• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিপদাপদ নেকি লাভের মাধ্যম

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

মুমিন বান্দার জন্য দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট, বিপদাপদ জীবনের একটি অপরিহার্য অনুসঙ্গ। বালা-মুছীবত উপেক্ষা করে মুমিন বান্দাকে জান্নাতের পথে চলতে হয়। দ্বীনের পথে এই কষ্ট স্বীকারের মধ্যেই রয়েছে সফলতা। সেকারণ এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বিপদগ্রস্থ মানুষ ছিলেন নবী-রাসূলগণ এবং তাদের সনিষ্ঠ অনুসারীবৃন্দ। (তিরমিযী হা/ ২৩৯৮; ইবনু মাজাহ হা/৪০২৩; মিশকাত হা/১৫৬২; সনদ হাসান)।

মুমিনগণ ইবাদতের মাধ্যমে যেমন আল্লাহর কাছে নেকির প্রত্যাশা করেন, ঠিক তেমনি বিদাপদকেও নেকি লাভের মাধ্যম মনে করেন। ফলে এই বিপদাপদ তার মানসিক প্রশান্তির উপাদানে পরিণত হয়।

আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) পূর্ববর্তী নেককার বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন,وَإِنْ كَانَ أَحَدُهُمْ لَيَفْرَحُ بِالْبَلَاءِ، كَمَا يَفْرَحُ أَحَدُكُمْ بِالرَّخَاءِ، ‘তাদের কেউ বিপদে এতটা প্রশান্ত ও উৎফুল্ল থাকতেন, যেমন তোমাদের কেউ ধন-সম্পদ প্রাপ্তিতে আনন্দিত হয়ে থাকে’। (ইবনু মাজাহ হা/৪০২৪; ‘ফিতান’ অধ্যায়-৩০, ‘বিপদে ধৈর্য ধারণ’ অনুচ্ছেদ-২৩; সনদ সহিহ)।

অর্থাৎ মানুষ সম্পদ লাভ করে যেমন আনন্দিত হয়, তারা বিপদাপদে পড়ে তেমনি খুশি হতেন। কেননা তারা মুসিবতকে সওয়াব লাভের মাধ্যম মনে করতেন এবং এটিকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচার ওসিলা মনে করতেন। সেজন্য তারা অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে যেমন প্রশান্তি পেতেন, তেমনি বিপদাপদের মাধ্যমেও প্রশান্তি লাভ করতেন।

হাফেজ ইবনুল ক্বাইয়িম (রহ.) বলেন, فَلَا رَيْبَ أَنَّ الْمُبْتَلَى إِذَا قَوِيَتْ مُشَاهَدَتُهُ لِلْمَثُوبَةِ سَكَنَ قَلْبُهُ وَاطْمَأَنَّ بِمُشَاهَدَةِ الْعِوَضِ. وَإِنَّمَا يَشْتَدُّ بِهِ الْبَلَاءُ إِذَا غَابَ عَنْهُ مُلَاحَظَةُ الثَّوَابِ. وَقَدْ تَقْوَى مُلَاحَظَةُ الْعِوَضِ حَتَّى يَسْتَلِذَّ بِالْبَلَاءِ وَيَرَاهُ نِعْمَةً، ‘এটা নিশ্চিত যে, যখন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির নেকি লাভের উদ্দেশ্য সুদৃঢ় হয়, তখন সেই নেকির প্রত্যাশায় তার হৃদয় আরামবোধ করে এবং প্রশান্তি লাভ করে। কিন্তু নেকি লাভের প্রত্যাশা যদি না থাকে, তাহলে বিপদটি তার কাছে খুবই কঠিন মনে হয়। তাই পুরস্কার লাভের উদ্দেশ্য মজবুত হলে বালা-মুসিবতে সে আনন্দ উপভোগ করে এবং এটাকে (আল্লাহর) নেয়ামত মনে করে।’ (ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ২/৪৮৩)।

সুফিয়ান সাওরী (রহ.) বলেন, لَيْسَ بِفَقِيهٍ مَنْ لَمْ يَعُدَّ الْبَلَاءَ نِعْمَةً، وَالرَّخَاءَ مُصِيبَةً، ‘সেই ব্যক্তি প্রকৃত জ্ঞানী নয়, যে বিপদকে নেয়ামত মনে করে না এবং প্রাচুর্য-ঐশ্বর্যকে মুসিবত হিসেবে গণ্য করে না।’ (আবূ নুআইম আছ্ফাহানী, হিলয়াতুল আউলিয়া ৭/৫৫)।

সুতরাং মুমিন বান্দার কর্তব্য হলো জীবনে সব ভালো কাজ ও দুঃখ-কষ্টকে সওয়াব লাভ ও আল্লাহর রেজামন্দি হাসিলের মাধ্যম মনে করা। তাহলে তিনি সব কাজে প্রশান্তি লাভ করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ!

ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন,أَيُّهَا النَّاسُ! احْتَسِبُوا أعمالَكم؛ فَإِنَّ مَنِ احْتَسَبَ عمَله كُتب لَهُ أجْرُ عَمَله وَأَجْرُ حِسْبَتِهِ؛ ‘হে মানব সকল! তোমারা তোমাদের আমলে সওয়াব লাভের প্রত্যাশা কর। যে ব্যক্তি তার আমলে নেকী লাভের আশা করে, তাহলে সে আমল সম্পাদনের নেকি পাবে এবং প্রত্যাশা করারও নেকি পাবে’। (ইবনুল আসির, আন-নিহায়া ফী গারীবিল হাদিস ১/৩৮২)।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –