• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

ইসলামের শিক্ষাদান পদ্ধতি 

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২৩  

শিক্ষার বাণী নিয়েই ইসলামের আগমন ঘটে। পড়ার নির্দেশ দিয়ে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি প্রথম অহি নাজিল হয়েছিল। আল্লাহ তাআলার এই প্রথম নির্দেশ ছিল- اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ ‘(হে রাসুল! আপনি) পড়ুন, আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’

শিক্ষা ও উন্নয়নের ধর্ম ইসলামের প্রথম নির্দেশনা এটি। এ নির্দেশনার মাধ্যমেই নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নবুওয়তি জীবনের সূচনা করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা একটি সভ্য ও সুন্দর পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে যুগে যুগে মানব জাতির শিক্ষকরূপে নবি-রাসুলদের প্রেরণ করেছেন।

ইসলামের প্রথম নবি হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে শেষ নবি ও রাসুল মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষার আলোয় আলোকিত ও সুশিক্ষার ধারক ও বাহক ছিলেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে আরবের বর্বর ও মুর্খ একটি জাতি দুনিয়ায় নেতৃত্বের মর্যাদা পায়। পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে ইসলামের এ সুমহান শিক্ষার কথা।

আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের শিক্ষার অগ্রনায়ক হজরত নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে ঘোষণা করেন-
هُوَ الَّذِیۡ بَعَثَ فِی الۡاُمِّیّٖنَ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ ٭ وَ اِنۡ کَانُوۡا مِنۡ قَبۡلُ لَفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ ‘তিনিই সেই পবিত্র সত্ত্বা। যিনি নিরক্ষর লোকদের মধ্য থেকে একজনকে নবি করে পাঠিয়েছেন। যিনি তাদেরকে তার আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনাবেন, তাদের পবিত্র করবেন, তাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও প্রজ্ঞা। যদিও ইতোপূর্বে তারা ভ্রান্তিতে (অজ্ঞতায়) মগ্ন ছিলো।’ (সুরা জুমুআ: আয়াত ২)

হাদিসে পাকেও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ঘোষণা দেন এভাবে-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কোনো এক হুজরা থেকে বের হয়ে এসে মসজিদে প্রবেশ করেন। তখন সেখানে দুটি সমাবেশ চলছিল। একটি সমাবেশে লোকজন কোরআন তেলাওয়াত ও আল্লাহর জিকিরে মশগুল ছিল এবং অপর সমাবেশে লোকজন শিক্ষাগ্রহণ ও শিক্ষাদানে রত ছিল। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
كُلٌّ عَلَى خَيْرٍ هَؤُلاَءِ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ وَيَدْعُونَ اللَّهَ فَإِنْ شَاءَ أَعْطَاهُمْ وَإِنْ شَاءَ مَنَعَهُمْ وَهَؤُلاَءِ يَتَعَلَّمُونَ وَيُعَلِّمُونَ وَإِنَّمَا بُعِثْتُ مُعَلِّمًا
‘সকলেই কল্যাণকর তৎপরতায় রত আছে। এই সমাবেশের লোকজন কোরআন তেলাওয়াত করছে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করছে। তিনি চাইলে তাদের দান করতেও পারেন আবার চাইলে নাও দিতে পারেন। অন্যদিকে এই সমাবেশের লোকেরা শিক্ষাগ্রহণ ও শিক্ষাদানে রত আছে। আর আমি শিক্ষক হিসাবেই প্রেরিত হয়েছি। এরপর তিনি এদের সমাবেশে বসলেন।’ (ইবনে মাজাহ ২২৯)

সাহাবাগণ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুপম শিক্ষানীতি ও পদ্ধতিতে মুগ্ধ ছিলেন। হজরত মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘তার জন্য আমার বাবা ও মা উৎসর্গ হোক। আমি তার আগে ও পরে তার চেয়ে উত্তম কোনো শিক্ষক দেখিনি। আল্লাহর শপথ! তিনি কখনো কঠোরতা করেননি, কখনো প্রহার করেননি, কখনো গালমন্দ করেননি।’ (মুসলিম)

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেনই বা শ্রেষ্ঠতম শিক্ষক হবেন না, যখন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাকে সর্বোত্তম শিক্ষা ও শিষ্টাচার শিখিয়েছেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমাকে আমার প্রভু শিক্ষা দিয়েছেন, সুতরাং আমাকে তিনি সর্বোত্তম শিক্ষা দিয়েছেন। আমার প্রভু আমাকে শিষ্টাচার শিখিয়েছেন সুতরাং তিনি সর্বোত্তম শিষ্টাচার শিখিয়েছেন।’

নবিজির শিক্ষাদান পদ্ধতি: শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাফল্যের জন্য সর্বোত্তম শিক্ষকের শিক্ষাদান পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। যেহেতু নবিজি ছিলেন সর্বোত্তম শিক্ষক। তাই তাঁর জীবনে সর্বোত্তম শিক্ষাপদ্ধতি তুলে ধরা হলো-

