• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

মানব সমাজে দাওয়াতের প্রভাব

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২১  

দাওয়াত অর্থ আহ্বান করা। মানব সৃষ্টির পর বিভিন্ন সময় নবী-রাসুলরা মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিয়েছেন। সর্বশেষ মুহাম্মদ (সা.) ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। তাই মানুষকে আল্লাহর নির্দেশনা পালনের আহ্বান জানানো মুসলিম উম্মাহর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সর্বোত্তম জাতি যাদের মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তোমরা সৎকাজের আদেশ দেবে, অসৎকাজ থেকে বারণ করবে এবং মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

আল্লাহর দিকে আহ্বান করা সবার কর্তব্য : আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করা সব মুসলিমের দায়িত্ব। একক ও সামগ্রিকভাবে সাধ্যমতো তা পালন করা ওয়াজিব। কারণ মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন এক একদল হোক, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে, সৎকাজের আদেশ দেবে, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে, তারাই সফলকাম।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০৪)

উল্লিখিত আয়াতে ‘তোমাদের মধ্যে’ বলতে তাফসিরবিদ ইমাম তাবারি (রহ.) ও ইমাম কুরতুবি (রহ.)-এর মতে একটি নির্দিষ্ট অংশকে বোঝানো উদ্দেশ্য। অনেকের মতে আয়াত দ্বারা সামগ্রিকভাবে সবাইকে উদ্দেশ্য। উভয় কথার সমন্বয় করে ওলামায়ে কেরাম বলেন, মুসলিম উম্মাহর একটি অংশ দাওয়াত, সৎকাজের আদেশ ও অসংকাজে বারণের দায়িত্ব পালন করা ফরজে কিফায়া। আর ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাধ্যমতো ইসলামের দাওয়াত, সৎকাজের আদেশ ও অসংকাজে নিষেধের দায়িত্ব পালন করা ফরজে আইন। (মাজমুউল ফতোয়া : ১/১০৩)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিনদের সবার একসঙ্গে অভিযানে বের হওয়া উচিত না, তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ বের হয় না কেন, যাতে তারা দ্বিন সম্পর্কে গভীর জ্ঞানার্জন করতে পারে, নিজ জাতির কাছে ফিরে যেন সতর্ক করতে পারে।’ (সুরা তাওবাহ, আয়াত : ১২২)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার করুন, আপনি তা না করলে তো আপনি তাঁর মহান বার্তা প্রচার করলেন না, আল্লাহ আপনাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৬৭)। এসব আয়াত দ্বারা সব যুগে সব স্থানে দাওয়াতের অপরিহার্যতা প্রমাণিত হয়।

রাসুলদের দায়িত্ব : আল্লাহর দিকে ডাকা যুগে যুগে নবী-রাসুল ও তাদের অনুসারীরা পালন করেছেন। তাই স্বতন্ত্রভাবে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা নবীদের দায়িত্ব পালনের সমতুল্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে নবী, আপনি বলুন, এটাই আমার পথ আমি মানুষকে সজ্ঞানে আল্লাহর পথে আহ্বান করি, আমি ও আমার অনুসরণকারীরাও।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ১০৮)

সর্বোত্তম কথা : দাওয়াতের অন্যতম শ্রেষ্ঠত্ব হলো, তা আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম কথা বলে বিবেচিত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনি আপনার রবের দিকে আহ্বান করুন, প্রজ্ঞা, উত্তম আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে এবং তাদের সঙ্গে সর্বোত্তম উপায়ে বিতর্ক করুন, আপনার প্রতিপালক যারা তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, কারা সৎপথ ছেড়ে বিপথগামী হয়েছে (সুরা নাহল, আয়াত : ১২৫)

দাওয়াতে সাড়া দিয়ে কেউ আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণ করলে সেই আমলের সমমান সওয়াব আছে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কল্যাণের পথ দেখায়, সে ওই ব্যক্তির মতো সওয়াব পাবে যে তা করে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৯০)

সমাজে দাওয়াতের প্রভাব অবশ্যই হবে। যুগে যুগে আগত নবী-রাসুলরা মানুষকে দাওয়াত দিয়েই সমাজে বড় ভূমিকা রেখেছেন। তাই দায়ির মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ গুণ ও বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরি। ড. আবদুল করিম জাইদান (রহ.) দাওয়াতের ক্ষেত্রে চারটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। ১. দায়ি : যিনি দাওয়াত দেবেন। ২. মাদউ : যাকে দাওয়াত দেবে। ৩. মাউদু : যে বিষয়ে দাওয়াত দেবে। ৪. ওসায়েল ও আসালিব : যে মাধ্যমে ও পদ্ধতি অনুসরণ করে দাওয়াত দেবে।

মানুষের কাছে ইসলামের শাশ্বত জীবনব্যবস্থার সৌন্দর্য তুলে ধরে দাওয়াত দেওয়া জরুরি। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে মনোনীত জীবনব্যবস্থা ইসলাম।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯)

আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে পাঠিয়েছি। এবং আল্লাহর অনুমতিতে তাঁর দিকে আহ্বানকারী ও উজ্জ্বল  প্রদীপ হিসেবে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৪৫-৪৬)

সুন্দর আচরণ ও অনুগ্রহ : মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে সম্বোধন করে বলেন, ‘মহান আল্লাহর অনুগ্রহে আপনি তাদের জন্য বিনম্র হয়েছেন, আপনি যদি রূঢ় ও কঠোর মনের অধিকারী হতেন তাহলে তারা আপনার পাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং আপনি তাদের ক্ষমা করুন, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং সব কাজে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

সব কাজে পরামর্শ : মহান আল্লাহ মহানবী (সা.)-কে সঙ্গীদের সঙ্গে পরামর্শ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা তাদের প্রতিপালকের আহ্বানে সাড়া দেয়, সালাত কায়েম করে, নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করে এবং তাদের আমি যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা শুরা, আয়াত : ৩৮)

আল্লাহর ওপর আস্থা ও দৃঢ় মনোবল : মহান আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে যেকোনো কাজ সম্পাদনে সুদৃঢ় ইচ্ছা লালন করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনি যখন দৃঢ় ইচ্ছা করবেন, তখন আপনি আল্লাহর ওপর আস্থা রাখুন।’ ( সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৩)

মহান আল্লাহ মানুষকে নিজের বুদ্ধি-বিবেক ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। দাওয়াতের উপায়-উপকরণ নির্ধারণে তার ব্যবহার জরুরি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি এ কিতাব আপনার ওপর অবতরণ করেছি, যেন মানুষ তাঁর নিদর্শন অনুধাবন করে এবং বিজ্ঞ ব্যক্তিরা যেন উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা সাদ, আয়াত : ২৯)

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –