• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

জবাব দিয়ে সওয়াবের অংশীদার হওয়ার উপায়

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১  

জবাবদান ইসলামের অন্যতম সংস্কৃতি। জবাবদানের মাধ্যমে একে অন্যের পুণ্যের অংশীদার হওয়া যায়, যদিও প্রথম ব্যক্তির পুণ্যের মধ্যে কোনো ঘাটতি হয় না। এর পরস্পরের মধ্যে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তৈরি হয়। ইসলামের কয়েকটি জবাবদান পদ্ধতি আলোচনা করা হলো—  

১. সালামের জবাব : সালাম মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে অভিবাদন জানানো এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, নিরাপত্তা ও ভালোবাসা প্রকাশের অতুলনীয় মাধ্যম। সেই সঙ্গে ইসলামী সমাজের অন্যতম প্রতীক এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সালামের জবাব দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং নেকি অর্জনের মাধ্যম। কাজেই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সালাম আদান-প্রদান করতে হয়। সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বললে জবাবে ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’ বলতে হয়। সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’ বললে জবাবেও অনুরূপ ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’ বলতে হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের যখন অভিবাদন করা হয় তখন তোমরাও তার চেয়ে উত্তম প্রত্যাভিবাদন করবে অথবা তার অনুরূপ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৮৬)

২. আজানের জবাব : আজান ইসলামের অন্যতম নিদর্শন। ইসলামে মুয়াজ্জিনের মর্যাদা ও ফজিলত ঈর্ষণীয়। সবার মুয়াজ্জিন হওয়ার সুযোগ না থাকলেও মুয়াজ্জিনের মর্যাদা লাভের সুযোগ আছে। আজানের জবাব দিয়ে সেই মর্যাদা লাভ করা যায়। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, মুয়াজ্জিনদের মর্যাদা আমাদের চেয়ে বেশি হয়ে যাবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমিও তা বলো, মুয়াজ্জিন যা বলে। তারপর আজান শেষ হলে আল্লাহর কাছে চাও, যা চাইবে দেওয়া হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২৪)

৩. হাঁচির জবাব : কোনো ব্যক্তির হাঁচি এলে সে মহান আল্লাহর শুকরিয়া করে শব্দ করে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলবে। জবাবে অন্যরা বলবে, ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’। তার জবাবে হাঁচিদাতা বলবে, ‘ইয়াহদিকুমুল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বালাকুম।’ এভাবে হাঁচির জবাব দিলে হাঁচিদাতার বিব্রতকর অবস্থা দূর হয় এবং সবার স্বস্তি ফিরে আসে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন হাঁচি দেয় তখন সে যেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে। তার সঙ্গী যেন জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলে। যখন তার সঙ্গী ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে, তখন হাঁচিদাতা যেন জবাবে ‘ইয়াহদিকুমুল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বালাকুম’ বলে। (বুখারি, হাদিস : ৬২২৪)

৪. কৃতজ্ঞতাপূর্ণ আচরণের জবাব : একে অন্যের সহযোগিতা নিয়ে সমাজে বসবাস করতে হয়। অন্যের সহযোগিতায় উপকৃত হওয়ার পর সহযোগীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, উপহার প্রদান এবং দোয়া করা উচিত। এর মাধ্যমে নেকির পাল্লা ভারী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরস্পরের মধ্যে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠবে। যা ইসলামী সমাজব্যবস্থার অন্যতম আবেদন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ যদি তোমাদের সঙ্গে কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তাহলে তোমরাও তার সঙ্গে কৃতজ্ঞতার আচরণ করো। (তাকে কিছু হাদিয়া দাও) যদি কিছু দিতে না পারো অন্তত তার জন্য দোয়া  করো, যাতে সে বুঝতে পারে যে তুমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। (বুখারি, হাদিস : ২১৬)

এ ক্ষেত্রে কমপক্ষে ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ বলার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

৫. প্রশ্নের জবাব : জানার জন্য কেউ প্রশ্ন করলে জবাব দিয়ে জ্ঞান অর্জনে সহযোগিতার নেকি অর্জন করা যায়। না জেনে জবাব দেওয়া এবং জেনে-শুনে গোপন করা দুটোই অপরাধ। যারা ইলম (জ্ঞান) গোপন করে বা বিকৃত করে, তাদের জন্য আছে কঠিন হুঁশিয়ারি ও ফেরেশতাদের অভিশাপ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আমার নাজিলকৃত উজ্জ্বল নিদর্শনাবলি ও হিদায়াত গোপন করে—যদিও আমি কিতাবে তা মানুষের জন্য সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছি, তাদের প্রতি আল্লাহ লানত বর্ষণ করেন এবং অন্য লানতকারীরাও (ফেরেশতারা) লানত করে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৯)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয় যা সে জানে, অতঃপর সে তা গোপন করে, তাকে কিয়ামতের দিন অগুনের লাগাম পরানো হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৪৯; আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৬০)

৬. দোয়ার জবাব : একজনের দোয়ায় অন্যজন আমিন বলে দোয়ায় অংশগ্রহণ করা যায়। একাধিক মানুষ একসঙ্গে এভাবে দোয়া করলে মহান আল্লাহ তা কবুল করেন। হাবিব ইবনে মাসলামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিছুসংখ্যক লোক একত্র হয়ে এমনভাবে দোয়া করে যে একজন দোয়া করে অন্যরা আমিন আমিন বলতে থাকে, আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন।’ (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস : ৫৪৭৮)

এভাবে আরো অনেক ইবাদতের জবাবদান পদ্ধতি আছে। সেগুলো পালনের মাধ্যমে দ্বিনি কাজে একে-অন্যের সম্পূরক ও সহযোগী হওয়া যায়। এর মাধ্যমে ইসলামী সংস্কৃতির পরিধির সম্প্রসারণে এগিয়ে আসা সম্ভব। 

– লালমনিরহাট বার্তা নিউজ ডেস্ক –