উত্তম পরিবেশে শিক্ষাদান: শিক্ষাদানের জন্য উত্তম পরিবেশ অবশ্যক। বিশৃঙ্খল পরিবেশ শিক্ষার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষাদানের জন্য উত্তম পরিবেশের অপেক্ষা করতেন। তিনি শ্রোতা ও শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে স্থির হওয়ার এবং মনোসংযোগ স্থাপনের সুযোগ দিতেন। এরপর উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলে শিক্ষাদান শুরু করতেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘নিশ্চয় বিদায় হজের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন, মানুষকে চুপ করতে বল। এরপর তিনি বলেন, আমার পর তোমরা কুফরিতে ফিরে যেয়ো না...।’ (বুখারি ৭০৮০)

পাঠদানে ধীরস্থিরতা অবলম্বন: নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠদানের সময় থেমে থেমে কথা বলতেন। শ্রোতা ও শিক্ষার্থীরা যেনো তা সহজে গ্রহণ করতে পারে। শিক্ষার্থীরা যেন ঠিক বুঝে উঠতে পারে সে জন্য তিনি খুব দ্রুত কথা বলতেন না। আবার এতো ধীরেও বলতেন না যাতে কথার ছন্দ হারিয়ে যায়। বরং তিনি মধ্যম গতিতে থেমে থেমে পাঠ দান করতেন। প্রতিটি প্রশ্ন ও বাক্যের পর তিনি চুপ থাকেন এবং সাহাবারা উত্তর দেন আল্লাহ ও তার রাসুল ভালো জানেন। হাদিসে পাকে এসেছে- হজরত আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ছোট ছোট বাক্যে) বলেন, ‘তোমরা কী জানো- আজ কোন দিন? ...এটি কোন মাস? ...এটি কী জিলহজ নয়? ...এটি কোন শহর?’ (বুখারি ১৭৪১)

মুখের ভাষা ও দেহের সমন্বয়: নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো বিষয়ে আলোচনা করলে, তার দেহাবয়বেও তার প্রভাব প্রতিফলিত হতো। তিনি দেহ-মনের সমন্বিত ভাষায় পাঠ দান করতেন। কারণ, এতে বিষয়ের গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও প্রকৃতি সম্পর্কে শ্রোতা/শিক্ষার্থীগণ সঠিক ধারণা পেতে সক্ষম হতো। বিষয়টি তাদের অন্তরে গেঁথে যেতো। যখন তিনি জান্নাতের কথা বলতেন, তখন তার দেহে আনন্দের স্ফূরণ দেখা যেতো। জাহান্নামের কথা বললে ভয়ে চেহারার রঙ বদলে যেতো। যখন কোনো অন্যায় ও অবিচার সম্পর্কে বলতেন, তখন তার চেহারায় রাগ প্রকাশ পেতো এবং কণ্ঠস্বর উঁচু হয়ে যেতো। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বক্তব্য দিতেন, তার চোখ লাল হয়ে যেতো, আওয়াজ উঁচু হতো এবং রাগ বেড়ে যেতো। যেনো তিনি (শত্রু) সেনা সম্পর্কে সতর্ককারী।’ (মুসলিম ৪৩)

মিষ্টি ভঙ্গিতে কথা বলা: শিক্ষককে অনেক সময় শিক্ষার প্রয়োজনে গল্প-ইতিহাস বলতে হয়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাঠদানও এমন ছিল। তিনিও সময় সময় মিষ্টি ভঙ্গিতে গল্প বলতেন। এমন মিষ্টি ভঙ্গির গল্প-ইতিহাস শিক্ষার্থীদের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠতো। তিনি শিশুদের মতো ঠোঁট গোল করে তাতে আঙুল ঠেকাতেন। হাদিসে পাকে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘দোলনায় কথা বলেছে তিনজন। হজরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) ...। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি (মুগ্ধ হয়ে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তিনি আমাকে শিশুদের কাজ সম্পর্কে বলছিলেন। তিনি তার মুখে আঙুল রাখলেন। এবং তাতে চুমু খেলেন।’ (মুসনাদে আহমদ ৮০৭১)

শিক্ষার্থী থেকে জানা:
পাঠদানের সময় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন করতেন। যেনো তারা প্রশ্ন করতে এবং তার উত্তর খুঁজতে অভ্যস্ত হয়। কেননা নিত্যনতুন প্রশ্ন শিক্ষার্থীকে নিত্যনতুন জ্ঞান অনুসন্ধানে উৎসাহী করে। হাদিসে পাকে এসেছে- হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করেন, হে মুয়াজ! তুমি কী জানো বান্দার কাছে আল্লাহর অধিকার কী? তিনি বলেন, আল্লাহ ও তার রাসুল ভালো জানেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তার ইবাদত করা এবং তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করা।’ (বুখারি ৭৩৭৩)

দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা: অনেক সময় কোনো বিষয়কে স্পষ্ট করার জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপমা ও উদাহরণ পেশ করতেন। কেননা উপমা ও উদাহরণ দিলে যে কোনো বিষয় সহজে বোঝা যায়। হাদিসে পাকে এসেছে- হজরত সাহাল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আমি ও এতিমের দায়িত্ব গ্রহণকারী জান্নাতে এমনভাবে অবস্থান করবো। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর শাহাদত ও মধ্যমা আঙুলের প্রতি ইঙ্গিত করেন।’ (বুখারি ৬০০৫)

প্রশ্নগ্রহণ ও প্রশ্নের জন্য প্রসংশা করা: নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষাদানের সময় শিক্ষার্থীর প্রশ্ন গ্রহণ করতেন এবং প্রশ্ন করার জন্য কখনো কখনো প্রশ্নকারীর প্রসংশাও করতেন। তিনি প্রশ্ন শুনেই সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিতেন না। বরং তিনি চুপ থাকতেন এবং সাহাবিদের দিকে তাকিয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন এবং প্রশ্নকারীর প্রশংসা করেন। যাতে প্রশ্নটির ব্যাপারে সবার মনোযোগ সৃষ্টি হয় এবং সকলেই উপকৃত হতে পারে। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু আইয়ুব আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করে, আমাকে বলুন! কোন জিনিস আমাকে জান্নাতের কাছাকাছি করে দেবে এবং কোন জিনিস জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে নেবে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থামলেন এবং তার সাহাবাদের দিকে তাকালেন। এরপর বললেন, তাকে তাওফিক দেওয়া হয়েছে বা তাকে হেদায়েত দেওয়া হয়েছে।’ (মুসলিম ১২)

আমলি জ্ঞানদান করা:
শিক্ষার চেয়ে সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম হলো আমলি বা প্রয়োগিক শিক্ষাদান। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশিরভাগ বিষয় নিজে আমল করে সাহাবিদের শেখাতেন। হাতে-কলমে শেখাতেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
এজন্য হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলতেন, তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো কোরআন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, ‘তোমরা নামাজ আদায় কর, যেভাবে আমাকে আদায় করতে দেখো।’ (বায়হাকি ৩৬৭২)

বার বার পড়ায় উদ্বুদ্ধ করা:
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষার্থীদের মেধা ও স্মৃতিশক্তির ওপর নির্ভর না করে বার বার পড়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন; বরং বার বার পাঠ করে কঠিন বিষয়কে আয়ত্ব করতে বলতেন। হাদিসে পাকে এসেছে- হজরত আবু আইয়ুব আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা কোরআনের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হও। সেই সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার জীবন! তা উটের চেয়ে দ্রুত গতিতে স্মৃতি থেকে পলায়ন করে।’ (বুখারি ৫০৩৩)

শিক্ষাদানে মুক্ত আলোচনা ও মতবিনিময়: নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষার্থীদের মুক্ত আলোচনা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে বহু জটিল ও দুর্বোধ্য বিষয় সহজে শেখার প্রতি গুরুত্ব দিতেন। কারণ এতে সহজে উত্তম সমাধান পাওয়া যায়। সমাধান বের করা যায়। হাদিসে পাকে এসেছে-
যেমন হুনায়নের যুদ্ধের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বণ্টন নিয়ে আনসার সাহাবায়ে কেরামের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সঙ্গে মুক্ত আলোচনা করেন। একইভাবে বদর যুদ্ধের বন্দিদের ব্যাপারে সাহাবিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি: নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষার্থীদের শেখানোর সময় গুরুত্বপূর্ণ অংশ তিন বার পর্যন্ত পুনরাবৃত্তি করতেন। হাদিসে এসেছে- হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কথাকে তিনবার পুনরাবৃত্তি করতেন যেনো তা ভালোভাবে বোঝা যায়।’ (শামায়েলে তিরমিজি ২২২)

ভুল সংশোধনে শিক্ষাদান: নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভুল সংশোধনের মাধ্যমে শ্রোতা ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু মাসউদ আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অভিযোগ করেন যে, হে আল্লাহর রাসুল! আমি নামাজে অংশগ্রহণ করতে পারি না। কারণ অমুক ব্যক্তি নামাজ দীর্ঘায়িত করে ফেলে। আমি উপদেশ বক্তৃতায় তাঁকে সেদিনের তুলনায় আর কোনোদিন বেশি রাগ হতে দেখিনি। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে লোক সকল! নিশ্চয় তোমরা অনীহা সৃষ্টিকারী। সুতরাং যে মানুষ নিয়ে (জামাতে) নামাজ আদায় করবে, সে তা যেনো হাল্কা করে (দীর্ঘ না করে)। কেননা তাদের মধ্যে অসুস্থ্য, দুর্বল ও জুল-হাজাহ (ব্যস্ত) মানুষ রয়েছে।’ (বুখারি ৯০)

এ হলো নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষাদান পদ্ধতি। যার প্রতিটি পদ্ধতি উন্নত ও সর্বোত্তম। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ শিক্ষা পদ্ধতি ইসলামকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইসলামি শিক্ষাদান পদ্ধতি অনুযায়ী জ্ঞানার্জন করা ও শেখার তাওফিক দান করুন। এভাবে একে অপরকে শেখানোর দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –