• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

গর্ভপাত করা কখন জায়েজ, কখন নাজায়েজ

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২২  

চল্লিশ দিনের পূর্বে গর্ভপাত করার মাসয়ালায় ফিকাহবিদ আলেমগণ মতভেদ করেছেন।

একদল হানাফী, শাফেয়ি ও কিছু হাম্বলী আলেমদের মতে, এটি জায়েজ। ইবনুল হুমাম ‘ফতাহুল কাদির’ গ্রন্থে (৩/৪০১) বলেন: “গর্ভধারণের পর ভ্রূণ ফেলে দেয়া কি বৈধ? কোনরূপ আকৃতি তৈরী হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বৈধ। এরপর তারা (আলেমগণ) একাধিক স্থানে বলেছেন: এটি ১২০ দিনের পূর্বে হয় না। এ কথার দাবী হচ্ছে যে, তারা আকৃতির দ্বারা রূহ ফুঁকে দেওয়াকে বুঝিয়েছেন; নচেৎ এ কথা ভুল। কেননা চাক্ষুষ দেখার মাধ্যমে সাব্যস্ত যে আকৃতি এ সময়সীমার পূর্বেই গঠিত হয়।”

রামলী ‘নিহায়াতুল মুহতাজ’ গ্রন্থে (৮/৪৪৩) বলেন: “অগ্রগণ্য হলো রূহ ফুঁকে দেওয়ার পর নিঃশর্ত তা হারাম। আর রূহ ফুঁকে দেয়ার পূর্বে জায়েয।”

ক্বালয়ুবী এর পাশ্বটীকাতে (৪/১৬০) বলা হয়েছে: “রূহ ফুঁকে দেয়ার পূর্বে তা (ভ্রুণ) ফেলে দেওয়া জায়েয; এমনকি ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে হলেও। তবে গাজালীর দ্বিমত রয়েছে।”

আল-মিরদাওয়ী ‘আল-ইনসাফ’ গ্রন্থে (১/৩৮৬) বলেন: “ভ্রুণ ফেলে দেওয়ার জন্য ওষুধ সেবন করা জায়েজ। ইবনুল জাওযি ‘আহকামুন নিসা’ গ্রন্থে বলেন: ‘তা হারাম’। আল-ফুরু গ্রন্থে বলা হয়েছে: আল-ফুনুন গ্রন্থে ইবনে আকীলের বক্তব্যের প্রত্যক্ষ মর্ম হচ্ছে: রূহ ফুঁকে দেওয়ার পূর্বে ফেলে দেয়া জায়েজ। তিনি বলেন: এ কথার পক্ষে যুক্তি রয়েছে।”

মালেকি মাযহাবের মতে, সাধারণভাবে নাজায়েজ। এটি কিছু হানাফি, শাফেয়ি ও হাম্বলী আলেমেরও বক্তব্য। দিরদীদ ‘আল-শারহুল কাবীর’ গ্রন্থে (২/২৬৬) বলেন: “গর্ভায়শের অভ্যন্তরে স্থান করে নেয়া বীর্যকে বের করা নাজায়েয; এমনকি সেটা চল্লিশ দিনের পূর্বে হলেও। আর যদি রূহ ফুঁকে দেওয়ার পরে হয় তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।”

ফিকাহবিদদের মধ্যে কেউ কেউ বৈধ হওয়ার জন্য ওজরগ্রস্ত হওয়ার শর্তযুক্ত করেছেন।

উচ্চ উলামা পরিষদের সিদ্ধান্তে এসেছে-

* যথাযথ শরয়ি কারণ ও সীমাবদ্ধ গণ্ডির মধ্যে ব্যতীত গর্ভস্থিত ভ্রুণ যে ধাপের হোক না কেন সেটা নষ্ট করা নাজায়েজ।

* যদি গর্ভস্থিত ভ্রুণটি প্রথম ধাপে থাকে; প্রথম ধাপ হলো চল্লিশ দিনের সময়সীমায়; এবং গর্ভপাত করার মধ্যে কোন শরয়ি কল্যাণ থাকে কিংবা কোন ক্ষতি রোধকরণ থাকে তাহলে গর্ভপাত করা জায়েয হবে। পক্ষান্তরে এই সময়সীমার মধ্যে গর্ভপাতের কারণ যদি হয় সন্তানদের প্রতিপালনের কষ্ট কিংবা তাদের জীবিকা ও শিক্ষার ব্যয়ভার বহনের ভয় কিংবা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশংকা কিংবা স্বামী-স্ত্রীর যে কয়জন সন্তান আছে তারাই যথেষ্ট এগুলো; তাহলে গর্ভপাত করা নাজায়েজ।” [আল-ফাতাওয়া আল-জামিআ’ (৩/১০৫৫) থেকে সমাপ্ত]

স্থায়ী কমিটির ফতোয়াতে (২১/৪৫০) এসেছে: “নারীর গর্ভস্থিত ভ্রুণকে কোন শরয়ি কারণ ব্যতীত গর্ভপাত করা নাজায়েয। যদি গর্ভস্থিত বস্তুটি বীর্যের অবস্থায় থাকে; আর তা থাকে চল্লিশদিন বা তার চেয়ে কম সময়ের মধ্যে এবং সেটি ফেলে দেয়ার মধ্যে কোন শরয়ি কল্যাণ থাকে কিংবা মায়ের উপর থেকে সম্ভাব্য কোন ক্ষতি রোধ করার বিষয় থাকে; তাহলে এমতাবস্থায় সেটি ফেলে দেয়া জায়েয আছে। তবে সন্তানদের প্রতিপালনের কষ্ট, তাদের ব্যয়ভার বহন বা প্রতিপালনের অক্ষমতা কিংবা যে কয়জন সন্তান আছে তারাই যথেষ্ট ইত্যাদি অ-শরয়ি কারণগুলো এর মধ্যে পড়বে না।

আর যদি ভ্রুণের বয়স চল্লিশ দিন পার হয়ে যায় তাহলে সেটি নষ্ট করা হারাম। কেননা চল্লিশ দিন পর সেটি রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়; যা মানবাকৃতির সূচনা। তাই এ স্তরে পৌঁছার পর বিশ্বস্ত কোন  ডাক্তার ‘গর্ভধারণ চলমান রাখা মায়ের জীবনের জন্য বিপদজনক এবং চলমান রাখলে মায়ের জীবন বিপন্ন হতে পারে’ মর্মে সিদ্ধান্ত দেয়া ব্যতীত সেটি নষ্ট করা জায়েয নয়।”

তবে যে অভিমতটি অগ্রগণ্য তা হলো চল্লিশ দিনের পূর্বে গর্ভপাত করা প্রয়োজন হলে সেটা জায়েয। প্রয়োজনের মধ্যে প্রশ্নে যা উল্লেখ করা হয়েছে সেটা পড়বে। যেহেতু অল্প সময়ের মধ্যে তিনজন বাচ্চাকে গর্ভধারণ করা মায়ের জন্য কষ্টকর ও স্বাস্থ্যহানিকর। এর ফলে গর্ভস্থিত সন্তানের উপরও এর প্রভাব পড়তে পারে। এত ছোট বয়সের তিনটি সন্তানের সেবা করার সাধ্য মায়ের নাও থাকতে পারে।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –