ার কথা জানা যায়। তাদের মধ্যে আছেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), সাবিত ইবনু কুয়াইস (রা.), আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রা.), উকাসা ইবনে মুহসিন (রা.)-সহ আরো অনেকে। নারীদের মধ্যে অনেক সাহাবিকে রাসূল (সা.) জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন খাদিজা (রা.)। (বুখারি, হাদিস : ৩৮১৬)

জান্নাতিদের তালিকায় আছেন ফাতেমা (রা.)। উম্মু সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন ফাতিমা (রা.)-কে বলেন, তুমি মারইয়াম বিনতু ইমরান ছাড়া জান্নাতের নারীদের নেত্রী হবে। তখন তিনি আনন্দে হেসে উঠেছিলেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৯৩)

রাসূল (সা.) জান্নাতের সুসংবাদ আরো যাদের দিয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন আয়েশা (রা.)। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, জিবরাইল (আ.) একটি সবুজ রঙের রেশমি কাপড়ে তার [আয়েশা (রা.)] প্রতিচ্ছবি নবী (সা.) এর কাছে নিয়ে এসে বলেন, ইনি দুনিয়া ও আখিরাতে আপনার স্ত্রী। (বুখারি, হাদিস: ৫১২৫)

এ ছাড়া বিভিন্ন হাদিস থেকে আরো কিছু নারী সাহাবির ব্যাপারে রাসূল (সা.) কর্তৃক জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়ার কথা জানা যায়। তাদের মধ্যে আছেন একজন কালো নারী, যিনি মসজিদে নববীর খাদেম ছিলেন, রাসূল (সা.) তাকেও জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

ইয়া রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা! জান্নাতিদের মিছিলে আমাদেরও শামিল করুন। আমিন।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –