• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

ইসলামী চিকিৎসাবিজ্ঞান: মহামারি প্রতিরোধে মনস্তত্ত্বে জোর

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০২১  

মানুষ সব সময় আতঙ্কে থাকে অন্যের রোগ তাকে ধরে বসবে অথবা নিজেই রোগাক্রান্ত হবে। মানুষের এই ভয়ের কারণ তার শারীরিক দুর্বলতা ও মহামারির অতীত ইতিহাস। কেননা সামান্য ঠাণ্ডা থেকে প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ এবং ইতিহাসের নানা পর্যায়ে মহামারিতে কোটি কোটি মানুষ মারা গেছে। যদিও সৌভাগ্যবশত বহু মানুষ বেঁচেও গেছে। নিকট-অতীতে চতুর্দশ শতকের বুবনিক প্লেগ এবং ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব মানব ইতিহাসে দুটি কালো অধ্যায় রচনা করে গেছে। মুসলিম সভ্যতার সূচনাকাল থেকে এ পর্যন্ত একাধিকবার প্লেগসহ অন্য সংক্রক ব্যাধির মুখোমুখি হয়েছে মুসলিমরা। এখন জানার বিষয় হলো, মুসলিম বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা কিভাবে তা মোকাবেলা করেছিল এবং তা থেকে আধুনিক যুগের বিজ্ঞানীদের কোনো কিছু নেওয়ার আছে কি না?

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার

প্রাথমিক যুগের মুসলিম চিকিৎসকরা মহামারি মোকাবেলায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতেন এবং তারা সব বয়সী মানুষের ভেতর সচেতনতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতেন। চিকিৎসকরা চিকিৎসার অংশ হিসেবে খেলাধুলা, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি, স্বাস্থ্যকর পানাহার ও পর্যাপ্ত ঘুমের পরামর্শ দিতেন। তাঁরা দুশ্চিন্তা, রাগ ও উদ্বেগের পরিবর্তে মানুষকে ইতিবাচক মনোভাব পোষণে উদ্বুদ্ধ করতেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন, শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের গভীর সম্পর্ক আছে। এ বিষয়গুলো আল-রাজি তাঁর ‘কিতাবু মানাফিউল আগদিয়াতে ওয়া-দাফয়ি মুদাররাতি’ গ্রন্থে এবং ইবনে সিনা ‘কানুন অব মেডিসিন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে তাঁরা নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করেছিলেন।

সামাজিক দূরত্ব : চতুর্দশ শতকের ধর্মতাত্ত্বিক ও চিকিৎসক ইবনুল কায়্যিম ঝাওজি (রহ.) মহানবী (সা.)-এর একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন—‘তোমরা কুষ্ঠরোগী থেকে সেভাবে পালিয়ে যাও, যেভাবে সিংহ দেখে পালাও।’ আর সচেতন ব্যক্তি মাত্রই জানে যে কুষ্ঠের মতো সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের প্রধান উপায় হলো অসুস্থ ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা। ইবনে কায়্যিম তাঁর ‘আত-তিব্ব আন-নাবাবি’ গ্রন্থে প্রমাণ করেছেন যে কিভাবে সংক্রামক ব্যাধিগুলো মানুষের সংস্পর্শ ও শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

কোয়ারেন্টিন বা সঙ্গরোধ : মুসলিম সভ্যতার ইতিহাসে উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিক ‘বিমারিস্তান নামে’ প্রথম হাসপাতাল স্থাপন করেন। ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে দামেস্কে স্থাপিত এই হাসপাতালে কুষ্ঠ রোগীদের পৃথক ওয়ার্ড ছিল। যেখানে নিময়িত ও সাধারণ যাতায়াত নিষিদ্ধ ছিল। বিভাগটি এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছিল যেন অন্য রোগীদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে।

চলাচলে বিধি-নিষেধ : মহামারির ব্যাপারে হাদিসের নির্দেশনা হলো—কোনো ব্যক্তি মহামারি আক্রান্ত কোনো অঞ্চলে প্রবেশ করবে না এবং সেখান থেকে কেউ বেরও হবে না। চতুর্দশ শতকের স্প্যানিশ চিকিৎসা বিজ্ঞানী আবু জাফর আমাদ ইবনে আলী ইবনে খাতিমা উল্লিখিত নির্দেশনা অনুসরণ করেন আলমিরা শহরে বুবনিক প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার পর যখন তিনি সেখানে অবস্থান করছিলেন। তিনি তাঁর অবরুদ্ধ সময়ের পূর্ণ ব্যবহার করেছিলেন রোগীর যত্ন, রোগের স্বরূপ সন্ধান ও তা ছড়িয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানে। তিনি তাঁর গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন তাঁর ‘তাহসিলু গারদুল কাসিদ ফি তাফসিলিল মারাদুল ওয়াফিদ’। ইবনে খাতিমার অনুসন্ধানের মধ্যে ছিল পরিমিত খাবার গ্রহণ, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, শরীরে রোগের প্রভাব ও তা সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়া।

মোটকথা, মুসলিম চিকিৎসক মহামারি প্রতিরোধে সর্বোত্তম পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বর্তমানে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও স্থানীয় সরকারগুলো যেসব পরামর্শ দিচ্ছে তা মুসলিম চিকিৎসকদের পরামর্শের কাছাকাছি। সুতরাং অতীতে প্রয়োগকৃত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করেও বর্তমান সময়ের ভয়াবহতা থেকে আত্মরক্ষায় উপকৃত হওয়া সম্ভব।

কোরআনই অনুপ্রেরণা

মুসলিম বিজ্ঞানীরা মহামারি ছাড়াও চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় অনন্য অবদান রাখেন। তাদের এই জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার প্রধান অনুপ্রেরণা ছিল আল কোরআন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে এক ব্যক্তির জীবনরক্ষা করল, সে যেন গোটা মানবজাতিকে রক্ষা করল।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩২)

এ ছাড়া মৌলিকভাবে কোরআন হলো সব জ্ঞানের আধার। আল্লাহ বলেন, ‘কিতাবে কোনো কিছু আমি বাদ দিইনি।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ৩৮)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আত্মসমর্পণকারীদের জন্য প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ, পথনির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদস্বরূপ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৮৯)

অমুসলিম জ্ঞানী ও পণ্ডিতরা কোরআনকে বিজ্ঞানের উৎস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। যেমন জার্মান পণ্ডিত Dr. Karl Optiz Zuvi Die Medizin Im Koran  গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, কোরআনের ১১৪টি সুরার মধ্যে ৯৭টি সুরায় ৩৫৫ আয়াতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিষয়ে উল্লেখ আছে। প্রখ্যাত ফরাসি বিজ্ঞানী Hartwig Hirschfield Zuvi New Researches in to the Composition and Exegesis of the Quran গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, We must not be surprised to find the Quran regarded as the fountain head of all sciences. (কোরআন সব বিজ্ঞানের প্রধান উৎস)।

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –